শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৯ অপরাহ্ন
সানোয়ার হাসান সুনু : সিলেটের দীর্ঘতম জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন কুশিয়ারা নদীর উপর নির্মিত রানীগঞ্জ সেতু খুব শীঘ্রই উদ্বোধন হচ্ছে। চলতি অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতুটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করবেন।সোমবার সিলেট ভিউ কে সুনামগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তবে সেতুটির টিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইন্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার হারুন উর রশীদ জানান, ২৯ অক্টোবর সেতুটির উদ্বোধন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে। তবে তিনি বলেন, ইতি মধ্যেই সেতুটির কাজ শত ভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে ধারনা করা হচ্ছে সেতুটির উদ্যোগক্তা স্হানীয় এমপি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বিদেশে থাকায় ওই তারিখে উদ্বোধন করা যাচ্ছে না। তিনি দেশে ফিরলেই পরবর্তী তারিখে সেতুটির উদ্বোধন করা হবে।
প্রধান মন্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে যাবে জেলার দক্ষিণের দুয়ার। ইতোমধ্যে সৌন্দর্যবর্ধন ও ল্যাম্পপোস্টের কাজ সহ সেতুটির শত ভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কাজ শুরুর দির্ঘ প্রায় ৬ বছর পর
বহুল প্রত্যাশিত দৃষ্টিনন্দন রানীগঞ্জ সেতুটি দৃশ্যমান হওয়ায় স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এতে জগন্নাথপুর উপজেলা সহ পুরো সুনামগঞ্জ জেলার অর্থনীতির এক বিরাট সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই।
জানা গেছে,সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ- আউশকান্দি- ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রানীগঞ্জ বাজার ও পাইলগাঁও গ্রামের মধ্যবর্তী কুশিয়ারা নদীর ওপর ৭০২.৩২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.২৫ মিটার প্রস্থ অর্থাৎ প্রায় পৌনে ১মাইল লম্বা ও ৩৩. ৬ ফুট প্রস্হের সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে প্রায় ৬ বছর। সেতুটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০১৭ইং সনের ১৪ই জানুয়ারি। এদিন যৌথ ভাবে সেতুটির কাজের ভিক্তি প্রস্হর স্হাপন করেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম ও মান্নান।
প্রথম দিকে সেতুটির নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২৬ কোটি টাকা পরে দুই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ৩টি কালভার্ট ও ১টিছোট ব্রীজ মিলিয়ে খরচ বৃদ্ধি পেয়ে দাড়াঁয় ১৫৫ কোটি টাকা।
এর আগে স্হানীয় সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নানের উদ্যোগে এই সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাব ২০১৪ সালের ২৪ জুন একনেকে পাস হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও উপজেলার সচেতন মহল জানান, জগন্নাথপুর বাসীর স্বপ্নের কুশিয়ারা সেতুর ওপর দিয়ে পরিবহণ যাতায়াত শুরু হলে প্রান্তিক জেলা সুনামগঞ্জের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সাথে দূরত্ব কমবে প্রায় ৫২ কিলোমিটার। এতে সময় বাচঁবে প্রায় দুই ঘন্টা। এর ফলে ধানের দেশ, মাছের দেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সুনামগঞ্জ জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূর্তপূর্ব উন্নয়ন হবে ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নবদীগন্তের সূচনা হবে। পাল্টে যাবে সুনামগঞ্জ জেলার চিত্র। সেতুটিকে কেন্দ্র করে সিলেট বিভাগের উপযুক্ত স্থান রানীগঞ্জ এলাকায় ইকনোমিক জোনের স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুশিয়ারা সেতুটি সিলেট বিভাগের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। নির্মিত সেতুটি পিসি গার্ডার ও বক্স গার্ডারের সমন্বয়ে তৈরি। ১৫টি স্পানের এই সেতুতে এ্যাপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটার।
সেতুটির নির্মান কাজের শুরু থেকে সুপারভিশনের দ্বায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রথম ঢেউ এলে সেতু নির্মাণে জড়িত চায়না ‘সিআর ২৪বি‘ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের বিশেষজ্ঞদের না পাঠানোয় সে সময় থমকে ছিল কাজ। অবশেষে দ্রুত কাজ শেষ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পদ্মা ও মেঘনা-গোমতি নদীতে সেতু নির্মাণে যুক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কাজ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়।
তিনি জানান, টিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স ও চিনের টিকাদারী প্রতিষ্ঠান সি আর ২৪ যৌথ ভাবে সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুনামঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক জগন্নাথপুুর নিউজ ডটকমকে কে জানান, সুনামগঞ্জ- জগন্নাথপুর- রানীগঞ্জ- আউশকান্দি- ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কে সংযোগ স্থাপনকারী রানীগঞ্জ সেতুটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চলতি অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ উদ্বোধন করবেন। এসময় সুনামগঞ্জ জেলার আরো ১৭টি ছোট-বড় সেতু‘সহ দেশের বিভিন এলাকার ১০০টি সেতু উদ্বোধন হবে। তিনি জানান, রানীগঞ্জ সেতু বৃহত্তর সিলেট বিভাগের বৃহত্তম সেতু। এই সেতু দিয়ে সুনামগঞ্জবাসীর রাজধানীতে যাতায়াতে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। এতে সময় বাচঁবে প্রায় দুই ঘন্টা।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জগন্নাথপুুর নিউজ ডটকমকে কে বলেন, জগন্নাথপুর তথা সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ও লালিত স্বপ্ন ছিল রানীগঞ্জ সেতু। এলাকাবাসীর দাবী পূরন করতে পেরে আমার প্রিয় এলাকাবাসীর সাথে আমিও খুবই আনন্দিত।
সিলেট বিভাগের বৃহত্তম এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার আর্থ- সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার ফলেই সিলেট বিভাগের বৃহৎ এই সেতুটি নির্মান করা সম্ভব হয়েছে। এর জন্য তিনি প্রধান মন্ত্রী কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বলেন,আমাদের এলাকার এমপি মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ বৃহৎ দৃষ্টি নন্দন সেতুটি করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য আমি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
Leave a Reply