বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন
সানোয়ার হাসান সুনু :: বাংলাদেশের শস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরগুলোতে এখনও পানি না নামায় বীজতলা তৈরির কাজ বিলম্ব হচ্ছে। এবার ধীর গতিতে পানি নামায় কৃষকরা উপযুক্ত সময়ে বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দুশচিন্তার যেন শেষ নেই। বিগত বছর বাংলা সনের কার্তিক ও অগ্রাহয়ন মাসের মধ্যেই শেষ হয় সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো মৌসুমের বীজতলা তৈরির কাজ। অগ্রহায়ণের শুরুর দিকেই বীজ বপন শেষ করে চারা আবাদের প্রায় প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন কৃষকরা। কিন্তু এবার ঘটেছে তাঁর বিপরীত। হাওরের পানি দেরিতে নামায় বীজতলা তৈরির সময় পিছিয়ে গেছে। পানি থাকায় এখনও উপজেলার বিভিন্ন হাওরে বীজ বপন করতে পারেননি কৃষকরা। দেরিতে বীজ বপন করা ও চাষাবাদের সময় পিছিয়ে যাওয়ায় শঙ্কায় পড়েছেন উপজেলার কৃষকরা। বোরো মৌসুমের শেষের দিকে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকায় এই দুঃশ্চিন্তা আরো ঘনিভূত হচ্ছে। হাওরের পানি দেরিতে নামা ও বীজতলা তৈরি পিছিয়ে যাওয়ার বিষটি প্রাকৃতিক জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণ হিসেবে দেখছে জগন্নাথপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষি বিভাগ বলছে অন্যান্য বছরের চেয়ে বোরো আবাদ ২০ থেকে ২৫ দিন সময় পিছিয়ে যাওয়ায় আগাম বন্যা হলে ঝুঁকির মুখে থাকবে উপজেলার বোরো ফসল। এ অবস্থায় জমিতে আগাম জাতের ধান রোপণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা । উপজেলার বৃহত্ত হাওর নলূয়া হাওর ও মই হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, হাওরের পানি ধীরগতিতে নামায় অগ্রহায়ণ মাসের শেষ সময়েও বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না স্থানীয় হাওরের কৃষকরা। বীজতলা থেকে পানি নামা ও বীজতলা তৈরি করতে আরো সপ্তাহ-দশদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এভাবে হাওরে পানি ধীরগতি নামতে থাকলে চাষাবাদের প্রস্তুতি ও চারারোপণে অন্যান্য বছরের চেয়ে ১ মাস সময় পিছিয়ে যেতে পারে বলে জানান হাওরপারের একাধিক কৃষক। তাই এবারের বোরো মৌসুমে আবাদের শুরু থেকেই ফসল নিয়ে দুশচিন্তায় পড়তে হয়েছে তাদের। নলুয়া হাওর পাড়ের হিজলা গ্রামের কৃষক দুদু মিয়া জানান, প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষের দিকে বীজ বাইন (বপন) করা শেষ করে দেই আমরা। অথচ এবার হাওরে পানি না নামায় অগ্রহায়ণের ১8 তারিখেও বীজতলা তৈরি করতে পারিনি। বীজতলা তৈরিতে আরো সপ্তাহ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি। মই হাওরের কৃষক সামসুল হক জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের বোরো মৌসুম প্রায় ১মাস সময় পিছিয়ে গেছে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগাম বন্যা দেখা দিলে ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শওকত ওসমান মজুমদার জানান, প্রাকৃতিক জলবায়ূর পরিবর্তনের কারনে এবার হাওরের পানি ধীর গতিতে নামছে। ফলে বীজতলা তৈরির সময় প্রায় ২০ /২৫দিন পিছিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বোরো মৌসুমের শেষের দিকে আগাম বন্যা দেখা দিলে বোরো আবাদ ঝুঁকির মধ্যে থাকছে। কাজেই ফসল সুরক্ষায় জমিতে আগাম ধান রোপণে কৃষকদের আমরা পরামর্শ দিয়েছি।
Leave a Reply