শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন
আজ ২০ রমজান। মাগফিরাতের দিনগুলোও শেষ হয়ে গেল। কাল থেকে মুমিনের দরজায় কড়া নাড়বে নাজাতের দশক। সংযমের এ মাসে আত্মপর্যালোচনা করা দরকার-আমরা কতটা রহমত আর মাগফিরাত কামাতে পারলাম। আল্লাহর প্রিয় হতে পারলাম কতটুকু, নবিজির (সা.) ভালোবাসা কতটা ধারণ করলাম। তাহলে মুক্তির দশক থেকে পরিপূর্ণভাবে উপকৃত হতে পারব।
আলেমদের মতে, রমজানের প্রত্যেক দশকেই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত থাকে। তবে পৃথক পৃথক তিন দশকে বিশেষ তিনটি বিষয়ের প্রাবল্য থাকে। তাই নাজাতের এ সময়েও আল্লাহর কাছে রহমত ও মাগফিরাত কামনায় কোনো বাধা নেই।
মোবারক এ মাসে কল্যাণ ও করুণার স্রোতধারা দ্রুত বয়ে চলছে। কৃচ্ছ , সংযম ও সহমর্মিতার সাধনার মাধ্যমে এ সময় যে যতটা সওয়াব কুড়াবে তার জীবন হয়ে উঠবে ততটা আনন্দময়। হাদিস শরিফে রাসূল (সা.) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। একটি হলো ইফতারের আনন্দ। অন্যটি হলো দিদারে ইলাহির আনন্দ।
সারাদিন না খেয়ে সন্ধ্যায় যখন রোজাদার এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানির শরবত পান করেন, তখন কী যে ভালো লাগে, তার তুলনা করা চলে না। রোজা রেখে ইফতারের অনুভূতি, কখনোই রোজা না রেখে খাওয়ার মতো হবে না। দ্বিতীয়ত, আমরা যদি সারাজীবন দেহ ও আত্মাকে পাপাচার থেকে উপোস রেখে আল্লাহপাকের কাছে হাজির হতে পারি, তাহলেই আমাদের আত্মার ইফতার হবে প্রভুকে দেখার সৌভাগ্য অর্জনের মাধ্যমে। আল্লাহর দিদারের মহাসৌভাগ্যে আমরা হব ধন্য। খোদাকে দেখার আনন্দে আমাদের দেহ-মন সজীব ও সতেজ হয়ে উঠবে। মনে রাখতে হবে, দেহের রোজা মাত্র কয়েক ঘণ্টার। আর তার আনন্দ হলো দুনিয়ার ইফতার। আর আত্মার রোজা একজীবনের। তার আনন্দও সৃষ্টিজগতের সেরা আনন্দ-দিদারে ইলাহির আনন্দ। এই এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা যেন এক জীবনের আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ নিতে পারি-এটাই সিয়াম সাধনার মূল সবক।
রোজা মুসলমানদের ইমান ও বিশ্বাসের উন্নয়ন, আদর্শ চরিত্র গঠন, নিয়মানুবর্তিতা, আমানতদারি, সহমর্মিতা, পরোপকার ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। পরিমার্জিত জীবনাচরণ ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয় সিয়াম। সঠিক সময়ে নিয়ম মেনে সেহরি গ্রহণ আবার সময়মতো ইফতার করা, যথাসময়ে তারাবিহ নামাজ আদায়সহ অন্য অনেক আমল পালনে সময়ানুবর্তী হওয়ার মহান শিক্ষা আমরা রমজান থেকে পাই। রমজানের শিক্ষা যদি আমরা বাকি জীবনে চর্চা করতে পারি, তাহলে আমরা পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবনেও সফল হতে পারব, এটা নিশ্চিত বলা যায়। আল্লাহতায়ালাই একমাত্র তাওফিক দাতা।
লেখক : প্রিন্সিপাল, দারুল উলুম ঢাকা, মিরপুর ১৩, ইসলামি চিন্তাবিদ
Leave a Reply