সামিউল কবির,শান্তিগঞ্জ থেকে:
বিজ্ঞান সম্মত, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন ও শিক্ষার গুনগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে হচ্ছে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল। আধুনিক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে ইতোমধ্যে ভূমি গ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় শান্তিগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে আস্তমা গ্রামের প্রধান সড়কের পশ্চিমে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পার্শ্বে পঞ্চাশ হাল মৌঁজায় ৭৫ শতাংশ জায়গা স্কুলের নামে হস্তান্তর করেন কানাডা প্রবাসী ডাক্তার দম্পতি আস্তমা গ্রামের ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ ও ডা. সুলতানা ওয়াহিদ চৌধুরী। স্কুলে সভাপতি হিসেবে জায়গাটি গ্রহণ করেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফজলে রাব্বানী চৌধুরী, উপজেলা প্রকৌশলী আল-নুর তারেক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার নুরে আলম সিদ্দিকসহ প্রমুখ। এর আগে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক ড. ইলিয়াস মিয়া এই চিকিৎসক দম্পতিকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং এই মহতী উদ্যোগে ভূমিদান করার জন্য ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ ও ডা. সুলতানা ওয়াহেদ চৌধুরীকে সম্মাননা প্রদান করেন। এদিকে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল স্থাপনের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন নাইন্দারপাড় বাসী। এতে আশার আলো দেখছেন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। স্কুলটির ক্লাস শুরুর মধ্যদিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করবে শান্তিগঞ্জবাসী। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকেই শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে প্রতিষ্ঠানটিতে। প্রথমদিকে অস্থায়ী ভবনে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চলবে শ্রেণী কার্যক্রম। ফেব্রুয়ারির দিকে নতুন ভবন নির্মাণ করবে উপজেলা প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফজলে রাব্বানী চৌধুরী। সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করবে বাংলাদেশ বিয়াম ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। শ্রেণিকক্ষে রাখা হবে অত্যাধুনিক মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। একটি ভবনের নামকরণ করা হবে ভূমি দাতাদের মা-বাবার নামে। অনারবোর্ডেও থাকবে ভূমি দাতাদের নাম। ভূমিদাতা দম্পতি ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ ও ডা. সুলতানা ওয়াহিদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল মা-বাবার নামে এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার। দান করা ভূমিতে একটি সাইনবোর্ডও ঝুলিয়েছিলাম। নানা প্রতিবন্ধকতায় সেটা আর হয়ে উঠেনি। এখন আবার কথা হচ্ছিলো স্কুল প্রতিষ্ঠার। তখন ইউএনও আগ্রহ দেখালেন। তাঁর (ইউএনও) সহযোগিতায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। আমরা আজ রেজিষ্ট্রি করে ২ কোটি টাকা সমমূল্যের ৭৫ শতাংশ ভূমি হস্তান্তর করেছি। শীঘ্রই স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা বলেন, প্রথমে ভূমি দাতাদের ধন্যবাদ, এতো দামি জায়গা বিয়াম ল্যাবরেটরি বিদ্যালয়ের নামে দান করে দেওয়ার জন্য। আমরা ভূমি রেজিস্ট্রি নিয়েছি। জানুয়ারি থেকেই ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। নিকটস্থ অস্থায়ী ভবনে পাঠদান শুরু হবে। স্কুলটি প্রতিষ্ঠায় সরকার, স্থানীয় প্রবাসী, ব্যবসায়ীসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। সবার সহযোগিতায় আমরা এই অঞ্চলের শিক্ষাক্রম ঢেলে সাজাতে চাই।
উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন যাবৎ শান্তিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ জোরালো ভাবে দাবী তুলেছিলেন উপজেলা সদর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য। সর্বশেষ বিগত ৭ ডিসেম্ভর বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বৃহৎ আকারে সংবাদও হয়েছিল উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের দাবীতে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসলে তারা বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য জায়গা অনুসন্ধান করেন। এমন অনুসন্ধানের খবর পেয়ে কানাডা প্রবাসী ডা: দম্পত্তি বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য তাদের মালিকানাধীন জায়গা দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
Leave a Reply