রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন
সানোয়ার হাসান সুনু ::
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ও গত এক সপ্তাহের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের নলজুর নদীর বিকল্প সেতু পানিতে তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার থেকে এসেতু দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অবর্ননীয় দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার কারণে সেতুটি বর্ষার শুরুতেই পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয়দের দাবী ছিল, সেতুটি উঁচু করে স্খাপনের জন্য কিন্তু সংশ্লিষ্টরা নিচু করেই সেতু স্থাপন করায় আষাঢ়ের ঢলেই পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এদিকে নলজুর নদীর ঝুঁকিপূর্ণ ডাক বাংলো সেতু মারাত্মক ঝুকির মুখে পড়ায় মঙ্গলবার থেকে এ ব্রীজ দিয়ে ও যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে এলাকার জনসাধারণ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
উপজেলা সদরের নলজুর নদীর খাদ্য গুদামের প্রধান সেতুটি নির্মাণের জন্য ভেঙে দেওয়ায় বিকল্প সেতু হিসেবে শহরের হেলিপ্যাড এলাকায় বেইলি সেতু স্থাপন করা হয়েছিল। এসেতু অচল হয়ে পড়ায় যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় ডাক বাংলোর সরো ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটিতে। এই দুইটি সেতু দিয়ে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামের লোকজনসহ পাশবর্তী উপজেলার বিভিন্ন স্থানের জনসাধারণ কে উপজেলা সদরে জরুরি নানা কাজে আসতে হয়।
জানা যায়,১৯৮৭ সালে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে গুদামের সামনে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি টেকসই থাকলেও একসঙ্গে বড়দুটি যান চলাচল করতে না পারায় যানজটের সৃষ্টি হয়। যে কারণে স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির মাধ্যমে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরাতন এ সেতু ভেঙে নতুন দৃষ্টি নন্দন আর্চ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গত ২৬শে মার্চ সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্হাপন করলে নতুন সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বিকল্প হিসেবে ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়।
এলাকার লোকজনের অভিযোগ, বিকল্প সেতুটি তৈরির সময় এলাকার লোকজন বর্ষায় এটা ডুবে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আরও উঁচু করার দাবি জানিয়েছিলেন তবে স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি বিষয়টি আমলে নেয়নি। দায়সারাভাবে পুরাতন স্টীলের পাটাতন দিয়ে জোড়া তালি দিয়ে কাজ করে কারচুপির আশ্রয় নেওয়া হয় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
অপর দিকে ১৯৮৮ সালে নলজুর নদীর ওপর ডাকবাংলো সেতুটি এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে নির্মাণ কাজ শুরু করেন।১৯৯৬ সালে স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সেতুর কাজ শেষ হয়। সেই থেকে সরো এ সেতু দিয়ে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করে।২০২১ সালে নলজুর নদী খনন কালে সেতুর পিলারের কাছ থেকে খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার সময় সেতুর দুটি অংশ দেবে যায়। এক বছর যান চলাচল বন্ধ থাকার পর গত ২৩ মার্চ স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জগন্নাথপুর পৌরসভা সেতুর দেবে যাওয়া অংশে ষ্টীলের পাটাতন বসিয়ে সেতুটি চালু করে।
জগন্নাথপুর বাজারের ব্যবসায়ী আমিনূল হক জানান,গুদামের পাশে হেলিপ্যাড এলাকায় বিকল্প সেতু ও সেতুর সংযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ও ডাকবাংলো সেতুটিতে ফাটল দেখা দিলে ঝুকিঁ পূর্ন হওয়ায় উভয় সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা শুরুতেই বিকল্প বেইলি সেতুটি আরও উঁচু করার দাবি জানিয়েছিলাম। তিনি বলেন, ডাক বাংলো সেতুটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে জরুরী ভিত্তিত্বে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন বলেন, নলজুর নদীর ওপর দুটি সেতুই স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির। বিকল্প সেতুটি উঁচু করে স্হাপন করা উচিত ছিল । জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আমরা এলজিইডির কাজ করেছি। ডাকবাংলো সেতুটি স্টীলের পাটাতন দিয়ে চালু করতে পৌরসভার ফান্ড থেকে আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়ে চালু করেছি।
কিন্তুু এখন সেতুতে ফাটলের ফলে অধিক ঝুকিঁ পূর্ন হওয়ায় যানবাহন চলা চল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনদূর্ভোগ লাঘবে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়ার জন্য উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ
কামনা করছি।
স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন যুগান্তর কে বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ওজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প বেইলি সেতুতে পানি উঠে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়েছে।অন্যদিকে ডাকবাংলো সেতুতে বড় আকারের ফাটলের ফলে অধিক ঝুকিঁ পূর্ন হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জনসাধারণর চলাচলের জন্য
ডুবে যাওয়া সংযোগ সড়কে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে । যাতে পায়ে হেঁটে লোকজন চলাফেরা করতে পারেন। ডাকবাংলো সেতুটির অবস্হা খুবই খারাপ এখানে নতুন সেতু নির্মানের জন্য আমরা উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
j
Leave a Reply