বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ অপরাহ্ন
সানোয়ার হাসান সুনু :: জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-সিলেট আকাঁবাকাঁ বেহাল সড়ক এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। একদিকে সড়কটি আকাঁবাকাঁ ও সরু অন্যদিকে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে বেহাল দশায় পরিণত হয়ে সড়কটিতে প্রায়ই দিনেই দুর্ঘটনা ঘটছে। ইতিমধ্যে একাধিক দুর্ঘটনায় শতাধিক লোক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সড়কটিতে প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি দিনেই শতশত লোক জীবনের ঝুকি নিয়ে চলাচল করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে আকাঁবাকাঁ ও সরু সড়কটি সোজা ও প্রসস্থকরণ জরুরী হয়ে পড়েছে। অন্যতায় আরো দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। সস্প্রতি এ সড়কের পীরের বাজার, ভবের বাজার সহ কয়েকটি স্থানে যাত্রীবাহী মিনিবাস দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বহু লোক আহত হন। বিগত দিনে উপজেলার আটঘর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী হাজী মন্তাজ খান(৬৫) এ সড়কের কেউনবাড়ি আটঘর বাকাঁ মোড়ে মিনিবাস দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। এ সড়কের মিয়ার বাজার মোড়ে ইকড়ছই গ্রামের শাহেদুর রহমান (২৫) দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান। এধরনের প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া এ সড়কের সবগুলো ব্রীজই অত্ত্যান্ত সরু ও দীর্ঘ দিনের পুরাতন থাকায় দুইটি গাড়ি আসা যাওয়া করতে যানজট লেগে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। পুরাতন ব্রীজ দিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো পারাপার করছে। এ ব্রীজগুলো ভেঙে নতুন প্রসস্থ ব্রীজ করা জরুরী ।
এদিকে এ বেহাল সড়ক পুর্ণনিমার্ণের দাবিতে বাস মালিক শ্রমিক সহ এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে একাধিকবার যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে ধর্মঘট ডেকেছেন। দীর্ঘ দিন ধরে ভাঙা চোরা বেহাল এ সড়কটি নিয়ে দৈনিক যুগান্তর সহ গণমাধ্যমগুলোতে বহু রিপোর্ট প্রকাশিত হলে সরকার এ সড়কের জগন্নাথপুর ও বিশ্বনাথ অংশের ২৬ কিলোমিটার সড়ক পুনঃনির্মাণের জন্য ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। বিশ্বনাথ অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়ক পুনঃনির্মাণের দায়িত্ব পায় ঢাকার টিকাদারী প্রতিষ্ঠান শাওন এন্টারপ্রাইজ এবং জগন্নাথপুর অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকার টিকাদারী প্রতিষ্ঠান সালেহ হামিম (জেপি)। কিন্তু ঠিকাদার কাজ পেলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু না হওয়ায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
এব্যাপারে স্থানীয় এমপি পরিকল্পনা মন্ত্রী আলহাজ্ব এম এ মান্নান এর সাথে শনিবার বিকেলে আলাপ হলে তিনি বলেন, কাজটি যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হয় এবং আকাঁবাকাঁ ও সরু সড়কটি সোজা ও প্রসস্থকরণ করা হয় এব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, এ সড়কের জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ অংশের ২৬ কিলোমিটার সড়ক পুনঃ নির্মাণে ৪৬কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাস্তার কাজ যাতে টেকসই ও গুণগত মান বজায় রেখে করা হয় এজন্য মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার যদি কোনো অনিয়ম বা দুর্নিতি করা হয় তবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ারের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, এখনও সড়কের নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে দেওয়া হবে। তিনি বলেন আকাঁবাকাঁ ও সরু এ সড়কটি সোজা ও প্রসস্থকরণের জন্য আমরা উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা প্রকৌশলী হারুনুর রশীদের সাথে আলাপ হলে তিনি জানান, ঢাকার টিকাদারী প্রতিষ্ঠান শাওন এন্টারপ্রাইজকে গত সপ্তাহে বিশ^নাথ অংশের ২৩ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যায়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের পুনঃ নিমার্ণ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। তিনি দুর্ঘটনা এড়াতে আকাঁবাকাঁ সড়কটি সোজা ও প্রসস্থ করণের জন্য উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করা হবে বলে জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৭ইং সনে জুনে জগন্নাথপুর হইতে কেউন বাড়ি পর্যন্ত পোনে ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে জগন্নাথপুর থেকে কেউন বাড়ি পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কে ২নং ইটের সুরকি ও নিম্নমানের বিটুমিন ও অত্যন্ত নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সংস্কার কাজ করা হলে ৪ মাসের মাথায় সড়কটির পিচ ঢালাই উঠে সড়কটি ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। তখন থেকে সড়কটির বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। এ নিয়ে ২০১৭ইং সনের ১৪ই নভেম্বর দৈনিক যুগান্তরে সচিত্র রির্পোট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ঠিকাদার নুরু কন্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আওয়ামীলীগ নেতা নাদের আহমদ তৎকালীন প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে পার পেয়ে যান। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এ সড়ক সহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কে সরকার মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ দিলেও দায়সারা কাজ করে অধিকাংশ টাকাই লুটপাট হয়ে যায়। এলাকাবাসী উক্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সহ উপজেলার সকল জরার্জীন সড়কগুলো অবিলম্বে পুণঃনির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন। সেই সাথে সরকারি টাকা যাতে লুটপাট না হয় এব্যাপারে উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি এবং কাজ যেন প্রাক্কলন অনুযায়ী উন্নতমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সঠিকভাবে করা হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই হয় এব্যাপারে উধত্বন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
Leave a Reply