শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪২ অপরাহ্ন
সানোয়ার হাসান সুনু ::
সিলেটের দীর্ঘতম জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন কুশিয়ারা নদীর উপর নির্মিত রানীগঞ্জ সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সাজেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আকমল হোসেন,সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু, ওসি মিজানুর রহমান,উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার- পরিকল্পনা কর্মকতা ডাঃ মধুসূদন ধর, উপজেলা বিদ্যুৎ প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, প্যানেল মেয়র সাফরোজ ইসলাম, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছদরুল ইসলাম, আলীগ নেতা সুন্দর আলী
জগন্নাথপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শংকর রায়,যুবলীগ সভাপতি কামাল হোসেন ও উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল মুকিত প্রমুখ।
সভায় বক্তাগন, দৃষ্টি নন্দন এ সেতু নির্মান করায় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান কে ধন্যবাদ জানিয়ে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্টান সফল করার জন্যে সর্বস্তরের জনগনের উপস্হিতি কামনা করেন।
উপজেলা নির্বাাহী কর্মকতা সাজেদুল ইসলাম বলেন,এদিন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেটের বৃহৎ এ সেতুটির উদ্বোবধন করবেন।
সেতু সংলগ্ন হাইস্কুল মাঠের অনুষ্টানে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সহ সুনামগঞ্জের সকল এমপি উপস্হিত থাকবেন।
প্রধান মন্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে যাবে জেলার দক্ষিণের দুয়ার। ইতোমধ্যে সৌন্দর্যবর্ধন ও ল্যাম্পপোস্টের কাজ সহ সেতুটির শত ভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
কাজ শুরুর দির্ঘ প্রায় ৬ বছর পর বহুল প্রত্যাশিত দৃষ্টিনন্দন রানীগঞ্জ সেতুটি দৃশ্যমান হওয়ায় স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এতে জগন্নাথপুর উপজেলা সহ পুরো সুনামগঞ্জ জেলার অর্থনীতির এক বিরাট সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই।
জানা গেছে,সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ- আউশকান্দি- ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রানীগঞ্জ বাজার ও পাইলগাঁও গ্রামের মধ্যবর্তী কুশিয়ারা নদীর ওপর ৭০২.৩২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.২৫ মিটার প্রস্থ অর্থাৎ প্রায় পৌনে ১মাইল লম্বা ও ৩৩. ৬ ফুট প্রস্হের সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে প্রায় ৬ বছর। সেতুটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০১৭ইং সনের ১৪ই জানুয়ারি। এদিন যৌথ ভাবে সেতুটির কাজের ভিক্তি প্রস্হর স্হাপন করেন সড়ক- যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম ও মান্নান।
প্রথম দিকে সেতুটির নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২৬ কোটি টাকা পরে দুই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ৩টি কালভার্ট ও ১টিছোট ব্রীজ মিলিয়ে খরচ বৃদ্ধি পেয়ে দাড়াঁয় ১৫৫ কোটি টাকা।
এর আগে স্হানীয় সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নানের উদ্যোগে এই সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাব ২০১৪ সালের ২৪ জুন একনেকে পাস হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও উপজেলার সচেতন মহল জানান, জগন্নাথপুর বাসীর স্বপ্নের কুশিয়ারা সেতুর ওপর দিয়ে পরিবহণ যাতায়াত শুরু হলে প্রান্তিক জেলা সুনামগঞ্জের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সাথে দূরত্ব কমবে প্রায় ৫২ কিলোমিটার। এতে সময় বাচঁবে প্রায় দুই ঘন্টা। এর ফলে ধানের দেশ, মাছের দেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সুনামগঞ্জ জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূর্তপূর্ব উন্নয়ন হবে ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নবদীগন্তের সূচনা হবে। পাল্টে যাবে সুনামগঞ্জ জেলার চিত্র। সেতুটিকে কেন্দ্র করে সিলেট বিভাগের উপযুক্ত স্থান রানীগঞ্জ এলাকায় ইকনোমিক জোনের স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুশিয়ারা সেতুটি সিলেট বিভাগের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। নির্মিত সেতুটি পিসি গার্ডার ও বক্স গার্ডারের সমন্বয়ে তৈরি। ১৫টি স্পানের এই সেতুতে এ্যাপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটার।
সেতুটির নির্মান কাজের শুরু থেকে সুপারভিশনের দ্বায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রথম ঢেউ এলে সেতু নির্মাণে জড়িত চায়না ‘সিআর ২৪বি‘ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের বিশেষজ্ঞদের না পাঠানোয় সে সময় থমকে ছিল কাজ। অবশেষে দ্রুত কাজ শেষ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পদ্মা ও মেঘনা-গোমতি নদীতে সেতু নির্মাণে যুক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কাজ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়।
তিনি জানান, টিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স ও চিনের টিকাদারী প্রতিষ্ঠান সি আর ২৪ যৌথ ভাবে সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স এন্ড ইন্জিনিয়ার্স এর ম্যানেজার মোঃ হারুন অর রশীদ বলেন, করুনাভাইরাসজনিত কারনে সেতুটির নির্মানে কিছুটা বিলম্ব হলেও আল্লাহর রহমতে আমরা নিরাপদে সেতুটির কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি জানান, রানীগঞ্জ সেতু বৃহত্তর সিলেট বিভাগের বৃহত্তম সেতু। এই সেতু দিয়ে সুনামগঞ্জবাসীর রাজধানীতে যাতায়াতে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। এতে সময় বাচঁবে প্রায় দুই ঘন্টা।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, জগন্নাথপুর তথা সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ও লালিত স্বপ্ন ছিল রানীগঞ্জ সেতু। এলাকাবাসীর দাবী পূরন করতে পেরে আমার প্রিয় এলাকাবাসীর সাথে আমিও খুবই আনন্দিত।
সিলেট বিভাগের বৃহত্তম এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার আর্থ- সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার ফলেই সিলেট বিভাগের বৃহৎ এই সেতুটি নির্মান করা সম্ভব হয়েছে। এর জন্য তিনি প্রধান মন্ত্রী কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
Leave a Reply