শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪০ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: জেলার অন্যতম হাওর জগন্নাথপুরের সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওর এখনও অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। প্রায় দুইমাস অতিবাহিত হলেও এখনও কয়েকটি বাঁধে মাটি পড়েনি। ফলে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে।
ইতিমধ্যে কাজে গাফিলতির কারণে ২০ পিআইসি সভাপতিকে কারণদর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম।
শনিবার নলুয়া হাওর ঘুরে দেখা যায়, নলুয়ার হাওরের পোল্ডার- ১১ ও ১২ নম্বর প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি। দুইটি প্রকল্পেই নলুয়া হাওরের ফসলরক্ষা বাধঁ খুবই গুরুত্বপূর্ন। এই দুই বাঁধের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কামারখালি নদী। নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধে প্রচ- চাপ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও ৭, ৮ ও ৯ প্রকল্পের কাজ বন্ধ পাওয়া যায়। সরেজমিনকালে কোন লোকও দেখা যায়নি। ৮ ও ৯ নং প্রকল্পে এখনও মাটির কাজ শেষ হয়নি। বাধেঁর অনেক জায়গায় মাটি পড়েনি। এরমধ্যে হাওরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হচ্ছে ৮ নং প্রকল্পের হালেয়া সংলগ্ন এলাকা। এই স্থানে একটি গভীর স্থান রয়েছে। এখানে সঠিকভাবে কাজ না হলেও পুরো হাওরের ফসল ঝুকির মুখে পড়লে বলে স্থানীয় কৃষক জাহেদ আহমদ জানিয়েছেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালে ওই স্থানের বাঁধ ভেঙে নলুয়ার হাওরের ফসলডুবির ঘটনা ঘটেছিল। ১০ নং প্রকল্পের অধিকাংশ স্থানে মাটি ভরাটের কাজ এখনও বাকি রয়েছে। তবে কিছু এলাকায় মাটির কাজ চলমান দেখা গেছে। এই প্রকল্পের সভাপতি চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের ই্উপি সদস্য সুজাত মিয়া জানান, বড় সমস্যা মাটির। বাঁধ এলাকায় সরকারি মাটি নেই। রয়েছে মালিকানা জমি। কেউ মাটি দিতে চাননা। অনেক চেষ্ঠা করেও এখনও নিজের পরিচিতদের জমি থেকে মাটি তুলে বাঁধের কাজ করছি।
৮ নং প্রকল্পের সভাপতি কয়েছ মিয়া বলেন, ৫০ শতাংশ মাটির কাজ শেষ হয়েছে। কিছু স্থানে মাটি ফেলা হয়নি মাটির গাড়ির যাতায়ানের জন্য। বাঁশ ও মাটির বস্তা এখনও দেয়া হয়নি। এজেন্য ঝুর্কিপূর্ণ স্থানে কাজ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষকে বলেছি।
২৬নং প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জানান, বাধেঁর ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন কমপ্রেকশনের কাজ চলছে।
১১ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি আব্দুস শহিদ জানান, হাওরে পানি থাকায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে এক দুইদিনের মধ্যে কাজ শুরুকরা হবে।
১২ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি মফিজ মিয়া জানান, হাওরে পানি থাকায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি জানান শুক্রবার থেকে বাধেঁর কাজ শুরু করেছেন।
জগন্নাথপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড দপ্তর সূত্র জানায়, এবার ৪৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের মাধ্যমে ৪২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ হয়েছে। এই কাজের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ছয় কোটি টাকা। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারী বাঁধের কাজ শেষ করার নির্ধারিত সময়।
জগন্নাথপুর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলী হাসান গাজী বলেন, ৪৫টি প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি জানান, ইতিমধ্যে হাওরের বাধেঁ প্রায় ৪০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির আহবায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রায় দুই মাস পেরিয়ে যাচ্ছে এখনও হাওরের অনেক প্রকল্পের মাটি পড়েনি। যে কারনে নির্ধারিত সময়ের কাজ শেষ করা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। সরকারি নীতিমালা অনুয়ায়ী হাওরের বাঁধের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য তিনি কতৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম এ প্রতিবেদকে বলেন, হাওরের ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের কাজে কোনো ধরনের গাফিলতি আর অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। তিনি জানান, কাজে গাফিলতি ও সঠিকভাবে কাজ না হওয়ায় ২০জন পিআইসি সভাপতিকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। হাওরের বেরিবাধেঁর ব্যাপারে আমরা সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছি এবং আমি নিজে প্রতিদিন হাওরের বেরিবাধঁগুলো পরিদর্শন করে পিআইসিগুলোকে দিকনির্দেশনা প্রদান করছি। এছাড়া জেলা প্রশাসক সহ উর্ধতন কতৃপক্ষ ও হাওরের বেরিবাধঁ পরিদর্শন এবং গুরুত্বের সাথে মনিটরিং করছেন। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বেরিবাধেঁর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
Leave a Reply