শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: আজ ১৫ ডিসেম্বর। সিলেট মুক্ত দিবস। এদিন মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করেছিলেন সিলেটের মুক্তিকামী মানুষ। ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে সেদিন মুখর ছিল সিলেটের অলিগলি। স্বাধীনতার লক্ষ্যে সারা দেশের মতো সিলেটও ছিল ঐক্যবদ্ধ, অবিচল। পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর বর্বরতা প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করেছে সিলেটের মানুষ।
৬ ডিসেম্বর সিলেট শহরে প্রচণ্ড বোমা হামলা শুরু হয়। এই হামলা ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। চারদিকে, জ্বলছিল আগুনের লেলিহান শিখা। বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল আলী আমজাদের ঘড়ি। কিন ব্রিজ হয়েছিল দ্বিখণ্ডিত। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল বিভিন্ন নির্মাণ, আবাসভূমি।
১৩ ডিসেম্বর দুপুরে মুক্তিবাহিনীর একটি দল খাদিমনগর এলাকায় এসে অবস্থান নেয়। একই দিন মুক্তিযোদ্ধাদের আরো কয়েকটি দল দক্ষিণ জালালপুর ও পশ্চিম লামাকাজি এলাকায় আসে। তখন ফাঁকা ছিল শুধু উত্তর দিক। কিন্তু সেদিকে সীমান্তবর্তী পাহাড়, বনাঞ্চল থাকায় হানাদারদের পালাবার কোনো পথ ছিল না। তারপর হঠাৎ একদিন নাম না জানা দু’জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা খাদিমনগর থেকে একটি গাড়িতে চড়ে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের জন্য বেশ কয়েকঘণ্টা শহরে মাইকিং করতে থাকেন। তাদের সেই মাইকিংয়ের মধ্যদিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনে নতুন করে সাহসের সঞ্চার হয়। তখন সিলেট শহর ছিল পুরোদমে উত্তপ্ত।
এদিকে, মাইকিং করতে করতে সাহসী মুক্তিযোদ্ধা দু’জন ক্রমান্বয়ে শহরের দিকে আসেন। পথে পথে, বাসাবাড়ি, দোকানপাটে থাকা উদ্বিগ্ন মানুষ তাদের কণ্ঠের ধ্বনি শুনে আবেগ আপ্লুত হয়েছিলেন। বাহ, বাহ দিচ্ছিলেন সবাই। যে গাড়িতে মাইকিং চলছিল সেই গাড়ির পেছনে আরেকটি গাড়িতে করে শহরের দিকে আসছিলেন মুক্তিযুদ্ধে উত্তরাঞ্চলের (১) বেসামরিক উপদেষ্টা, তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজী ও মিত্রবাহিনীর অধিনায়ক কর্নেল বাগচী। শহরের লোকজন অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে তাদের যাত্রা দেখছিলেন। তখন হানাদারদের অবস্থান ছিল সিলেট সরকারি কলেজের আশপাশে। তারাও শক্ত অবস্থানের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
ক্রমান্বয়ে তারা সংগঠিত হয়ে জন্য শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু মাইকিং করার পর শত্রুরা আত্মসমর্পণের বিষয়টিকে উড়িয়ে দেয়। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদিমনগরের দিকে ফিরে যেতে হয়। ওইদিন কদমতলী এলাকায় ঘটে আরেক ঘটনা। একটি ইটখোলায় থেকে যাওয়া ২১ জন পাকিস্তানি সেনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ৩৫ জনের মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর একটি দল।
সেদিনের অপারেশনে নেতৃত্ব দেন রানা সিং নামে এক ভারতীয় সুবেদার। প্রায় ৯ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধের পর নিরুপায় হয়ে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয়। এরপর শুরু হয় আরেকটি অধ্যায়। মাছিমপুর থেকে নিক্ষিপ্ত একটি শক্তিশালী মর্টার এসে আঘাত করে সুবেদার রানাকে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিহত হন। আহত হন মিত্রবাহিনীর আরো দুই সদস্য। তবে তাদের নাম সেদিন জানা ছিল না কারো।
পরে ১৪ ডিসেম্বর সরকারি কলেজের আশপাশ থেকে শত্রুরা তাদের অবস্থান তুলে নেয়। ওইদিন দুপুরে দেওয়ান ফরিদ গাজী ও কর্নেল বাগচী বিনা প্রতিরোধে শুধু শহরেই নন; বিমানবন্দরের পাশে গড়ে ওঠা শত্রুদের মূল ঘাঁটির কাছাকাছি পর্যন্ত ঘুরে আসেন। ইতোমধ্যে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে ‘জেড’ ফোর্সের সেনারা সিলেট এমসি কলেজ সংলগ্ন আলুরতলে সরকারি দুগ্ধ খামারের কাছে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়। তখন পাকিস্তানি সৈন্যরা সবদিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ওইদিন সন্ধ্যায় চারদিক থেকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর জওয়ানরা দলবদ্ধভাবে এবং স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে সিলেট শহর। পাড়ামহল্লা, অলিগলি প্রকম্পিত হয়ে ওঠে তাদের পদধ্বনিতে। জয় বাংলা জয় বাংলা স্লোগানে সরে যায় রাজাকার-আলবদরদের পায়ের তলার মাটি। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা রাতেই গা-ঢাকা দিতে শুরু করে।
পরদিন ১৫ ডিসেম্বর সকালে সব বয়সী মুক্তিপাগল মানুষের ঢল নামে শহরে। তাদেরকে ঘিরে ভিড় জমে পথে পথে। ঘড়িতে তখনো ১২টা হয়নি। শহরবাসী মাইকের মাধ্যমে গোটা সিলেটে প্রচার করতে থাকেন ‘সিলেট হানাদারমুক্ত সিলেট হানাদারমুক্ত’। সেই থেকে ১৫ ডিসেম্বর ‘সিলেট মুক্ত দিবস’ পালিত হয়ে আসছে।
সিলেটের মুক্তিযোদ্ধাদের কথা
১৯৫০ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে তিনি চাকরি জীবনের মূল্যবান সময়টুকু কাটান। ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির ওপর যখন পাকবাহিনী অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন দেশপ্রেমিক আব্দুল মালিক সেনাবাহিনীর ব্যারাক থেকে পালিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তার এই অসামান্য অবদানের জন্য সরকার ১৭৫জন মুক্তিযোদ্ধার সাথে তাকেও বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করে। ১৭৫জন বীর বিক্রম ছাড়াও সেসময় সরকার ৭জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীরশ্রেষ্ঠ, ৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীরউত্তম ও ৪২৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করে বলে সূত্র জানায়। সুবেদার (অব.) আব্দুল মালিক সিলেট বিভাগের ১৩জনের মধ্যে ১জন এবং বিশ্বনাথ উপজেলার একমাত্র বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সরকারি প্রকাশিত গেজেটে ২জন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও মুন্সি আব্দুর রবের সাথে যে ১২জন বীরবিক্রমের নাম ছাপা হয় তাতেও আব্দুল মালিকের নাম ছিল। পরবর্তীতে ৩৭৬জন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার যে তালিকা প্রকাশিত হয় তাতে বীরবিক্রম সুবেদার (অব.) আব্দুল মালিকের নাম ছিল ৩৭ নম্বরে। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের একটি সড়কের পাশে যে কয়েকজন বীরবিক্রম খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধার নাম পাথরে খোদাই করে লেখা রয়েছে তাতেও সুবেদার (অব.) আব্দুল মালিকের নাম রয়েছে। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালের ডিসেম্বর বিশ্বনাথের একমাত্র বীরবিক্রম সুবেদার (অব.) আব্দুল মালেকের সম্মানে তার নামে বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে একটি অত্যাধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়। কয়েকবছর পঙ্গু অবস্থায় দিনযাপনের পর ২০১১ সালের ২৫ মে তিনি ইন্তেকাল করেন।
বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত সিরাজুল ইসলাম বিশ্বনাথের দেওকলস ইউনিয়নের আগ্নপাড়া গ্রামে ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম আলফু মিয়া শিকদার ও মাতা মোছা. মরহুমা ছবরুন নেছা। সিরাজুল ইসলাম দেওকলস প্রাইমারি স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। বিশ্বনাথ রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে এসএসসি, মৌলভীবাজার কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি এবং সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে সিলেট ল’কলেজে ভর্তি হন। সিরাজুল ইসলাম তত্কালীন সময়ে ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ছাড়াও ১১ দফা ও ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬৯-৭০ শিক্ষাবর্ষে এমসি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি এবং সিলেট ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে যখন বর্বর পাকবাহিনী বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে তখন বাংলার এই বীর পুরুষ সিরাজুল ইসলাম পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন মরণ সংগ্রামে লিপ্ত হন। স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোভাগে থেকে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাব প্রদান করে।
মুজিবুর রাহমানের জবানিতে মুক্তিযুদ্ধ
গণ-বিক্ষোভে স্বোচ্চার ছিল সিলেট অঞ্চলের মানুষ। একাত্তরের সূচনা মাস জানুয়ারি এবং ভাষা আন্দোলনের ফেব্রুয়ারি মাসে সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জিত জাতীয় ঐক্য সর্বক্ষেত্রে মজবুত করার প্রয়াস চলে। মার্চের প্রথমদিন জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসার সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো স্থগিত করার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের সরকার গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া হোঁচট খায়। জাতীয় পরিষদের ঢাকা অধিবেশনের আদেশ স্থগিত হওয়ার সাথে সাথেই সিলেট অঞ্চলের মানুষ গণ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
সিলেটের আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ সবাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংসদের অধিবেশন ডেকে জনগণের নির্বাচিত দল আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধুকে সরকার গঠন করাসহ গণরায় বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। যারা এ আন্দোলনে অংশ নেন তাদের মধ্যে ছিলেন সিলেটের আওয়ামীলীগের তত্কালীন সভাপতি অ্যাডভোকেট মরহুম হবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজী, যুবলীগ নেতা মরহুম ডা. নুরুল ইসলাম চঞ্চল, মরহুম এনামুল হক, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মরহুম আখতার আহমদ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে মরহুম এনামুল হক চৌধুরী, শাহ আজিজুর রহমান, সদরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী, কলন্দর আলী, মরহুম সজ্জাদুর রহমান, মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, সুয়েব আহমদ চৌধুরী, রফিকুল হক, ফাহিম আহমদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সিদ্দিক আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল মোক্তাদিরসহ আরো অনেকে। তত্কালীন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সক্রিয় অংশগ্রহণে শহর ও জেলার সর্বত্র সভা সমাবেশ মিছিল মিটিং চালিয়ে যেতে থাকি আমরা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামীলীগ ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক গণজমায়েতের আহ্বান করে। সিলেটসহ সারাদেশ থেকেই আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগসহ সাধারণ মানুষ সভায় যোগদান করেন।
এরপর ২৫ মার্চ। দিনভর সিলেটে উত্তেজনা। চারদিকে থমথমে পরিস্থিতি। কখন কি হয়। বিকেল ৪টার দিকে সিলেট শহরে বড় একটি মিছিল বের করা হয়। সেই মিছিলে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন স্বেচ্চাসেবকলীগ নেতা আক্তার আহমদ। তার নেতৃত্বে এনামুল হক চৌধুরী, সুয়েব আহমদ চৌধুরী, সজ্জাদুর রহমান, তরিক উল্লাহ, আব্দুল মুক্তাদিরসহ অনেকেই ছিলেন। সন্ধ্যায় পাকিস্তানি আর্মি মুভমেন্ট শুরু হয়ে যায়। টিলাগড় পয়েন্টে মকসুদ ইবনে লামা, সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ব্যারিকেড দেন। আমি, তরিকুল্লাহ, সজ্জাদুর রহমান, মুক্তাদিরসহ আরো কয়েকজন এমসি কলেজ হোস্টেলের নিকট ইট দিয়ে ব্যারিকেড দিই। পরে ঈদগাহের কাছে একটি লোহার পুল ছিল সেখানে গাছের ডালপালা দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে হাজারীবাগের দিকে আত্মগোপনে চলে যাই। শহরে ভয়ানক পরিস্থিতি। উত্তেজনা, আতঙ্ক শহরকে যেন গ্রাস করেছে। রাস্থাঘাট প্রায় জনশূন্য। সবাই রেডিও শোনা নিয়ে ব্যস্ত। রাত ১১টার দিকে কারফিউ জারি হলো। ২৮ মার্চ পর্যন্ত কারফিউ। গোপনে মুক্তিপাগল মানুষ সংগঠিত হচ্ছিলেন। ২৮ মার্চ কারফিউ উঠে গেলে আমি, ডা. নূরুল ইসলাম চঞ্চল ও আক্তার আহমদ দেওয়ান ফরিদ গাজীর দক্ষিণ সুরমার তরিকুল্লার বাড়িতে গিয়ে উঠেন। এরপর বাগবাড়িতে তত্কালীন ইপিআর বাহিনীর কয়েকজন বাঙালি বিদ্রোহী চলে আসেন দক্ষিণ সুরমায়। রাতে তেলিরই এলাকা থেকে পাকিস্তানিদের প্রতিহত করার প্রস্তুতি নেন। এ সময় আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও সাধারণ মানুষ এসব বিদ্রোহীদের হাততালি দিয়ে তাদের সাহস ও উৎসাহ জোগায়। একপর্যায়ে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। মুক্তিযোদ্ধা ইপিআর জোয়ানদের গুলি ফুরিয়ে গেলে সবাই চুপচাপ থাকে।
পরদিন ক্যাপ্টেন আজিজ গাজীপুর থেকে এলে আবার মুক্তিপাগলরা সংগঠিত হন। এখানে কয়েকদিন প্রতিরোধের পর কেউ চলে যান ভারতের ধর্মনগর কেউ ত্রিপুরা। আমি চলে যাই কৈলাশ শহর। সেখানে গিয়ে দেখা হয় সৈয়দ মহসীন আলী (মরহুম সমাজ কল্যাণমন্ত্রী) গিয়াস উদ্দিন, মছব্বিরসহ অনেকের সাথে। আমরা সবাই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি থেকে হানাদার বাহিনীকে তাড়িয়ে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে।
Leave a Reply