শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ অপরাহ্ন
সানোয়ার হাসান সুনু ::
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের রানীগঞ্জ সেতুর দুয়ার খুলছে । সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম এ সেতুটি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে।
আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্টানিক ভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন করবেন। আর এরই মধ্যদিয়ে সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে । এতে করে জগন্নাথপুর উপজেলাসহ জেলাবাসীর মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণ কাজ গত অক্টোবর মাসে শেষ হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর চলবে সকল ধরণের পরিবহন।
জানাযায়, সিলেট বিভাগের বৃহত্তম দৃষ্টি নন্দন রানীগঞ্জ সেতুটির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট। ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতু ও আড়াই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং টুল প্লাজার নির্মাণ কাজ যৌথ ভাবে শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ২৪ ও বাংলাদেশি নির্মান প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী ৭০২ মিটার দৈর্ঘ এবং ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থ সেতুটির নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ৬ বছরে এসে শেষ হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতুটির নির্মাণ কাজের প্রকল্প নকশা সংশোধন ও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির জন্য এই বিলম্ব হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবী রানীগঞ্জ সেতু চালু হলে সুনামগঞ্জ জেলাশহর থেকে রাজধানী ঢাকাতে পৌঁছাতে প্রায় ৫২ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। সময় বাঁচবে প্রায় ৩ ঘণ্টা। সেতুটি ঘিরে নতুন স্বপ্ন ও ইকোনোমিক জোনের সম্ভাবনা দেখছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি সেতুটি সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন জেলাবাসী।
রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ ছদরুল ইসলাম জানান, রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধা হবে। ঢাকার সঙ্গে কমবে দূরত্ব, বাঁচবে সময়। তাছাড়া সেতুটির আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। যা এলাকার বেকারত্ব নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
সেতুটির কাজের প্রোজেক্ট ম্যানেজার হারুন অর রশিদ বলেন, ইতোমধ্যে সেতুটির শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আজ সোমবার সেতুটি উদ্বোধনের পর থেকে জন জেবী নামক সিলেটের একটি কোম্পানি টোল আদায় করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৫ জুন তৎকালীন অর্থ প্রতিমন্ত্রী বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এ সেতুটি নির্মানের প্রস্তাব করলে
একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর প্রকল্প অনুমোদন করেন। পরে ওই বছরের জুন মাসে সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশ নেয় দেশী-বিদেশী তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অবশেষে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে যৌথভাবে কার্যাদেশ পায় চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ এবং এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এমবিইএল। পরে ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি বর্তমান সেতুও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিকল্পামন্ত্রী এম এ মান্নান যৌথ ভাবে এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণকাজের সময়সীমা ৩ বছর ও ১২৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ব্যয় এবং সময় বাড়ানো হয়।
রোববার পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন
এ সেতুটি চালু হলে সুনামগঞ্জ জেলা বাসী কম সময়ে রাজধানী শহরে যেতে পারবেন।
সেতুটির কাজ শেষ হওয়ায় জেলা বাসীর সাথে আমিও খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার ফলেই সিলেটের বৃহৎ এ সেতুটি নির্মান করা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে, আজ সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার ১০০টি সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রানীগঞ্জ সেতুসহ সুনামগঞ্জ জেলার ১৭টি সেতু রয়েছে। এদিন রানীগঞ্জ সেতু উদ্ধোধন উপলক্ষে রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পামন্ত্রী এম এ মান্নান। সেতুটির উদ্বোধন উপলক্ষে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
Leave a Reply