শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক ::
আজ মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বীরের আত্মত্যাগ ও দুই লাখের বেশি মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে উদিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। আজ সোমবার ৪৯ বছরে পা দিচ্ছে সেই বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে উপহাস করা দেশটি আজ বিশ্বমঞ্চে এক বিস্ময়রূপে হাজির হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এখন রোল মডেল, অন্য অনেক দেশের জন্য অনুপ্রেরণা। তবে এর বিপরীতে আছে হতাশাও। স্বাধীনতার সুফল এখনো পুরোপুরিভাবে পায়নি এ দেশের মানুষ। যে আকাক্সক্ষা নিয়ে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন মহান বীরেরা, তাদের অনেক চাওয়াই এখনো অধরা। তবে অতীতের যা কিছু কালো সব ভেদ করে আলোর দিকে বাংলাদেশের যাত্রা আরও বেগবান হবে- এমনটাই আশা বিশিষ্টজনদের। তারা বলছেন, এবারের বিজয় দিবস উদযাপিত হোক সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রেখে দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে গণতন্ত্র ও সরকারবিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি। সাম্যভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটেনি। মানবাধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম, সেই স্বাধীনতার সুফল যেন দেশের সবাই ভোগ করতে পারে সে অনুযায়ী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর দেশ উল্টোপথে যাত্রা শুরু করে। স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে চলে যায় দেশ। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পুনরায় স্বাধীনতার পক্ষের দল নেতৃত্বে আসে। এ কারণে স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে মানুষের দেরি হয়েছে। বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবাতাস বইছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তার হতাশা ও আশার কথা প্রকাশ করেছেন একটি বাক্যে। তিনি বলেন, ‘রোদন ভরা এ বসন্ত’ তথাপি আজ ‘বসন্ত’। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জন হয়েছিল জনগণের সে বিজয়কে আজ কার্যত ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ এক দেশে দুই সমাজ ও দুই অর্থনীতি ব্যবস্থা চালু হয়েছে। পুরো দেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের সাম্যভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার বিপরীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশে আধা নৈরাজ্যিক ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এ অবস্থার পরিবর্তনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণকে নতুন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।
শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ তার আশার কথা তুলে ধরে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচার হয়েছে, হচ্ছে। ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ হয়েছে। একজন শহীদের সন্তান হিসেবে এগুলো আশার খবর বলে আমি মনে করি। এবারের বিজয় দিবসে আমার প্রত্যাশা থাকবে যেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাও প্রকাশ হয়।
বিজয় দিবসের কর্মসূচি
বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এর পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে আমন্ত্রিত সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হয়েছে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোয় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। আজ সরকারি ছুটির দিন।
এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চত্বরে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Leave a Reply