রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: চতুর্থ ধাপের ৮৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে গতকাল রোববার। নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, হামলা, ব্যাপক জালভোট প্রদান এবং কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেছেন পরাজিত প্রার্থীরা। তবে নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হয়েছে নির্বাচন তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এ ধাপের নির্বাচনে এ পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে বিভিন্নস্থানে প্রতিপক্ষের হামলা, সংঘর্ষ ও কেন্দ্র দখল করে জালভোট দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের ছবি তুলতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২ নম্বর আখানগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের সময় বাবা-মেয়েকে আটক করে পুলিশ।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে জামালপুর ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাই ও কেন্দ্র ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। রাজশাহীর চারঘাটে কেন্দ্রে অবস্থান করে প্রকাশ্যে জালভোটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিলেটে ভোটকেন্দ্রে হামলা ও সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। মাদারীপুরে নির্বাচনী সহিংসতায় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী আহত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি ইউনিয়নে ব্যালট ছিনতাই ও জালভোট দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জালভোট দেয়ার অভিযোগে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু ব্যক্তিকে আটক করে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সংঘর্ষ ও কেন্দ্র দখল ঠেকাতে বিভিন্নস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নির্বাচনী সহিংসতায় ৪ পুলিশসহ আহত ২০
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় ৪ পুলিশ, ১৫ নারী কর্মীসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। গত শনিবার বিকালে উপজেলার ১১ নম্বর বড় মাছুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বড় মাছুয়া গ্রামের বটতলা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। ১১ নম্বর বড় মাছুয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নাসির হোসেন হাওলাদার অভিযোগ করেন, শনিবার বিকালে আমার চশমা প্রতীকের একদল নারী কর্মী প্রচারণা চালাতে দক্ষিণ বড় মাছুয়া গ্রামের বটতলা নামক স্থানে যায়। এ সময় নৌকা প্রতীকের আয়শা আক্তার মনির সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় আয়েশা বেগম (৪৫), হেলেনা (৩৯), রুনু বেগম (৪২), সুরমা বেগম (৪৩), শেফালী (৫০), নিলুফা (৫২), আসমা বেগম (৩০), বিলকিস (৩০), শিলা (১৯), বকুল বেগম (৪৫), খাদিজা বেগম (৩০), শাহবানু (৬৫), জাহানুর (৩৫), মমতাজ (৩৩), মুন্নি বেগম (৩০) আহত হয়েছেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে এএসআই সোহেল (৩৫), পুলিশ কনস্টেবল সীমান্ত খান (২৪), আব্দুস সালাম (২৩), রেজবী (২৬) আহত হয়েছেন। এছাড়া নৌকা প্রতীকের ফোরকান (৪০) নামের এক সমর্থক আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।
ব্যালট ছিনতাইকালে বাবা-মেয়ে আটক, পুলিশের গুলি
স্টাফ রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২নং আখানগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের সময় নৌকা প্রতীকের সমর্থক বাবা ও মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় ফাঁকা গুলি ছুড়ে ব্যালট পেপার উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল সকালে ঝাড়গাঁও রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আটককৃতরা হলেন কাবুল (৪৫) ও তার মেয়ে কামরুন নাহার (২৫)। কাবুল ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী হোসেন আলী (৩৫)। এই ঘটনায় ওই কেন্দ্রে প্রায় আধাঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। পরে বিজিবি, র্যাব ও প্রশাসন কেন্দ্রে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুজ্জামান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দোষীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সবক’টি ভোটকেন্দ্রে সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলেছে। মানুষ উৎসবমুখরভাবে কেন্দ্রে ভোট দিতে আসছে। সারাদিন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেন ভোটাররা।
ব্যালট পেপার ছিনতাই, বাক্স ভাঙচুর, গুলি
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা জালালপুর ইউনিয়নে একটি কেন্দ্র স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া চাঁন্দপুর ইউনিয়নের একটি, বনগ্রাম ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র সাময়িক বন্ধ হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে পুনরায় ভোগগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, জালালপুর ইউনিয়নের উত্তর চরপুক্ষিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ. খালেক সরকার রাজুর ওয়ার্ডের কেন্দ্রটি স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান রুস্তম পরিদর্শন করতে এলে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা হাবিবুর রহমান রুস্তমের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এ সময় কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টকে বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকগণ। এতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উভয়পক্ষের মাঝে ব্যাপক সংর্ঘষ বেঁধে যায়। এ সময় ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট বাক্স ও কেন্দ্র ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। একজন মহিলাসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। দফায় দফায় সংঘর্ষে কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। উপজেলার চাঁন্দপুর ইউনিয়নের ভদ্রাসন কেন্দ্রটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহাতাব উদ্দিন সমর্থকদের সংঘর্ষ হলে কেন্দ্রটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার দাবি করলেও স্থানীয় লোকজনের দাবি কেন্দ্রটি চালু করা হয়নি। বনগ্রাম ইউনিয়নের কায়েস্থপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিও সাময়িক বন্ধের পর পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
উত্তর চরপুক্ষিয়া কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাসুদুল হক বলেন, আমাদেরকে হুমকি ও দফায় দফায় হামলার কারণে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভোট কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। র্যাবের এএসপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইটপাটকেলে আমাদের তিনজন সদস্য সামান্য আহত হয়।
পথে পথে বাধা, নৌকায় ইচ্ছামতো সিল
চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান: রাজশাহীর চারঘাটে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে বাধা ও বুথের ভেতরে নৌকায় ইচ্ছামতো সিল মারার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নৌকায় ভোট দেয়া হয়েছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ব্যালট পেপারটি নৌকার এজেন্টদের দেখিয়ে বাক্সে ফেলতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক ভোটার। আবার অনেক কেন্দ্রে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীর এজেন্ট দেখা যায়নি।
সরজমিন দেখা গেছে, শলুয়া ইউনিয়নের তাঁতারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হলিদাগাছী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, শলুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও বামুনদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে। তবে প্রশাসনের পক্ষে তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এসব কেন্দ্রে প্রশাসনের স্টাইকিং ফোর্স পৌঁছালে তারা অবস্থানকালীন সময়ে পরিবেশ শান্ত থাকলেও প্রশাসন চলে গেলে আবারো কেন্দ্রে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের হলিদাগাছী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকায় ভোট না দেয়ার কারণে মোতালেব মণ্ডল (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ৩ জন আহত হয়েছেন। আহত মোতালেব মণ্ডলের নাতি আশা আক্তার জানান, আমার নানা আর আমি একসঙ্গে ভোট দিয়ে বের হচ্ছিলাম। কেন্দ্রের বাইরে বের হতেই নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের লোকজন নৌকায় ভোট দিস নাই কেনো বলে প্রকাশ্যে আমার নানাকে এলোপাতাড়িভাবে চাপাতি দিয়ে কোপাতে শুরু করে। স্থানীয় লোকজন ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে নানাকে উদ্ধার করে প্রথমে চারঘাট ও পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। চাপাতির কোপে ওনার বুকে ও পিঠে গুরুতর জখম হয়েছে। এ ঘটনায় রুবেল ও মাসুদ নামে আরও দুজন আহত হয়েছে। এদিকে, শলুয়া ডিগ্রি কলেজ ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্র দখল করার অভিযোগে প্রায় ত্রিশ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। এ সময় কেন্দ্র দখলের ছবি তোলায় দৈনিক আজকের পত্রিকার চারঘাট প্রতিনিধি সনি আজাদ ও দৈনিক মানবজমিনের প্রতিনিধি সজিব ইসলামের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করা হয়েছে। শলুয়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের ভোটার সোহেল রানা (৩০) বলেন, আমার পরিবারের লোকজন ভোটকেন্দ্রেই যেতে পারেনি। সকালে এবং দুপুরে দুইবার ভোট দিতে গেলেও কিছু লোকজন হাসুয়া ও লাঠি হাতে বাধা দিয়ে রাস্তা থেকেই ফেরত পাঠিয়েছে। শলুয়ার তাঁতারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ভোটার সারোয়ার হোসেন (৩৫) বলেন, আমার ভোট আমি নিজে সিল মেরে দিতে পারিনি। আমার ভোট খাইরুল ইসলাম নামের একজন সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়েছে। শলুয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মাসুম বলেন, শিবপুর, হলিদাগাছী, শলুয়া কলেজ ও তাঁতারপুর কেন্দ্রে সরকারদলীয় কিছু ক্যাডার নৌকার পক্ষে জোর করে সিল মেরেছে। আমি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও তারা কোনো সুুরাহা করেননি। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আমি এর সমাধান চাই। সঠিক নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়তি রানী কৈরী জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছি। আমরা থাকা অবস্থায় কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে ভোট দেয়ার সময় একজন ভুয়া ভোটারকে আটক করে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে।
কুপিয়ে ও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ১৫, ১৩ পোলিং এজেন্টসহ আটক ৭৫
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা ও সংঘর্ষের মধ্যে গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়েছে। সোনাগাজীতে স্বরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তিনজনকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন স্থান থেকে ৭৫ জনকে আটক করেছে। সোনাগাজীতে স্বরাজপুর গ্রামে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় গ্রাম পুলিশ জানায়, ভোট শুরুর পর থেকে মেম্বার প্রার্থী শাহ আলমের ছেলে রনির নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা অপর মেম্বার প্রার্থী আজাদ হোসেন কিরণের ভোটার রবিউল হক, সুজনসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করেছে। ফুটবল প্রতীকের শাহ আলমের ছেলে রনিসহ তার লোকজন শটগান, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে কেন্দ্রের পাশে অবস্থান করে ভোটারদের প্রভাবিত করছে বলে অভিযোগ করেছে মেম্বার প্রার্থী আজাদ হোসেন কিরণ। সোনাগাজীর চরচান্দিয়ায় হামলায় শিশুসহ ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এদের মধ্যে একজন দুধের শিশু রয়েছে।
আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন জানায়, মোবাইল নিয়ে ভোট কক্ষে প্রবেশ করায় মধ্য চর চান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ১৩ জন পোলিং এজেন্টকে আটক করা হয়েছে। একই কেন্দ্রের ৫নং ভোট কক্ষে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নুরের নবী নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ঢোকানোর অভিযোগ করেছে একাধিক ভোটার। তবে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও সোনালী ব্যাংক বক্তারমুন্সী ব্রাঞ্চের সিনিয়র অফিসার নুরের নবী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বয়স্ক মহিলা সিল মারতে না পারলে তিনি শুধু সহযোগিতা করেছেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লিখন বণিক জানান, ভোট শুরুর পূর্বে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে গাড়িযোগে সোনাগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নে প্রবেশ করলে একটি কালো হাইস গাড়ি ও একটি নোহা গাড়িসহ ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
দুই প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ১০
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পাবর্তীনগর ইউনিয়নের বিঞ্চপুর ও মকরধজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ১০ জন আহত হয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ হয়। বিঞ্চপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মকরধজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও জালভোট দেয়া নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে বিঞ্চপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে প্রিজাইডিং অফিসার মো. সফিক উল্যাহকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই ইউনিয়নের দায়িত্বরত রিটার্নিং অফিসার মো. ছালেহ উদ্দিন। তিনি জানান, দুপুর দেড়টার দিকে প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে হাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অপরাধে আরিফ হোসেন নামে এক যুবককে আটক করা হয়।
জালভোট দিতে গিয়ে আটক ২
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বিশ্বম্ভপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জালভোট দেয়ার সময় দু’জনকে সন্দেহজনক আটক করে পুলিশে দিয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ারুল হক। আটককৃতরা হলো, বিশ্বম্ভপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের সিরাজপুর বাগগাঁও গ্রামের জিয়া রহমানের ছেলে নাঈম হোসেন (১৮) ও একই গ্রামের মঞ্জুর আলীর ছেলে কামরুজ্জামান (১৯)। গতকাল দুপুরে সিরাজপুর বাগগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের একটি বুথে এ ২ জন জালভোট দিতে আসলে কেন্দ্রের সহকারী পোলিং এজেন্টের সন্দেহ হলে পরিদর্শন করতে আসা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি জানান। পরে তিনি প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করে সন্দেহ হলে ওই ২ জনকে পুলিশের মাধ্যমে থানা হেফাজতে পাঠান।
মাদারীপুরে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহত
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরের রাজৈরে ইউনিয়ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী আহত হয়েছেন। স্থানীয়দের কাছ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। রাব্বানী দাবি করেছেন জালভোট ঠেকাতে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। তবে প্রতিপক্ষের লোকজনের দাবি রাব্বানী প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটে মাদারীপুর রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের গাংকান্দি সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে রোববার বেলা তিনটার দিকে। এই ঘটনায় গোলাম রাব্বানী রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ইউপি নির্বাচনে ইশিবপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর মামা সালাহ উদ্দিন আহমেদ চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। গত কয়েকদিন ধরে রাব্বানী তার আপন মামার পক্ষে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। রোববার ঈশিবপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গাংকান্দি সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারফ মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লার সঙ্গে জালভোট প্রদানকে কেন্দ্র করে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলায় রাব্বানীর ডান হাতের তর্জনী আঙুল ফেটে যায়। এ সময় এসএম টিপু (২৬) নামে আরেক জন আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে মোশারফ মোল্লার লোকজন প্রকাশ্যে ভোট কেটে নেয়ার চেষ্টা করছিল। পরে আমিসহ কিছু লোক গিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করলে আমাকে অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়া হয়। আমি থানায় অভিযোগ করবো।’ চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশাররফ মোল্লা জানান, ‘রাব্বানীনহ তার লোকজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।’ রাব্বানী আরও বলেন, ‘আমি শিগগিরই থানায় মামলা দায়ের করবো।’
ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কেন্দ্রের ভেতর তেমন কোনো কিছু হয়নি। কেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। কোনো জাল ভোট বা ভোট কারচুপির ঘটনা ঘটেনি।
ভৈরবে ব্যলট পেপার ছিনতাই, রাবার বুলেট নিক্ষেপ
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সকাল থেকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চললেও দুপুরের দিকে কালিকা প্রসাদ ইউনিয়নের আতকাপাড়া ও চরেরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০ জন আহত হয়েছে। এ সময় ২টি কেন্দ্রেই প্রায় ১ ঘণ্টা করে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৪০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় প্রায় দেড় শতাধিক ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়। খবর পেয়ে বিজিবি, র?্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পুনরায় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোজনীল শহীদ চৌধুরী ও ভৈরব থানার ওসি গোলাম মোস্তফা। তাছাড়া উপজেলার সবক’টি ইউনিয়নে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নির্বাচনে ভৈরবের ৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৭ জন, ইউপি সদস্য পদে ২১৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও উপজেলার এবার ৭টি ইউনিয়নের ৭০টি ভোটকেন্দ্রে সর্বমোট ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষ, টাকাসহ ধৃতদের সাজা
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের খুদেহাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে সদস্য প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছে। ভোটের শেষ সময়ে কেন্দ্রের ভেতর জালভোট দেয়া হচ্ছে এই অভিযোগে সদস্য প্রার্থী হাবিব ও বাছিরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনায় দু’সদস্য প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে, কেন্দ্রের ভেতর টাকা লেনদেনে দু’জনকে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ চলাকালে ৩৪ হাজার টাকাসহ আটক হয় মহসিন মিয়া (৩২) নামে এক প্রার্থীর এজেন্ট। তাকে ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একরামুল ছিদ্দিক তাকে কারাদণ্ড দেন। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মহসিন আদমপুর গ্রামের রাসু মিয়ার ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান রতনের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, ধারণা করা হচ্ছে ওই এজেন্ট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে দায়িত্বরত কাউকে দেয়ার জন্য টাকাগুলো এনেছিলেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৩ মাসের কারাদণ্ড দেন।
আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টের কাছে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের নাম লেখা টাকার খাম উদ্ধার করা হয়। মনিয়ন্দ উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অলোক কুমার চক্রবর্তীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া হাবিবুল বাশার (৩৮) নামে ওই এজেন্টকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাশার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুর রহমান ভূঁইয়ার এজেন্ট ছিলেন। মনিয়ন্দ উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. ইফতেখার রসুল সিদ্দিক জানান, ওই এজেন্ট কেন্দ্রে বসে মোবাইলে কথা বলছিলেন। তার কাছ থেকে মোবাইল নিতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। পরে তার কাছ থেকে আরও একটি মোবাইল ফোন এবং সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অলোক কুমার চক্রবর্তীর নাম লেখা একটি খাম উদ্ধার করা হয়। খামে ১৭ হাজার টাকা ছিল। এরপর বাশারকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তোলা হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার জানান, টাকার খাম উদ্ধারের ঘটনায় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে কেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করে এজেন্টকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বানিয়াচংয়ে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৫
বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল দুপুরে ভোটগ্রহণকালে উপজেলার খাগাউড়া ইউনিয়নের গুণই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিক লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি শান্ত করে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহ শওকত আরেফিন সেলিম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ কোরাইশী মক্কির সমর্থকদের মধ্যে দুপুরে ওই কেন্দ্রে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার হরিপদ ব্রহ্ম জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছিল। কিন্তু হঠাৎ দুই প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তবে এতে ভোটগ্রহণের কোনো ক্ষতি হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
কেন্দ্রের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই কর্মীকে ছুরিকাঘাত
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসলাম উদ্দিন বিশ্বাসের দুই কর্মীকে ছুরিকাঘাতে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। আহতরা হলেন- আলুকদিয়া ইউনিয়নের জোড়াঘাটা গ্রামের হুসুকপাড়ার আব্দুস সাত্তারের দুই ছেলে রাজু আহমেদ ওরফে রাজিব (২৮) ও রাসেল (২৩)। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আলুকদিয়া ইউনিয়নের জোড়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহতরা বলেন, বেলা ১১টার দিকে জোড়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীর ভোট দিতে যাই। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের কর্মীরা আমাদের কুপিয়ে জখম করে। আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসলাম উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, আমার দুই কর্মীকে কুপিয়েছে বলে শুনেছি। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, তাদের দু’জনের শরীরের বিভিন্নস্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। তবে তারা এখন শঙ্কামুক্ত। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, জোড়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইসলাম উদ্দিন বিশ্বাস ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই ভাই আহত হয়েছে বলে শুনেছি। বিশৃঙ্খল এড়াতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
শিবচরে জালভোট দেয়ার অভিযোগে ৬ মাসের জেল
শিবচর (মাদারীপপুর) প্রতিনিধি জানান, চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে জালভোটের অভিযোগে মাদারীপুরের শিবচরের একটি কেন্দ্র থেকে একজনকে আটক করে ৬ মাসের জেল দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আরেকটি কেন্দ্র থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে। জানা যায়, ভোটগ্রহণ চলাকালীন দুপুরে ভদ্রাসন ইউনিয়নের ৫নং কেন্দ্রে জালভোট দেয়ার চেষ্টা করলে শাহীন (১৮) নামের এক যুবককে প্রিজাইডিং অফিসার আটক করে। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আটককৃতকে ৬ মাসের জেল প্রদান করেন। অপরদিকে একইদিন দুপুরে সন্নাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর মোল্লাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হৃদয় (১৮) নামের এক যুবক জালভোট দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে আটক করে। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কেন্দ্রগুলোতে র্যাব, বিজিবি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। সকাল থেকেই ভোটারদের উপস্থিতি সন্তোষজনক। জালভোট দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে একটি কেন্দ্র থেকে একজনকে আটক করে ৬ মাসের সাজা দেয়া হয়েছে। অপর একটি কেন্দ্র থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে।
চৌদ্দগ্রামে কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কেন্দ্র দখল করে ভোট দেয়ায় দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ধনিজকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দুপুর পৌনে ১২টায় ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বারপ্রার্থী মো. ফিরোজের (মুরগি) সমর্থকরা কেন্দ্রের ২নং বুথ দখল করে সিল মারতে থাকে। এ সময় অন্য প্রার্থী আমান উল্লাহর (তালা) সমর্থকরা প্রতিবাদ করলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিপুল পরিমাণ ককটেল বিস্ফোরণ এবং ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়। এতে এক পুলিশ সদস্যসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় কেন্দ্রে দায়িত্ব থাকা প্রিজাইডিং অফিসার তাৎক্ষণিক ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেন।
হাতীবান্ধায় দুই প্রিজাইডিং অফিসার প্রত্যাহার
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের লুৎফুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মধ্য গড্ডিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাহী অফিসার সামিউল আমিন প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা হলেন, লুৎফুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি সরকারি আলিমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক। অপরজন মধ্য গড্ডিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শফিকুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক হাতীবান্ধায় শাখার দোয়ানী দায়িত্বে রয়েছেন। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাইফুর রহমান তাদের প্রত্যাহার করেন। এ সময় উক্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার রুকনন্ধ রায়কে (ভারপ্রাপ্ত) প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply