শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ অপরাহ্ন
সানোয়ার হাসান সুনু ::
আজ ২ নভেম্বর বুধবার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্যনীয়।
জগন্নাথপুর পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্র টিএন্ডটি রোড, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও উপজেলার বাজার এলাকা সহ প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোস্টার শোভা পাচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে ৫ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, ( মোটর সাইকেল) আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আকমল হোসেন, ( নৌকা) বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আ,লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তাদির আহমদ মুক্তা, ( আনারস) জমিয়ত মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ তালহা আলম (খেজুরগাছ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্বাস উদ্দিন (ঘোড়া) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
তবে এবারের হিসাব একটু ভিন্ন। চারজন আলোচনায় রয়েছেন কিন্তু কে হচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এই নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।
নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ঘরনার দুই প্রার্থী আকমল হোসেন ও মুক্তাদির আহমদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি ঘরনার লোক হিসাবে পরিচিত আতাউর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি রয়েছেন সুবিধাজনক অবস্হানে।
তবে জমিয়তে উলামায়ের সৈয়দ তালহা আলম কোমর বেঁধে মাঠে রয়েছেন।
জানা যায়, স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের দুটি বলয় রয়েছে। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আকমল হোসেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সমর্থিত সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি সিদ্দিক আহমদ বলয়ের।
অন্যদিকে, মুক্তাদির আহমদ মুক্তা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ তনয় আজিজুস সামাদ ডন সমর্থিত বলয়ের হিসেবে ভোটারদের নিকট পরিচিত।
এদিকে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের
নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন লক্ষ্যনীয় ।
তবে সচেতন ভোটারদের মতে, সমগ্র উপজেলাজুড়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একটি বিরাট ভোট ব্যাংক থাকায় শেষদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আকমল হোসেন মূল প্রতিদ্ধন্ধিতায় আসতে পারেন।
এদিকে, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমানের প্রতি সাধারন ভোটারদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া রয়েছে। এছাড়া তাঁর নিজ ইউনিয়ন সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নে রয়েছে আলাদা ভোট ব্যাংক।
অন্যদিকে, জমিয়ত মনোনীত নতুন তরুন প্রার্থী সৈয়দ তালহা আলমের জমিয়ত ও তার নিজ ইউনিয়ন মিরপুর ইউনিয়নে রয়েছে ব্যাপক সমর্থন। জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতা সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর- দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী সৈয়দ তালহার পক্ষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন।
অপরদিকে, জগন্নাথপুর পৌর এলাকা, হলদিপুর ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তাদির আহমদ মুক্তার রয়েছে আঞ্চলিক ভোট ব্যাংক। তিনি প্রতিযোগিতায় চমক দেখাতে পারেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন। বিগত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে তিনি জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত হন।
তবে সব মিলেয়ে এবার উপজেলা নির্বাচনে চর্তুমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকলেও শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রতীক প্রার্থী আকমল হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ার ম্যান মোটর সাইকেল প্রতিকের আতাউর রহমানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এমনটা দাবি করছেন সচেতন ভোটাররা।
উপজেলা নির্বাচনে এবার ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন । তন্মধ্যে সাবেক উপজেলা ছাত্রদল নেতা আব্দুল মতিন লাকি (টিয়া পাখি)
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দ্বীপ সূত্রধর বীরেন্দ্র (তালা),
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল হোসেন লালন (মাইক), সালেহ আহমদ (চশমা), সৈয়দ তুহেল মিয়া (টিউবওয়েল)।
তাঁদের মধ্যে জয়দ্বীপ সূত্রধর বীরেন্দ্র, আব্দুল মতিন লাকি ও আবুল হোসেন লালনের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন ভোটাররা।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন । তাঁদের মধ্যে সুফিয়া খানম সাথী (ফুটবল), রিনা বেগম (কলস) ও সেলিনা বেগম(হাঁস) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে রিনা বেগম ও সুফিয়া খানম সাথীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা মনে করছেন অনেকেই।
উল্লেখ্য , গত ২০ জুন উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা হলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ ২ নভেম্বর ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। এবার প্রথম উপজেলা নির্বাচনে এই উপজেলায় ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট নেয়া হবে।
উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৮৯টি। মোট ভোটার সংখ্যা ১লাখ ৮৯ হাজার ৩৯ জন।
পূরুষ ৯৫৩২৩ জন, মহিল ৯০৭১৬ জন।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকতা মুজিবুর রহমান জানান,
কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোট গ্রহন কর্মকতা মোতায়েন করা হয়েছে । ভোট গ্রহনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ ঘটিকা পর্যন্ত ভোট গ্রহন চলবে।
Leave a Reply