রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে উপজেলা শিক্ষা অফিসে চলছে ফ্রী ষ্টাইল দূর্নিতী। স্কুলের উন্নয়নে প্রতি বছর সরকার মোটা অংকের টাকা বরাদ্ধ দিলেও কাজ না করে লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে দূর্নিতী ও অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগে অফিস সহকারী আব্দুল কদ্দুস কে জগন্নাথপুর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মানিক দাসের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ।
উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে স্লিপ ফান্ডের টাকা লুটপাট চলছে। প্রতি বছর সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বরাদ্ধ দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। অনেক স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিলে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনী কাজ না করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সুষ্ঠু মনিটরিং ও জবাবদিহিতা না থাকায় প্রতি বছরই সরকারের বরাদ্দকৃত মোটা অংকের টাকা লুটপাট চলছে।
এছাড়া স্কুল গুলোতে বরাদ্দকৃত স্লিপের অর্থ ব্যবহারে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের আতাঁতে অনেক বিদ্যালয়ে এ খাতের অর্থের সদ্বব্যবহার হচ্ছে না বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। ২০২১- ২০২২ অর্থ বছরে উপজেলার ১৫৮ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র সংস্কার কাজের জন্য ৮০ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাস জানান, প্রতিটা স্কুলে ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে অধিকাংশ স্কুলে এখনও কোন কাজ করা হয়নি। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে উপজেলার ১৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র সংস্কার কাজের জন্য সরকার থেকে স্লিপের ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হলেও অনেক বিদ্যালয়ে এসব টাকা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসের দূর্নিতীবাজ কর্মকর্তা- কর্মচারী দের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করায় কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।
অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলার আউদত পূর্ব বুধরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,পূর্ব কাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,সাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ উপজেলার কয়েকটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত স্লিপের অর্থের কোন কাজ হয়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে পূর্ব বুধরাইল আউদত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দুন্নেছা জানান, স্লিপের বরাদ্দকৃত ৫০ হাজার টাকার মধ্যে শিক্ষা অফিস ভ্যাট ৫ হাজার টাকা রেখে দেয়। ৪৫ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা আছে। তিনি বলেন, স্কুলের নতুন কমিটি গঠনের পর এই টাকা দিয়ে কাজ করবো।
পূর্ব কাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদা আক্তার বলেন, আমরা স্লিপের ৫০ হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের চেয়ার,টেবিল ও ব্রেঞ্চের কাজ করেছি।
সাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজিম উদ্দীন জানান, সরকারের বরাদ্দকৃত ৫০ হাজার টাকার কাজ হয়েছে। কোন লুটপাট হয়নি।
বেরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুক্লা বৈদ্য বলেন, বরাদ্দকৃত ৫০ হাজার টাকা থেকে স্কুলের সামনে মাটি ভরাটের কাজ ও কিছু ব্রেঞ্চের কাজ করেছি। ১৭ হাজার টাকা আমাদের কাছে আছে। কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিক্তিতে বাকী টাকার কাজ করবো।
জগন্নাথপুর সচেতন নাগরিক ফোরামের আহবায়ক নূরুল হক বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে জগন্নাথপুরে প্রাথমিক স্কুলের সংস্কার কাজের জন্য প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্ধ আসলেও এখানে কাজের কাজ কিছুই হয় না। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, কতিপয় প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল কমিটির সভাপতির মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয় ফলে দৃশ্যমান কোন কাজ দেখা যায়নি।
এদিকে নারী শিক্ষক গন শিক্ষা অফিসে এসে যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। সম্প্রতি উপজেলার একটি প্রাইমারী স্কুলের নারী শিক্ষক অফিস সহকারী আব্দুল কদ্দুসের বিরুধ্বে যৌন হয়রানীর অভিযোগ তুলেন। তাকে ওই অফিস সহকারী কুপ্রস্তাব দেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে ইউএনও সাজেদুল ইসলাম জানান,লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে
উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন কে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুর রব সরকার ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাস। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাৎক্ষনিক ভাবে অফিস সহকারী আব্দুল কদ্দুস কে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাস তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিটি স্কুলে বরাদ্দকৃত টাকার কাজ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী হচ্ছে কিনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহন করবো। তিনি বলেন জনবল সংকটেরর কারনে স্কুল গুলোতে ঠিকমতো মনিটরিং করা যাচ্ছে না। আর অনৈতিক কাজের জন্য অফিস সহকারী আব্দুল কদ্দুস কে এখান থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
Leave a Reply