স্টাফ রিপোর্টার ::
তালাবদ্ধ ফার্মেসি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রবাসীর স্ত্রীর ৬ খন্ড লাশ। হাত, পা, মাথা, ধড়- সব আলাদা। এতো নৃশংস খুন আর বিভৎস দৃশ্য আগে দেখা হয়নি বলে মন্তব্য জগন্নাথপুরের মানুষের।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরশহরের মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটের ‘অভি মেডিকেল হল’ নামের ফার্মেসি থেকে তালা ভেঙে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শাহনাজ পারভিন জোস্না (৩৫) নামের তিন সন্তানের জননীর ছয় খণ্ড লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগের দিন (বুধবার) বিকেল থেকে ওই গৃহবধূ নিখোঁজ ছিলেন। তিনি সুরুক মিয়া নামের এক সৌদি আরব প্রবাসীর স্ত্রী। তিনি সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে জগন্নাথপুর পৌরসভার পিছনের আবাসিক এলাকার একটি দুতলা (নিজস্ব) বাসায় বসবাস করে আসছেন।
নিহত শাহনাজ পারভিনের ছেলে উদয় জানান, গতকাল (বুধবার) সকালে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেন্দ্র গোপ তাদের বাসায় গিয়ে পারভিনের ব্লাড প্রেশার মাপেন। পরে তিনি পারভিনকে দোকানে যাওয়ার কথা বলে চলে যান। বিকেলে ঔষুধ আনার উদ্দেশে পারভিন ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। রাতে উদয় তার মায়ের মোবাইল ফোনে কল দিলেও কেউ রিসিভি করেননি। বিষয়টি উদয় থানাপুলিশকে জানান। পরে বৃহস্পতিবার পুলিশ জিতেন্দ্র গোপের ফার্মেসি থেকে পারভিনের খন্ড-বিখন্ড লাশ উদ্ধার করে।
খুন হওয়া পারভিনের স্বামী সুরুক মিয়ার বাড়ি উপজেলার নারিকেল তলা গ্রামে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অভি মেডিকেলের তালা ভেঙে প্রবেশ করলে দেখতে পাওয়া যায়, মহিলার দেহটি ছয় খণ্ড করা। দুই হাত ও পা আলাদা করে কাটা, মাথা এক খণ্ড, কোমর থেকে বুক পর্যন্ত আরেক খণ্ড। পরনে কোনো কাপড় ছিলো না।
পারভিন নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেন্দ্র তার পরিবার নিয়ে জগন্নাথপুর থেকে পালিয়ে গেছেন বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে, নিহতের ভাই হেলাল মিয়া বলেন, বুধবার বেলা ৩টার দিকে আমার বোনকে অভি মেডিকেলের মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ অভি ফোন করে তার ফার্মেসিতে নিয়ে যান। এরপর আমার বোন আর বাসায় ফেরেনি। রাতে খোঁজাখুঁজির পর অভির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার বোনকে ফিরিয়ে দেবেন বলে বৃহস্পতিবার সকালে পৌরশহরের একটি বাজারে যেতে বলেন।
সকালে বাজারে গিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার পর অভিকে ফোন দেই, কিন্তু ফোন বন্ধ পাই। পরে পুলিশ নিয়ে তার বাসায় গিয়ে দেখি বাসার দরজায় তালা লাগানো। তখন আমাদের সন্দেহ হয়। দুপুরে বাজারে তার ফার্মেসিতে গিয়ে তালা ভেঙে আমার বোনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জিতেন্দ্র গোপ কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সইলা গ্রামের যাদব গোপের ছেলে। ৯ বছর জগন্নাথপুর বাজারের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে চাকরির পর গত এক বছর ধরে জগন্নাথপুর পৌরশহরের মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটে অভি মেডিকেল হল নামে একটি ফার্মেসি খুলে নিজে ব্যবসা শুরু করেন।
জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ওই মহিলার খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে এবং মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
Leave a Reply