বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৯ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: পিয়াজের দাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমে যাবে, এমন ঘোষণা দেয়ার পরও রাজধানীর পাইকারি বাজারে কেজিতে আরো এক-দুই টাকা বেড়েছে। মঙ্গলবার পিয়াজের দাম নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও পাইকারদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ ঘোষণা দেন বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর পাইকারি বাজারে গতকাল প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর আমদানি করা পিয়াজ ৬০-৬৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে, বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে পিয়াজের কেজি ৭৫ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৮৫২ ডলার টন দরে কোনও পিয়াজ দেশে আমদানি হয়নি। অথচ কেজিতে ২৫ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে। হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম লাগামহীন বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়েছে ভোক্তারা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত পিয়াজের রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ায় দেশের বাজারে প্রতিদিনই বাড়ছে পিয়াজের দাম। চার দিনের ব্যবধানে ঢাকাসহ সারা দেশে বাজারভেদে প্রতি কেজি পিয়াজের দাম ২৫-৩০ টাকা বেড়েছে।
সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বিপুল পরিমাণে পিয়াজের উৎপাদন হয়েছে। আমদানিও যথেষ্ট। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানিতে এলসি মার্জিন, সুদের হার হ্রাস, বন্দরে দ্রুত খালাস এবং নির্বিঘ্নে পরিবহন নিশ্চিত করতে সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কাজে আসছে না।
আর ভোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ভারতে দাম বাড়ানোর খবরেই অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের বাজার। তিন দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজির দাম বেড়েছে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত। খুচরাবাজারে মানভেদে দেশি পিয়াজ ৭০-৭৫ টাকা, দেশি কিং ৬০-৬৫ এবং ভারতীয় পিয়াজ প্রতিকেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ গত বৃহস্পতিবারও বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা এবং ৪৫-৫০ টাকায়।
রাজধানীর খুচরা বাজারে দেখা গেছে, গতকাল দেশি পিয়াজ বিক্রি হয় ৭৮-৮০ টাকা কেজি দরে, যা দুইদিন আগেও ছিল ৭০ টাকা। এর আগে বৃহস্পতিবার বিক্রি হয় ৫০-৫৫ টাকায়। সোমবার ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হয় ৭০ টাকা কেজি দরে। এ পিয়াজ শনিবার বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। বৃহস্পতিবার ছিল ৪৫-৫০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভারত নতুন করে রপ্তানি মূল্য বেঁধে দেয়ার পর পিয়াজ আমদানি হয়নি। তার পরও বাজারে হু হু করে পিয়াজের দাম বাড়ছে।
কাওরান বাজারে আসা একজন ক্রেতা আনসি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেশি দামের পিয়াজ তো এখনো বাংলাদেশে আসেনি। তাহলে ৭০ টাকা কেজি পিয়াজ কীভাবে হলো? এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অবস্থার সুযোগ নিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বছর দেশে ২৬ লাখ টন পিয়াজের উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি হয় ৭ লাখ টন। অথচ আমাদের চাহিদা ২৬ লাখ টন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পিয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারতের বিকল্প দেশ থেকে আমদানির চিন্তা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার, মিসর, তুরস্কসহ বিভিন্ন বাজার যাচাই করে নিত্যপণ্যটি আমদানি করা হতে পারে। তাই পিয়াজ আমদানির জন্য এলসি মার্জিন ও সুদের হার হ্রাসের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়েছে।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী সাব্বির মাহমুদ বলেন, এ বছর দেশি পিয়াজের সরবরাহ কম। এর মধ্যে ভারত ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করে দিল। এতে দেশের বাজারে ইতিমধ্যে প্রভাব পড়েছে। বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারে দেশি পিয়াজের কেজি ৪৩-৪৫ টাকা ছিল, যা গতকাল ৭০ টাকায় গিয়ে ওঠে। একইভাবে ৪২-৪৩ টাকা কেজির ভারতীয় পিয়াজ উঠেছে ৬০ টাকায়।
বাজারে পিয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কারণে এক বিবৃতিতে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানায়, ভারতে দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে দাম বাড়ানো হচ্ছে। অথচ ভারতে দাম কমলে ভোক্তারা তার সুফল পায় না। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অযুহাত- ভারতে পিয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্যে বন্যা হওয়ায় দাম বেড়েছে।
তবে খুচরা বিক্রেতারা বলছে- আমদানি কম হওয়ার সুযোগ নিয়ে হিলি বন্দরের পাইকাররা কারসাজি করে পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় যখনই কোনো পণ্যের সংকট তৈরি হয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ীদের উপর দোষ চাপান আর খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের উপর দোষ চাপিয়ে জনগণের নাভিশ্বাস তৈরি করেন।
কাওরান বাজারের পিয়াজ ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে যে দরে কিনি, তার চেয়ে কেজিতে ৫/৭ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করি। কারণ বস্তা খুলে বাছাই করার পর কিছু নষ্ট পিয়াজ বাদ দিতে হয়। সেই ঘাটতি মিটিয়ে মুনাফা করা অনেক কঠিন।
এদিকে বেনাপোল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পিয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রভাব যশোরের সর্বত্র পড়েছে। বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, রোববার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৩০ টন পিয়াজ ভারত থেকে আমদানি হয়। সোমবার আমদানি হয় ১৭০ টন পিয়াজ। ভারতের নাসিক, হরিয়ানা ও কালনা থেকে বেশিরভাগ পিয়াজ আমদানি হয় এই বন্দর দিয়ে।
আমদানিকারক আবু হাসান জানান, তিনি সর্বশেষ ২৫০ ডলার দরে ভারত থেকে পিয়াজ এনেছেন। ভারত যে ন্যূনতম দাম ঠিক করে দিয়েছে, তাতে খুচরা বাজারে ভারতীয় পিয়াজের দাম কেজিতে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তথ্যমতে, এর আগে ২০১৭ সালের শেষ দিকেও একবার ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছিল। তখন ঢাকার খুচরা বাজারে ভারতীয় পিয়াজ ৭৫ টাকা কেজিতে পাওয়া গেলেও দেশি পিয়াজের দাম ১০০ টাকা পেরিয়ে গিয়েছিল।
এদিকে, ভোক্তা আইন লঙ্ঘনের দায়ে পিয়াজ বিক্রেতাসহ ৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। পিয়াজের ঊর্ধ্বমুখী দাম ও কারসাজি ঠেকাতে মঙ্গলবার কাওরানবাজারে পিয়াজের আড়তে অভিযান চালানো হয়। কর্মকর্তারা জানান, ভারত থেকে আমদানি করা পিয়াজের মূল্য বাড়ছে। এ খবরে দেশের বাজারে হু হু করে বাড়ছে পিয়াজের মূল্য। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে পিয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। অনৈতিকভাবে যেন কেউ পিয়াজের দাম না বাড়তে পারে সেই জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে পাইকারি বাজারে এ অভিযান করছে ভোক্তা অধিদফতর।
Leave a Reply