শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

পাহাড়ি ঢলে ভাসছে সিলেট সুনামগঞ্জ আশ্রয়ের খোঁজে লাখো মানুষ

পাহাড়ি ঢলে ভাসছে সিলেট সুনামগঞ্জ আশ্রয়ের খোঁজে লাখো মানুষ

যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

সিলেট : সিলেটে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও অব্যাহত পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বাড়িঘরে টিকতে না পেরে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। জেলা প্রশাসনের হিসাবে বুধবার দুপুর পর্যন্ত পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় সোয়া আট লাখ মানুষ। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলা-গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জের পাশাপাশি বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। এসব উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশীদের উঁচু বাসা-বাড়ি বা আত্মীয়স্বজনের ঘরে। বুধবার বিকালে সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এ সময় পর্যন্ত মহানগরের ২৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এর মধ্যে সিলেট মহানগরে অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি।পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র বুধবার বিকাল ৩টায় জানিয়েছে, এ সময় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৯ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি বইছে।পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যারা বাড়িঘরে ছিলেন তারাও আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন। বুধবার কোম্পানীগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে খাবার সংকট রয়েছে। যাদের রান্না করার ব্যবস্থা আছে তারা এক বেলা রান্না করছেন। যাদের ব্যবস্থা নেই তারা শুকনো খাবার খেয়েই দিন পার করছেন। হতদরিদ্র বানভাসিরা তাকিয়ে আছেন সরকারের সহায়তার আশায়। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কিছুটা সহায়তা মিললেও গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় কেউ খোঁজ নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন বন্যা আক্রান্ত লোকজন।এদিকে বুধবার দুপুরে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে যান দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান। এ সময় তিনি বানভাসি মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। তেলিখাল এলাকায় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেন। তার সঙ্গে ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ অন্য কর্মকর্তারা। দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বানভাসিদের উদ্দেশে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে ভোগান্তি না হয় সেজন্য যা যা করা দরকার সবই করবে সরকার। ধৈর্য ধরে দুর্যোগ মোকাবিলার আহ্বান জানান তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ত্রাণের অভাব নেই। প্রাথমিকভাবে তিনি নগদ ২০ লাখ টাকা, শিশুখাদ্য ও গোখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারও বরাদ্দ দেন। তিনি বলেন, এটা প্রাথমিক বরাদ্দ। পরে যা যা করণীয় তাই করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইতোমধ্যে নগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকের বাসাবাড়িতে গলা পর্যন্ত পানি উঠেছে। নিচু এলাকাগুলোর কলোনি বা বাসাবাড়ি প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। অনেকে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার অনেকে নিজের বাসাবাড়ি ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না।জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আগামী তিন দিন সিলেট অঞ্চলে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।২০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে এ নিয়ে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে ২৭ মে সিলেট বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে সিলেট।প্রথম দুটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিলেও ঈদের দিন (সোমবার) ভোররাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরের অনেক এলাকা। পুরো জেলায় বিস্তৃতি ঘটে বন্যার। সোমবার বিকালে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কিছুটা কমে পানি। কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ফলে হুহু করে বাড়তে থাকে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি। বুধবার বিকাল পর্যন্ত ৩টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট) : বন্যা কবলিত উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। খাবারের অভাবে ছেলেমেয়ে নিয়ে মহাসংকটে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থাকলেও একমুঠো মুড়ি নিয়েও কেউ যাননি বলে জানান বাসিন্দারা।

গোলাপগঞ্জ (সিলেট) : মঙ্গলবার উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৫০-৬০টি অসহায় পানিবন্দি পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। এদিকে ৫৭টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ১০-১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩০-৩৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে খোয়াই নদীতে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার দুপুরে শহরতলীর জালালাবাদে নদীর বাঁধে হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। ফলে প্রবল বেগে পানি জালালাবাদসহ আশপাশের এলাকায় প্রবেশ করছে। এদিকে সকাল থেকেই খোয়াই, কুশিয়ারা, কালনী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, দুপুর ১টার দিকে খোয়াই নদীর বাল­া পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। খুব দ্রুতই পানি নিচে নেমে যাবে।

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) : হাকালুকি হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত হয়েছে বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২৫২ গ্রাম। এতে প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : মঙ্গলবার রাতে বাঁধ ভেঙে বাড়িঘর, কৃষি জমি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

বিশ্বনাথ (সিলেট) : বিশ্বনাথে তলিয়ে গেছে দেড় শতাধিক বাড়িঘর। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার আংশিক এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। বাড়িঘরে পানি ওঠায় বাসস্থান ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকেই। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় শতাধিক পরিবার উঠেছে। বয়োবৃদ্ধ, শিশুসন্তান ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। পানিবন্দি মানুষের খবর নিতে সেখানে যান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তারা বুধবার বিকালে উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নে গিয়ে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও বানভাসি মানুষের খোঁজখবর নেন।

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) : জগন্নাথপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বুধবার সকাল থেকে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। বন্যার্তদের জন্য উপজেলায় ১৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের খুশালপুরে প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে নদীর পানি কমলেও হাওড় অঞ্চল ও পৌর শহরের পাড়া-মহল­ায় বাড়ছে। মঙ্গলবার সকালে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার বা ২.২৩ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বুধবার সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হয় বিপৎসীমার ৪০ সেমি. উপর দিয়ে। সরেজমিন দেখা যায়, একতলা বা কাঁচাঘরে থাকা মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। মঙ্গলবার রাত থেকেই অনেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। সবার চোখেমুখে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার আতঙ্ক। পাহাড়ি ঢল নেমে আগে থেকেই প্লাবিত ছিল জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর, দিরাই, শাল­া, জামালগঞ্জ উপজেলা। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা। সুরমা নদীর পানি ছাতক, দোয়ারাবজার ম?লি­কপুর পয়েন্টে পাকা সড়ক ভেঙে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক উপ?জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মুন্না যুগান্তরকে জানান, আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে শুকনো খাবার, ওষুধপত্র বা স্যালাইন পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রান্না করা খাবারও বিতরণ করা হবে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেননি, তাদের নৌকা বা বিভিন্ন পরিবহণ দিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৩?টি ইউপি চেয়ারম্যান যান ও পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, জেলায় আমরা ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। যাদের প্রয়োজন তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রিতদের সার্বিক সহযোগিতা করা হ?বে।

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ঈদের দিন (সোমবার) ভোররাত থেকে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণ বুধবার পর্যন্ত চলেছে। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। জেলার ৭ উপজেলার ৫ পৌরসভাসহ ৩৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : চুনারুঘাট উপজেলার ১৪টি গ্রাম বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও মৌসুমি সবজি।

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) : কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি, পোগলা, বড়খাপন, কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ওই উপজেলার বড় নদী উব্দাখালীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার মহাদেও নদ, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী ও গণেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে আটটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বুধবার তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়াও উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টির কারণে গাইবান্ধায় সব নদ-নদীতে ব্যাপক হারে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি কাজ করছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া, হরিপুর, বেলকা, লালচামার, ছেড়িমারারচরসহ অন্তত ১২ চরাঞ্চলে পানি উঠেছে বলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড তথ্য দিয়েছে। তবে ঘাঘট, করতোয়াসহ কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি হলেও বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম : জেলার প্রধান দুই নদী তিস্তা বিপৎসীমার ১৫ সেমি. ও দুধকুমার বিপৎসীমার ৯ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি। জেলার রাজারহাট ও নাগেশ্বরী উপজেলার ১২টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বাড়ায় সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সবজি খেত তলিয়ে গেছে এবং চিলমারীর কয়েকটি পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

কাউনিয়া (রংপুর) : তিস্তা নদীর পানি বেড়ে কাউনিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী ভাঙন বেড়েছে। ২শ পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

এছাড়া নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা, কলমাকান্দা ও মোহনগঞ্জে অন্তত ১০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে ৯৯৯-এ ফোন করে খাবার পেয়েছে ৬টি পরিবার। ফোন দেওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ খাবার পৌঁছে দিয়েছে।

সৌজন্য যুগান্তর।

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com