সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষে মতবিনিময় সভা শান্তিগঞ্জে গরুর ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের সংঘর্ষ, আহত ৪০ মহান ভাষা দিবস পালনে শান্তিগঞ্জে প্রস্তুতি সভা জগন্নাথপুরে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৩০, গুলিবিদ্ধ ১ সুনামগঞ্জে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেলা বন্ধ না হলে, লংমার্চ টু মেলা! জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের যুব বিভাগের কমিটি গঠন জগন্নাথপুরের সাংবাদিকদের সাথে এমপি প্রার্থী এডভোকেট ইয়াসিন খানের মতবিনিময় ডুংরিয়া ঘরুয়া ইয়াংস্টার ৩য় ফুটবল টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন  জগন্নাথপুরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্হ দের মধ্যে আর্থিক অনুদান বিতরন জগন্নাথপুরে ইউএনও এর সাথে কমিউনিটি নেতা মুজাক্কির আলীর বৈটক

হৃদয়ের সাজঘর মসজিদ থাকে ফাঁকা

হৃদয়ের সাজঘর মসজিদ থাকে ফাঁকা

জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক::
সাজিয়ে গুজিয়ে তোরা দে সজনী মোরে সাজিয়ে গুজিয়ে দে মোরে। পৃথিবীটা মূলত সাজানো সংসার। আল্লাহ আসমান সাজিয়েছেন চাঁদ-সুরুজ আর তারকা দিয়ে। আর জমিন সাজিয়েছেন সবুজ বন-বনাদি দিয়ে।
যা দেখে কবি প্রবর গেয়ে উঠেছেন ‘আকাশে সুনীল চাঁদোয়া আঁকা জমিন সবুজ গিলাফে ঢাকা ফুলের গন্ধে সুবাস মাখা সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ্’। সাজুগুজুর মূল্যায়ন সর্বত্র। সাজতে হলে রং লাগাতে হয়।
আল্লাহ বলেন, সিবগাতাল্লাহি আল্লাহর রঙে রঙিন হও। এ রং নবুয়তি যুগে নবী রাসূলের কাছে বেলায়েতি যুগে অলি-আউলিয়াদের কাছে পাওয়া যায়।
তাই কবিরা গেয়ে ওঠেন ‘আজ রং হেরি মা রং হেরি মেরে খাজা পিয়াকে ঘর রঙ হেরি আজ রং দেখি কী রূপ রং দেখি আমার প্রিয় মুর্শিদের ঘরে রঙ দেখি’। খায়রুল ক্কুরুনের পর মসজিদগুলো যখন নানা কারণে শৃঙ্খলিত হয়ে পড়ে তখন অলি-আউলিয়ারা নানা প্রচেষ্টায় ইবাদতখানা খানকা দরবার তৈরি করে মানুষকে খোদার রঙে সাজানোর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
অথচ এ কাজটি ছিল মসজিদভিত্তিক। আপনি খেয়াল করে দেখবেন অলি-আউলিয়াদের খানকাগুলো কিন্তু সারা দিনই খোলা থাকে এবং মানুষ তা থেকে ২৪ ঘণ্টা ফায়দা পেয়ে আসছে।
আল্লাহ মানুষকে সম্মান এবং সুন্দর গঠনে সৃষ্টি করেছেন। কালামে পাকের ভাষায় ‘ওয়া লাক্বাদ কাররমনা বানী আদাম। কিংবা লাক্বাদ খালাকনাল ইনসানা ফী আহ্সানি তাক্বভিম। নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সুন্দর অবয়বে বানিয়েছি’। মানুষ নিজেকে সাজানোর জন্য সাজঘরে যায়, যাকে আমরা বিউটি পার্লার বলি।
ইদানীং খেয়াল করে দেখবেন শহরের অলিগলিসহ গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে সাজঘর বা বিউটি পার্লার। এসব বিউটি পারলার মানুষের বাহ্যিক অবয়ব সাজিয়ে থাকে। কিন্তু আসল সাজ তো হল হৃদয়ের সাজ। হৃদয় সাজানোর সাজঘর হল মসজিদ।
দেহ সাজানোর ঘর যেমন অয়েল ডেকোরেটেড, তেমনি হৃদয় সাজানোর সাজঘর মসজিদও টাইলস, শ্বেতপাথর, এয়ারকন্ডিশনে সাজানো। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেহের সাজঘর বিউটি পার্লারগুলো যেখানে প্রায় ১২ ঘণ্টা খোলা থাকে কিন্তু হৃদয় সাজানোর সাজঘর মসজিদগুলো নামাজের সময় ছাড়া তালা ঝুলানো থাকে।
যে মসজিদ খোলা থাকার কথা ২৪ ঘণ্টা সেটা প্রতিদিন গড়ে ৩ ঘণ্টার বেশি খোলা থাকে না। ফলে যারা খোদার রঙে নিজেকে নিরিবিলি রাঙাতে চায় তারা থাকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
আমরা যদি ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকাই দেখা যাবে নবীজির মসজিদ ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকত। একদল সাহাবির নামাজ শেষ হলেও সারা দিন সেখানে থেকে মানবতার মহান শিক্ষক নবীজির বাণী মোবারক শোনার অপেক্ষায় থাকতেন। যেন সেই বাণী শুনে হৃদয় মন খোদার রঙে রাঙাতে পারেন। কারণ খোদার রঙে রাঙানোর মহান শিক্ষক হলেন নবী রাসূলরা।
যে খোদার রঙে নিজেকে সাজাতে পারে সৃষ্টির উৎসগুলো তার খাদেম হয়ে যায়। হজরত খাজা গরিব নওয়াজ আজমেরির ভক্তদের জন্য যখন পৃথ্বীরাজ আনাসাগরের পানি নিষিদ্ধ করেন তখন তিনি এক লোটা পানি চাইলে তা দিতে পৃথ্বীরাজ রাজি হলেন। এক লোটায় সারা আনাসাগরের পানি ভরে ফেলেন আজমেরি।
মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক হওয়ার কারণে সোনারগাঁ পরগণার হাদি ও মুবাল্লিগ মাওলানা লালপুরী শাহ্র পানসি নৌকায় পাক বাহিনী বারবার চেষ্টা করেও গুলি করে ডুবাতে পারেনি। গুলি নৌকার এদিক-সেদিক চলে যেত।
কারামাতুল আউলিয়া হাক্কুন অলিদের কারামত সত্য। আর এ কারামতগুলো তখনই হাসিল হয়, যখন নিজেকে আল্লাহর রঙে রাঙাতে পারে বান্দা।
আগুন, পানি, মাটি, বাতাস এ চার বস্তু দিয়েই মাখলুক তৈরি। যারা আল্লাহর রঙে নিজেকে রাঙাতে পারেন এ চার বস্তু তাদের কথা শোনে। দৃষ্টান্ত হিসেবে আমিরুল মুমেনীন হজরত উমর ফারুকের (রা.) জীবনের ঘটনা উল্লেখ করা যায়।
মদিনার বাজারে আগুন লাগলে তিনি একমুষ্টি মাটি ছিটিয়ে আগুনকে নিভে যাওয়ার নির্দেশ দিলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন নিভে যায়। মদিনায় একবার ভূমিকম্প হলে তিনি মাটিকে থেমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন থেমে যায় ভূমিকম্প।
মসজিদে নববিতে খুতবা দান অবস্থায় ইয়া সারিয়া আল জাবাল বলে দূরবর্তী সেনাপতিকে নির্দেশ দিয়ে মুসলিম বাহিনীর বিজয় নিশ্চিত করেছিলেন। মিসর বিজিত হলে নীলনদের পানিতে চিঠি দিয়ে জাহেলি প্রথা বন্ধ করেছিলেন।
নবুয়তি যুগ শেষে এ দায়িত্ব এসেছে আলেম-উলামা-পীর-মাশায়েখদের ওপর। তাদের কাজের জমিন হল মসজিদ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এ মসজিদের উর্বর জমিন ছেড়ে তারা ভিন্ন ভিন্ন জমিনে চাষবাস করছেন বলে সাধারণ মানুষ নিজেকে আল্লাহর রঙে রাঙাতে পারছে না।
আসুন যার যার দায়িত্বে থাকা তালা ঝুলানো মসজিদগুলোকে সজীব করে সমাজের মুসল্লিদের খোদার রঙে রাঙাতে সহযোগিতা করি। আমাদের সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠুক মদিনার মসজিদে নববির আলোয় আলোকিত সমাজ ব্যবস্থার মতো।
আশার কথা, বর্তমান সরকার প্রতিটি উপজেলায় এমন একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের মহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এ মসজিদগুলো থেকে জীবন্ত মসজিদের আলোক বর্তিকা ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com