রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যান চলাচল বন্ধ; জগন্নাথপুরের মহাসড়কে আবারও সেই সেতুর পাটাতন ভেঙে আটকে গেলো ট্রাক সেমিনারে তারেক রহমান; আগামীর বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হতে পারবে না জগন্নাথপুরে কিশোর হত্যা মামলার প্রধান আসামীসহ গ্রেপ্তার ২ ৩য় বারের মতো জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হলেন মাওলানা লুৎফুর রহমান জগন্নাথপুরে মসজিদ কমিটি কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংর্ঘষে বৃদ্ধ নিহত, আহত ৩৫ যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির ও এম এ ছাত্তার এর স্বদেশ আগমন সিলেটে মুনতাহা হ ত্যা কা ণ্ড : চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ জগন্নাথপুর প্রেসক্লাবে  দ্বিতীয় ধাপে প্রাথমিক সদস্যপদ প্রদান জগন্নাথপুরে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার জগন্নাথপুরে কিশোরকন্ঠ মেধাবৃত্তি -২৪ সম্পন্ন

জগন্নাথপুরে  সেতু  দুর্ঘটনা: মৃত চালকের বিরুদ্ধে মামলায় এলাকায় প্রতিবাদের ঝড়

জগন্নাথপুরে  সেতু  দুর্ঘটনা: মৃত চালকের বিরুদ্ধে মামলায় এলাকায় প্রতিবাদের ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক::

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার  নলজুর নদীর কাটাগাঙের ওপর জরাজীর্ণ  বেইলি সেতু ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় ঘটনাস্থলে নিহত চালকের বিরুদ্ধে মামলা করে নতুন করে সমালোচনার সৃষ্টি করেছে সড়ক ও জনপথ  বিভাগ। তারা নিজেদের দায় এড়াতে এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। এলাকাবাসী বলছেন, নিহত ট্রাক চালক ও হেলপারের পরিবারের কান্না এখনও থামছেনা। অথচ চালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, যাঅমানবিক।

এর আগে ক্ষতিগ্রস্থ  সেতু ও চালক-হেলপার নিহতের ঘটনার পর গভীর রাতে সতর্কীকরণ  সাইনবোর্ড বসিয়ে নিজেদের দায় এড়ানোর চেষ্টা  করা হয় ।

গত মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকেলে নারায়নগঞ্জ থেকে জগন্নাথপুর পৌরশহরে আসার পথে সিমেন্টবাহী একটি ট্রাক নদীর উপর ঝূকিপূর্ণ সেতুতে পারাপার কালে ব্রীজ ভেঙে ট্রাকটিও নদীতে তলিয়ে যায়। এ ঘটনায় ট্রাক চালক ও হেলপার নদীতে নিখোঁজ হন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের প্রচেষ্টায় দু’জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় সুনামগঞ্জ ও সিলেট থেকে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা ছুঁটে আসেন ঘটনাস্থলে। ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতুর পাশে পূর্ব থেকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড ছিলনা। কিন্তু ঘটনার দায় এড়াতে সওজ বিভাগ রাতের আধাঁরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সেতুর একপাশে সতর্কতামূলক সাইন বোর্ড সাঁটিয়ে দেয়।

মঙ্গলবার রাতে জগন্নাথপুর বাজারের মেসার্স  ফাতেমা ট্রের্ডাসের মালিক শাকিল আহমদ ও নিহত ট্রাক চালক ফারুক মিয়ার বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির মামলা করেন সুনামগঞ্জ সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান। দীর্ঘ দিন থেকে জরাজীর্ণ এই সেতুতে সঠিক সংস্কারের ব্যবস্থা না নিয়ে নিজেদের দায় এড়াতে তারা মামলার আশ্রয় নিয়েছেন বলে  সচেতন মহল মনে করছেন। এ ঘটনায় জগন্নাথপুর বাসীর মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় বইছে।

জগন্নাথপুর পৌরশহরের ব্যব

সায়ী  ছালিক আহমদ  বলেন, সুনামগঞ্জ—জগন্নাথপুর- আউকান্দি- ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের সবগুলো বেইলি ব্রীজ খুবই  ঝুঁকিপূর্ণ। এসব সেতুতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে দূর্ঘটনাকবলিত সেতু সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এর আগেও একাধিকবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে সড়ক বিভাগের টনক নড়েনি। তাদের দায় এড়াতে মৃত ব্যাক্তি কে আসামী করার ঘটনা খুবই অমানবিক।
তরুণ সংগঠক প্রভাষক এম শামীম আহমেদ বলেন, কাটাগাঙের ওপর বেইলি সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ। সেতুটি মেরামতের উদ্যোগ কিংবা সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড কখনো চোখে পড়েনি।অথচ সওজ বিভাগ  নিজেদের দায় এড়াতে বিশেষ পন্থা অবলম্বন করেছে।

জগন্নাথপুর বাজারের ব্যবসায়ী আকমল হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি মহাসড়কে দীর্ঘদিনের পুরনো বেইলি সেতুটি যথাযথভাবে সংস্কার না করায় একাধিকার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গত দুই পূর্বেও সেতুর পাটাতন খুলে যান চলাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু  নিজেদের দায় এড়াতে সওজ কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সেতুর সামনে রাতের আধাঁরে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড বসায় ও ঘটনাস্থলে নিহত চালকের বিরুদ্ধেও মামলা করে।

মেসার্স  ফাতেমা ট্রের্ডাসের স্বত্ত্বাধিকারী শাকিল আহমদের  ভাই শাকিব আহমেদ বলেন, কাটাগাঙের ওপর বেইলি সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ। বিভিন্ন সময় এই সেতুতে দুর্ঘটনা ঘটলে নিচ অংশ রড ও তার লাগিয়ে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়। একটি মহাসড়কে এ ধরনের সেতু কাম্য নয়। সেদিনের ঘটনায় সেতুর একটি অংশসহ আমাদের সিমেন্টবাহী ট্রাক পানিতে তলিয়ে যায় ও চালক-হেলপার নিহত হন। এ ঘটনায় সড়ক বিভাগ নিজেদের দায় এড়াতে রাতের আঁধারে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড বসায়। এছাড়া ঘটনাস্থলে নিহত চালকের বিরুদ্ধেও মামলা করে, যা হাস্যকর। অথচ সড়ক বিভাগের খামখেয়ালিপনার
কারণে সেদিন যদি কোনো যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় পতিত হতো তাহলে জানমালের ব্যাপক  ক্ষয়ক্ষতি হত।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান যুগান্তর কে জানান, পরিবহন আইনে জগন্নাথপুর থানায় সওজের কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটি মামলা  দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্হা নেব। তিনি বলেন চার্জশীটের সময় মৃত ব্যাক্তির নাম কর্তন করা হবে।

প্রসঙ্গত সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাগলা এলাকা থেকে জগন্নাথপুর পৌর শহর পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব ২১ কিলোমিটার। এই ২১ কিলোমিটারে সাতটি পাকা এবং নয়টি বেইলি সেতু রয়েছে। বেইলি সেতুর সব কটিই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে সাতটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকিপূর্ণ সাতটি সেতুর মধ্যে নলজুর নদীর কাটাগাঙের ওপর বেইলি সেতুটি পূর্ব থেকেই ছিল খুবই নাজুক অবস্থায়। চলতি বছরের  ১৬ই জুলাই  আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের এই সেতুর পূর্ব পাড়ে চারটি পাটাতনের জোড়া খুলে ফাঁক হয়ে যায়। এছাড়া একটি পাটাতন আরেকটির ওপর উঠে গেলে দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকার পর কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে কাজ করে ব্রীজটি চালু করেছিলেন। ব্রীজ টি নদীতে বিধ্বস্ত হওয়ায় এ সড়কে ৩দিন ধরে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এলাকাবাসী চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম প্রামাণিক বলেন,অতিরিক্ত ট্রাক বুঝাইয়ের কারনে ব্রীজ টি ভেংগে পড়েছে।এ ব্রীজের ধারন ক্ষমতা ১০টন সেখানে ৪০ টন নিয়ে আসলে ব্রিজ লোড মানবে কিভাবে। তাই আমরা আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছি। ভবিষৎ এ কেউ ওভার লোড করলে তাদের বিরুধ্বে ও আইনগত পদক্ষেপ নেব। তিনি বলেন খুবই দ্রুত ভাংগা ব্রীজটি মেরামত করে যানবাহন চলাচল উপযোগী করে দেওয়া হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com