রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
শান্তিগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দৈনিক ভোরের চেতনার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন  জগন্নাথপুরে স্কুল শিক্ষার্থীর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা নতুন ইসি শপথ নেবেন রোববার দীর্ঘ ১৩ বছর পরে বিশিষ্ট কলামিস্ট, লেখক ও সাংবাদিক সায়েক এম রহমান এর বাংলাদেশে আগমন সুনামগঞ্জ-৩ আসনে সৈয়দ তালহা আলমকে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা  জগন্নাথপুরে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর; সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা জগন্নাথপুরে যুক্তরাজ্যের এএন টিভি’র পরিচালকের সঙ্গে মতবিনিময় সভা একযুগ পর সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও মজলিশে শূরা গঠন সুনামগঞ্জ- ৩ আসন; মনোনয়নের ব্যাপারে দৃড়ভাবে আশাবাদী: একান্ত সাক্ষাত কারে বিএনপি নেতা কয়ছর এম আহমদ

রনির ভয়ে বাড়িছাড়া ব্যবসায়ী রাশেদ

রনির ভয়ে বাড়িছাড়া ব্যবসায়ী রাশেদ

জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক::
থানায় অভিযোগের পর ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির কর্মকাণ্ড ও হুমকিতে প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন মার খাওয়া সেই ব্যবসায়ী রাশেদ মিয়া। স্বজনদের বাড়িতে বাড়িতে থাকছেন তিনি। সেই সঙ্গে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন তিনি।
এদিকে প্রাথমিক তদন্তে মারধরের সত্যতা পাওয়ার পর ব্যবসায়ীর দেয়া অভিযোগকে এজাহার ধরে মামলা নিয়েছে পুলিশ। আর এতে রনি ও নোমান চৌধুরী রাকিবসহ ৮-৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এ মামলায় পাওয়ামাত্রই গ্রেফতার করা হবে রনি ও সহযোগীদের। রনির একের পর এক অপকর্মে বিব্রত চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। বিষয়টিকে কেউ কেউ ব্যক্তিগত অপরাধ বলছেন, কেউ কেউ বলছেন- এটা জঘন্য ঘটনা। এতে ছাত্রলীগকে কলঙ্কিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ করেন নগরীর জিইসি মোড় এলাকার ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়া। এতে তিনি লেখেন, ২০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রনি অফিসে এসে তাকে ব্যাপক মারধর করেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনা ঘটলেও ভয়ে তিনি বিষয়টি প্রকাশ করেননি। এরই মধ্যে ১৩ এপ্রিল অপহরণ করে রনির অফিসে তুলে নিয়ে আরেক দফা মারধর করা হয় রাশেদকে। কেড়ে নেয়া হয় পাসপোর্টও। মারধরের ভিডিও ফুটেজ বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। রাতে ছাত্রলীগ তাকে পদ থেকে অব্যহতি দেয়। জানতে চাইলে রাশেদ মিয়া শুক্রবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, থানায় অভিযোগ করার পরপরই দুপুরে রনি কয়েকটি মোটরসাইকেলে লোকজন নিয়ে নগরীর সুগন্ধা এলাকায় আমার বাসায় হানা দেয়। ওই সময় আমি ও আমার স্ত্রী বাসায় ছিলাম না। তবে তারা বাসায় থাকা লোকজনকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসে। আমাকে বাসায় না পেয়ে সে আমার কোচিং সেন্টারে গিয়ে গালিগালাজ করে ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এছাড়া আমার মোবাইল ফোনে বেনামে বিভিন্নজন ফোন করে হুমকি দিচ্ছে।’ রাশেদ বলেন, আগে থেকেই ও আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিল। এসব ঘটনার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই রাতে (বৃহস্পতিবার) থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছি। তিনি বলেন, ‘অব্যাহত হুমকির মুখে বাসায় থাকতে পারছি না। কখনও এর বাসায় কখনও ওর বাসায় গিয়ে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থায়ও নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছি না। জানি না এ অবস্থায় আর কতদিন থাকতে হবে।’ রনি নিজেকে কোচিং সেন্টারটির ব্যবসায়িক অংশীদার বলে যে বিবৃতি দিয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন রাশেদ। তিনি বলেন, ‘সে (রনি) দুটি চেকের মাধ্যমে আমাকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা দেয়ার যে দাবি করেছে তা সত্য নয়। তার কাছে যদি ওই চেকের কোনো কপি থেকে থাকে, তাহলে দেখাতে বলুন। বিষয়টি তখন পরিষ্কার হয়ে যাবে। রনি বিভিন্ন সময় জোর করে আমার অফিসে ঢুকে চাঁদা চাইত। না দিলে গালিগালাজ ও মারধর করত।’
জিডি করার কথা যুগান্তরের কাছে স্বীকার করেন পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়া বৃহস্পতিবার চাঁদা দাবি ও মারধরের যে অভিযোগ দিয়েছেন, তা সেদিনই মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এতে প্রধান আসামি নুরুল আজিম রনি। এছাড়া নোমান নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। এ দু’জনের বাইরে অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জন মামলাটির আসামি। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা আসামিদের খুঁজছি। তাদের পাওয়ামাত্রই গ্রেফতার করা হবে।’
রনি চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার এসব অপকর্ম নিয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যুগান্তরকে বলেন, ‘ফেসবুক ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে রনিকে নিয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এটা নিন্দনীয়। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইনের মধ্যে থেকেই কাজ করতে হবে। তবে তার ব্যক্তিগত কোনো বিষয়কে রাজনীতি বা দলের সঙ্গে জড়িত করা ঠিক হবে না। সে কোনো অপরাধ করে থাকলে সংগঠনের সিনিয়র নেতারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন যুগান্তরকে বলেন, ‘রনির কাজটি সমর্থনযোগ্য নয়। এতে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি কিছুটা তো ক্ষুণ্ণ হয়েছেই। তবে কারও ব্যক্তিগত দায় সংগঠন নেবে না। অপরাধকে অপরাধ হিসেবে দেখতে হবে, এটাকে রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো ঠিক হবে না।’ নগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘সে (রনি) যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তার বিচার হবে আইনি প্রক্রিয়ায়। আবার তার বক্তব্য অনুযায়ী সে কোচিং সেন্টারের মালিকের কাছে টাকা পাবে। তার স্বার্থটাও দেখতে হবে। কেন তার টাকাটা ফেরত দেয়া হল না এটারও বিচার হতে হবে।’
২০১৩ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হলে তাতে সাধারণ সম্পাদক করা হয় নুরুল আজিম রনিকে। দায়িত্ব নিয়েই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রনি। জড়িয়ে পড়েন গ্রুপিংসহ নানা অপকর্মে। বিভিন্ন কলেজ ও পাড়া-মহল্লায় নিজের আলাদা গ্রুপ সৃষ্টি করলে চাঙ্গা হয়ে ওঠে নগর ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। বিশেষ করে নগরীর ঐতিহ্যবাহী দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ হয়ে ওঠে অশান্ত। এ দুই কলেজে রনির অনুগত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রতিপক্ষের দ্ব›দ্ব-সংঘাত নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়।
গত বছর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে অতিরিক্ত বেতন-ফি আদায়ের বিরুদ্ধে মাঠে নামে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বিষয়টিকে পুঁজি করে মাঠে নামেন রনিও। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বর্ধিত বেতন-ফি আদায়ের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ করেন। সেই সময় অনেকেই এ বিষয়ে রনির অতি আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেই প্রশ্নের জবাব মেলে ৩১ মার্চ নগরীর বিজ্ঞান কলেজে রনির নেতৃত্বে কলেজ অধ্যক্ষ জাহেদ খানের ওপর হামলার ঘটনায়।
জাহেদ খান জানান, বেতন-ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে রনি তার কাছে চাঁদা চেয়েছিলেন। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় রনি ও তার সহযোগীরা কলেজের অফিস কক্ষে তাকে মারধর করে। এ নিয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন জাহেদ খান। এ মামলার তদন্ত চলছে। ওই মারধরের ঘটনা ভিডিও সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন রনি। এর আগে ২০১৬ সালে হাটহাজারী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি ভোট কেন্দ্রে অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পর তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে জামিনে ছাড়া পান তিনি। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই বলছেন, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে রনির অব্যাহতির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগে রনি অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। সেই সঙ্গে কলঙ্কমুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com