রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন
নিজেস্বপ্রতিবেদক: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে জগন্নাথপুর সরকারী গার্লস হাইস্কুলের একাডেমীক ভবন নির্মানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচতলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে । ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের ইট, গাছের পাতা ও ময়লাযুক্ত বালু, মরিচা ধরা রড, মিক্স করা নিম্নমানের পাথর ও নিম্নমানের সিমেন্ট ব্যবহার করছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
প্রাক্কলন অনুযায়ী মান সম্মত নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে যাতে কাজ করা হয় এ ব্যাপারে তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট চার কোটি তিরাশি লাখ তেইশ হাজার একশ চুয়াল্লিশ টাকায় এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০২৫ সালের ১৫ এপ্রিল সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও অর্ধেক কাজ হয়নি। কাজের মধ্যে আছে ৫ তলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, বিদ্যালয়ে স্যানিটারি, পানি সরবরাহ ও অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক কাজ। কাজটি করছে সিলেটের আম্বরখানা এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কেবি কনস্ট্রাকশন এন্ড রাকিব এন্টারপ্রাইজ। ৫ তলা ভবনটি করতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি তিরাশি লাখ তেইশ হাজার এক শ’ চুয়াল্লিশ টাকা।স্থানীয়রা আরো জানান, দীর্ঘদিন পর জরাজীর্ণ জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ভেঙে ৫ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।কিন্তু শুরু থেকে বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজে প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে দায়সারাভাবে কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি ইট ও পাথর না ধুয়ে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।বিদ্যালয়ের অভিভাবক কমিটির সভাপতি মোঃ সানোয়ার হাসান সুনু বলেন, ‘বিপূল অর্থ ব্যয়ে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া ইট, পাথর না ধুয়ে ভবনে লাগানো হচ্ছে। নির্মান কাজে কিউরিং জরুরী অথচ এখানে ঠিক মত কিউরিং করা হচ্ছে না। পিলারে চটের বস্তা দিয়ে নিয়ম মত কিউরিং করার কথা থাকলে ও সঠিক ভাবে কিউরিং করা হচ্ছে না। ছাদ ঢালাইকাজের পরেও নিয়ম মতো কিউরিং করা হচ্ছে না।এমনকি অদ্যবধি ভবনের পিলারগুলোতে পানি দেয়নি নির্মাণ শ্রমিকরা। ঢালাইকাজের সময় শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের একজন প্রকৌশলী সার্বক্ষণিক উপস্হিত থাকার কথা থাকলেও তাদের উপস্হিতি দেখা যায়নি।অনেক সময় রাতের অন্ধকারে ও ফ্রি ষ্টাইল ঢালাইকাজ করতে দেখা যায়।মান সম্মত নির্মান সামগ্রী দিয়ে কাজের গুনগত মান বজায় রেখে প্রাক্কলন অনুযায়ী ভবনের কাজ সমাপ্ত করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।জগন্নাথপুর নাগরীক অধিকার ফোরামের আহবায়ক এম এ কাদির বলেন, ‘কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনের নির্মাণের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। পিলারে পানি দেওয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি নেই।
জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ইকবাল মাসুদ বলেন, আমরা ভবনের নির্মান কাজের তদারকি করছি। নির্মাণ কাজ যাতে প্রাক্কলন অনুযায়ী মানসম্মত সামগ্রী দিয়ে করা হয় এটাই আমাদের দাবী। আর কাজ সটিক ভাবে হচ্ছে কিনা পরীক্ষা করার দায়িত্ব প্রকৌশলীর। আমরা তদারকি করছি। টেকনিক্যাল জিনিস গুলো আমরা বুঝিনা। প্রকৌশলী ভালো জানবে। কোনো অনিয়ম থাকলে তাদের।নিম্ন মানের সামগ্রী ও কাজে অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে- নির্মাণাধীন ভবন দেখভালের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার আব্দুল রাকিব এর ভাতিজা মোঃ তানজিল সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না।’মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ঠিকাদার আব্দুল রাকিব বলেন, ‘ এখানে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। আমরা শিডিউল অনুযায়ী কাজ করি। তবে তিনি এ-ও বলেন, নির্মাণ শ্রমিকদের ভূল থাকতে পারে; তবে ইচ্ছা করে কোন অনিয়ম করবো না।এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সুনামগঞ্জের উপ সহকারী প্রকৌশলী ইসফাক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিল্ডিং এর কাজে কিউরিং অর্থাৎ পানি দেওয়া খুবই জরুরী। নির্মাণ কাজের অনিয়ম হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
Leave a Reply