শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: দেশ বাপী বাড়ছে করোনাভাইরাসের রোগীর সংখ্যা। সিলেট বিভাগে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ জনে। এর মধ্যে মারা গেছে ২ জন। করোনায় আক্রান্ত এই ৮ জনের মধ্যে ৪ জনের আক্রান্তের উৎস জানা গেছে। কিন্তু বাকি ৪ জন কিভাবে আক্রান্ত হয়েছেন তা এখনো রয়েছে অজানা। এতে সিলেটের মানুষ রয়েছেন অজানা আতঙ্কে। সচেতন মহল মনে করছেন, এই উৎস খুঁজে বের করা না গেলে সিলেটে দিনে দিনে বাড়বেই করোনা।
সিলেটে গত ৫ এপ্রিল ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তিনিই সিলেট বিভাগের মধ্যে সর্ব প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি। গত বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ডা. মঈনের করোনা ধরা পড়ার পর তার পরিবার ও আশপাশের ১৬ জনের করোনা পরীক্ষা করা হলে কারো শরীরে পাওয়া যায়নি করোনার অস্তিত্ব। মারা যাওয়া এ চিকিৎসক কোন প্রবাসীর সংস্পর্শেও যাননি বলে তিনি জানিয়েছিলেন। কিংবা সিলেটের বাহিরেও কোথাও তার যাওয়া আসা হয়নি। তাহলে তিনি কিভাবে করোনায় আক্রান্ত হলেন এই প্রশ্ন এখনো সিলেটের মানুষের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
মৌলভীবাজারের রাজনগরের এক মুদি দোকানী জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে মারা যান গত ৪ এপ্রিল। ওই দিন নিজ বাড়ীতে সকালে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর সংশ্লিষ্টরা তার নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেন। পর দিন ৫ এপ্রিল ঢাকার আইইডিসিআর থেকে জানানো হয় তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন।
জানা গেছে, এই ব্যক্তিও কোন প্রবাসীর সংস্পর্শে যাননি। তিনি প্রতিদিন শুধু তার দোকানে যেতেন। মারা যাওয়া এই ব্যবসায়ী কিভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলেন স্বাস্থ্যবিভাগের কর্তব্যরতরা এখনো জানাতে পারেন নি। তিনিই মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি।
হবিগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির উৎস জানা গেছে সাথে সাথেই। গত ১০ এপ্রিল আক্রান্ত ব্যক্তি ট্রাকে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জের কিছু লোক নিয়ে এসেছিলেন। তিনি একজন ট্রাক চালক। হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জে মানুষ নামিয়ে দেয়ার পর ট্রাক নিয়ে তিনি ফিরছিলেন নারায়ণগঞ্জে। পথিমধ্যে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে নেয়া হয় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে। ১১ এপ্রিল তার শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে জানায় হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন। আক্রান্ত এই ট্রাক চালক নারায়ণগঞ্জে বসবাস করলেও তার বাড়ী রাঙ্গামাটি জেলায়। এরপরে হবিগঞ্জে আর কোন করোনা রোগী পাওয়া যায়নি।
গত রবিবার সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে এক নারীর শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আক্রান্ত এই নারী একজন গৃহিণী বলে জানা গেছে। তার স্বামীও বাড়ীতেই থাকেন বলে জানা গেছে। করোনায় আক্রান্ত নারী কিভাবে কিংবা কার দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে এক দিনের ব্যবধানে সুনামগঞ্জের আরেক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত সোমবার এই নারীর শরীরে মরণব্যাধি এ রোগের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। আক্রান্ত এই নারী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি বাচ্চা জন্ম দেন।
জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল (বুধবার) সন্ধ্যায় ওই নারীর প্রসব ব্যথা ওঠার পর স্বজনরা ডেলিভারির জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য তার ‘ও’ নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে রক্ত জোগাড় করতে না পারায় চিকিৎসাকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। সেখানে রাতেই অপারেশনের মাধ্যমে একটি সন্তান প্রসব করেন তিনি। পরবর্তীতে তার সর্দি-জ্বর ও শ্বাস কষ্ট দেখা দিলে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করলে ফলাফল পজেটিভ আসে গত রবিবার। আক্রান্ত এই নারীর স্বামী বলেন, আমি এলিট ফোর্স সিকিউরিটি গার্ড কোম্পানিতে চাকরি করতাম। নয় মাস আগে চাকরি চলে গেলে বাড়িতে এসে এখন কৃষিকাজ করি। এর পর থেকে আর ঢাকা কিংবা নারায়নগঞ্জে যাইনি।
তাহলে আক্রান্ত এই নারী বাড়ীতে না সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল না-কি সিলেট ওসমানী মেডিকেলে কারো দ্বারা আক্রান্ত হলেন এখনো বের করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও সিলেট ওসমানী হাসপাতালে এই নারীর সংস্পর্শে আসা সকলের করোনা পরীক্ষা করলেও কারো শরীরে ধরা পরেনি করোনাভাইরাস। এমন কি তার পরিবারের সবাইকে পরীক্ষা করে পাওয়া যায়নি করোনা।
শুধু এই নারী নয়, সুনামগঞ্জে আক্রান্ত দুই নারীর শরীরে কিভাবে করোনায় আক্রান্ত হলেন তা এখনো রয়ে গেল অজানা। সচেতন মহল মনে করছেন, করোনা আক্রান্তের উৎস খুঁজে বের করা না গেলে অবস্থা হতে পারে আরো করুণ।
এদিকে গত ১৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে পালিয়ে আসা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীকে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। তার বাড়ি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পুরানগাঁওয়ে। তিনি ঢাকার পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির একজন কর্মচারী বলে জানা গেছে।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে গত বুধবার করোনা পরীক্ষায় ২ জনের শরীরে পাওয়া যায় কোভিড-১৯ এর অস্তিত্ব। গতকাল বৃহস্পতিবার এ খবর প্রকাশ হলে সারা সিলেট জুড়ে শুরু হয় বেশ আতঙ্ক। আক্রান্ত ২ জনের মধ্যে একজনের বাড়ী সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। তিনি সম্প্রতি ঢাকা থেকে এসেছেন।
অপরজনের বাড়ী সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায়। তিনি একজন পরিবহণ শ্রমিক। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তার যাতায়াত ছিল সবসময়।
সিলেট বিভাগে আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে ৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে। কিন্তু সিলেটের মারা যাওয়া চিকিৎসক, মৌলভীবাজারের মারা যাওয়া ব্যবসায়ী কিভাবে করোনায় আক্রান্ত হলেন তা কেউ বলতে পারছে না। এছাড়া সুনামগঞ্জের দুই নারীও কিভাবে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলেন জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তব্যরতরা।
এই চার জনের করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজে বের করা না গেলে সিলেটে দিনে দিনে করোনার বিস্তার লাভ করবে বানের পানির মত। সচেতন মহল মনে করছেন, এই উৎস খুঁজে বের করা এখনই প্রয়োজন। না হলে করোনা বোমায় পরিণত হতে পারে সিলেট বিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় অফিস বলছে, সিলেটে এখন করোনার স্টেজ নাম্বার ৪ চলছে। যেটি করোনার সর্বশেষ স্টেজ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, আমরা এখন সিলেটে করোনার স্টেজ ৪ নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, যখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন থেকে করোনা রোগী বেড়ে যায় তখন স্টেজ ৪ বলা হয়। এ পরিস্থিতিতে কে কার দ্বারা আক্রান্ত হন তা খুঁজে বের করা যায় না।
তিনি সতর্কতার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, সামনের দিনগুলো আরো ভয়াবহ হতে পারে। সুতরাং এখনই যদি মানুষ আরো সচেতন না হয় তাহলে দিন দিন খারাপের দিকেই যাবে সিলেট।
Leave a Reply