শামসুদ্দোহার এমনও দিন গিয়েছে সকালের নাশতা পান্তাভাত তা খেয়েই টিউশনি করতে বের হতে হয়েছে। টিউশনি থেকে ফিরে বিদ্যালয়ে। শুধু পানি খেয়ে টিফিনের সময় কেটেছে। বিকেলে বাড়িতে ফিরে নাশতা বা চালভাজা। তারপর আবার টিউশনি। রাত্রে আবার নিজের রান্নাবান্না হোম ওয়ার্ক আর এভাবে লেখাপড়া চালিয়ে ২০১৯ সালে এসএসসি পাশ করেন তিনি।
এসএসসি পাশের পর কলেজে ভর্তি হবেন সে টাকাও নাই তার হাতে। পরে অন্য একজনের দয়ায় ও আর্থিক সাহায্যে কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ পান তিনি। কলেজে ভর্তি হয়ে টিউশনির পরিমান টা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শামসুদ্দোহা। একসময় লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি করে ভালই চলছিলো শামসুদ্দোহার জীবন, চোখেমুখে এমনও স্বপ্ন বুনছিলেন যে লেখাপড়া শেষ করে একটা বড় চাকুরি করে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কিন্তু এতে বাদ সাধে মহামারী করোনাভাইরাস। করোনাকালে অন্যের বাড়িতে গিয়া টিউশনি করার সুযোগ হারিয়ে চোখেমুখে অন্ধকার দেখেন তিনি।
অবশেষে তার এক বন্ধুর পরামর্শে উপজেলার শান্তিগঞ্জ বাজারে এক মুদির দোকানে সেলসম্যানের চাকুরী নেন তিনি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১১.০০ টা পর্যন্ত শ্রম দিয়ে চলেছেন মেধাবী ছাত্র শামসুদ্দোহা।
শামসুদ্দোহার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার ২ নং জয়কলস ইউনিয়নের ডুংরিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা আজাদ মিয়া ছিলেনা একজন দিনমজুর। মায়ের নাম রিনা বেগম, মায়ের আদর বুঝার আগেই মাত্র ২ বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি, ২ বোন ১ ভাইয়ের সংসারে শামসুদ্দোহা ছিলেন সবার ছোট, বাবা থাকতেই বড় দু বোনের বিয়ে হয়ে যায় অনত্রে। যখন অষ্টম শ্রেনীতে পড়েন তখন বাবাকে হারিয়ে একদম একা হয়ে যান তিনি। নিদারুণ কষ্ট আর পিতামাতা হারা মেধাবী শামসুদ্দোহা দারিদ্র্যতা কে উপেক্ষা করে আত্মপ্রত্যয় আর অদম্য মনোবলের জোরে তার জীবন জীবিকা আর লেখাপড়া কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
শামসুদ্দোহা বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে আমাকে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। ইচ্ছাশক্তির বলেই এখনো লেখাপড়া ধরে রেখেছি। পাড়ার অন্য ৮/১০ টা ছেলের জীবনের মতো আমার জীবন জীবিকা ছিলনা। এতিম হয়ে যাওয়া এবং দারদ্রিতাকে সাথে করেই আমি আমার জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। আজও আমার নিজের একটা বাড়ি নাই, অন্যের বাড়িতে থাকি। আমার চেয়ে অসহায় আর গরীব হয়না, এরপরও আমি সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনা।
এ ব্যাপারে ধনাট্য হৃদয়বান ব্যক্তির আর্থিক সহযোগিতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মেধাবী শামসুদ্দোহা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে জীবনের লক্ষে পৌছাতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
Leave a Reply