শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:০৭ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক::
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছেন, ‘আল্লাহ সবকিছু জানেন। আমি এর সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’
বুধবার রায়ের পর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাবরের প্রতিক্রিয়া ও রায়ের সময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরে ওই নিউজের খবরে বলা হয়, রায় দেয়ার সময় দুবার বিদ্যুৎ–সংযোগ চলে যাওয়ায় বিচারককে বাধা পেতে হয়। রায়কে কেন্দ্র করে আদালতের বাইরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার ছিল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, তারেক রহমান ও অন্যদের আরও কঠোর সাজা চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
এদিকে রায় ঘোষণার পর বেশ বিমর্ষ দেখায় বাবরকে। এ সময় তিনি তার আইনজীবী এস এম শাহজাহান, নজরুল ইসলাম, সানাউল্লাহ মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এ সময় তাকে আপিলের কথা বলা হয়।
এরপর এজলাসে উপস্থিত সাংবাদিকরা বাবরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহই এসবের বিচার করবে। আমার কাছ থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম বের করতে না পারায় আমাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে।
রায়ের পর কাশিমপুর কারাগারে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আদালতের সামনের রাস্তায় আগের মাইক্রোবাসেই তোলা হয় বাবরকে। আগের মতোই মাইক্রোবাসের ডানপাশে চালকের পেছনে বসেন তিনি।
নিরাপত্তা প্রস্তুতি ঠিক করার জন্য আসামিদের গাড়িবহর সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থাকলে বাবর ডান হাত দিয়ে কয়েকবার গাড়ির জানালা খোলেন।
এ সময় গোয়েন্দা পুলিশের এক সহকারী কমিশনার জানালা খোলার কারণ জানতে চাইলে বাবর গলায় হাত দিয়ে বলেন, “আমার কাশি।”
সে সময় সাংবাদিকরা গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের থামিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ জানালা খোলা রাখার পর বাবর নিজেই তা বন্ধ করে দেন।
বুধবার ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন।
এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
এছাড়া এ মামলার আসামি ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে (অভিযোগপত্র) বলা হয়েছে, তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষপর্যায়ের ইন্ধনে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশসহ (হুজি) তিনটি জঙ্গি সংগঠন ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ইতিহাসের ভয়াবহতম নৃশংস ও বর্বরোচিত ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
এতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়। হামলায় আহত হন কয়েকশ’ নেতাকর্মী। আর অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এ মামলায় সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে রাষ্ট্রপক্ষ। মোট ৪৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
আর আসামি পক্ষে ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলায় ১৪৪টি আলামত ও ৫৫টি বস্তু প্রদর্শন করা হয়েছে। গত বছরের ৩০ মে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। আর গত বছরের ১২ জুন মামলায় ৩১ আসামির আত্মপক্ষ শুনানি শেষ হয়।
Leave a Reply