শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ অপরাহ্ন
সামিউল কবিরঃ বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের হাওরাঞ্চল সুনামগঞ্জে দেখা দিয়েছে ধান কাটার শ্রমিক সংকট। এরই মধ্যে শ্রমিক সংকট কাটাতে অসহায় কৃষকদের পাশে এসে তাদের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দিতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সেচ্ছাসেবীরা ধান কাটায় অংশ নিতে দেখা গেছে। আর তাই দক্ষিণ সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে করোনা ভাইরাসের মধ্যেও সোনার ফসল সংগ্রহে কৃষকদের হোড়ায় বসতি শুরু করেছেন।
শ্রমিক সংকট থাকার পরেও অতিরিক্ত টাকা দিয়ে হলেও ইতিমধ্যেই পুরোদমে শুরু হয়েছে ধান কাটা। আর এই ধান সংগ্রহ ও তদারকি করার জন্য হোড়ায় বসতি শুরু করেছেন কৃষকরা। সরকারি নির্দেশনা থাকায় কিছু কিছু হাওরে এখন কাটা প্রায় শেষের দিকে। কৃষকদের ধান দ্রুত ঘরে তুলার জন্য দেয়া হয়েছে হারভেস্টার মেশিন৷ এ থেকে লাভবান হচ্ছেন অনেক কৃষক। এই সোনার ফসল ধান ঘরে তুলার জন্যই কৃষকের এত আপ্রান চেষ্টা, ঘাম ঝরা কষ্ট।
২ মে (শনিবার) দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সাংহাই হাওর ও দেখার হাওরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধান ঘরে তোলার জন্য হাওরে শতাধিক ছোট ছোট অস্থায়ী ঘর রয়েছে। বিশাল হাওরের এক কোনায় অস্থায়ী ছনের ঘরে রাত্রিযাপন করার জন্যই হোড়া তৈরি করা হয়েছে। ঝড়বৃষ্টি, বজ্রপাতের মধ্যেই সারারাত এই অস্থায়ী ঘরেই রাত্রিযাপন করেন তারা। এছাড়া দিনের বেলাও প্রচন্ড রোদ, ঝড়বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের সময়ে এই অস্থায়ী ঘরেই আশ্রয় নিয়ে থাকেন কৃষক কৃষাণীরা। তাছাড়া এখানে কৃষি কাজের পাশাপাশি রান্নার জন্য চুলা বানিয়ে রান্না-বান্না করছেন তারা। মুলত থাকা খাওয়া বিশ্রাম সব কিছু হচ্ছে হাওরের হোড়া নামক ছোট এই ঘরটিতেই।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক আজাদ মিয়া জানান, তার কোন জমি নেই, তারপর বছরের খাবার জোগার করতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সাংহাই হাওরের এক খন্ড অনাবাদি উঁচু জমিতে ছন ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী ছোটঘর (স্থানীয় ভাষায় হোড়া) বানিয়েছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে সাংহাই হাওরেই রাত্রীযাপন করছেন। কৃষিকাজে স্বামী-স্ত্রী মিলে অন্যর জমি ধানকাটা, মাড়াই, ঝাড়া, শুকানোর কাজ করে ধান পেয়েছেন তিন মণ।
এদিকে ডুংরিয়া গ্রামের আরেক কৃষক সলিম মিয়া জানান, সাংহাই হাওরে তাদের দুই হাল (১২ কেদারে এক হাল) জমি আছে। বাড়ি থেকে জমির দুরত্ব অনেক বেশী হওয়ায় হাওরে ধান কেটে মাড়াই দিয়ে বস্তাবন্দি করে রাখছেন। পরে গাড়ি দিয়ে ধান বাড়ি নিয়ে যাবেন। তাই হাওরে অস্থায়ী হোড়া বানিয়ে বসতি স্থাপন করেন। রান্না,খাওয়া সব কিছুই এখন হাওরে।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন বলেন, এখন ধান তোলা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে অন্যরকম উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। উপজেলার বেশি সংখ্যক হাওরেই এখন মানুষের ভীড় চোখে পড়ার মতই। আশা করা যায় ঠিকঠাক মতই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
পরিকল্পনামন্ত্রী একান্ত রাজনৈতিক সচিব হাসনাত হোসেন বলেন, করোনার ভাইরাসের কারণে শ্রমিক সংকট থাকায় মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা আমাদের উপজেলার আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে অনেক অসহায় কৃষকদের ধান ঘরে তুলে দিয়েছি। আশা করা যায় কিছুদিনের মধ্যেই হাওরে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।
Leave a Reply