বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৪ অপরাহ্ন
সানোয়ার হাসান সুনু ::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে মৌজাগুলোতে অতিরিক্ত সরকারি মুল্য নির্ধারন করায় ভূমি রেজিষ্ট্রেশনে স্থবিরতা বিরাজ করছে। অর্ধ শতাধিক মৌজায় বাস্তব মূল্যের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুন মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ সমস্ত মৌজায় বর্তমানে বেচা-কেনা হলেও অতিরিক্ত সরকারী ফি’র কারণে ভূমি রেজিষ্ট্রেশন করছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। এই অযৌক্তিক অত্যাধিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে ভূমি রেজিষ্ট্রেশনে স্থবিরতা বিরাজ করছেন। অন্য দিকে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ এ সমস্যা বিরাজ করলেও এ সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসছেন না। জানা যায়, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার বাড়ী জগন্নাথপুর মৌজায় বরন্ডী রকম ভূমি প্রতি শতক সরকারী মূল্য দেড় লাখ টাকা, প্রতি কেদারের মূল্য (৩০ শতকে এক কেদার) ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তবে বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে বরন্ডী রকম ভূমি প্রতি শতক ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা, প্রতি কেদার ভূমির বাজার মূল্য ১৫ লাখ টাকা এখানে ৩ গুন অতিরিক্ত মূল্য ধার্য্য করা হয়েছে। একই মৌজার আমন রকম ভূমি প্রতি শতক ৯৪১৯২ টাকা এ হিসাবে এক কেদার (৩০ শতকে এক কেদার) ২৮ লাখ ২৫ হাজার ৭শত ৬০ টাকা। এ মৌজার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি শতক ভূমি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখানে অতিরিক্ত মূল্য সরকারি ভাবে ২০ গুন বেশী ধার্য্য করা আছে। একই মৌজার বোরো জমি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেদার ৮০ হাজার থেকে ১লাখ টাকার মধ্যে। অথচ সরকারি মূল্য ধার্য্য করা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। এখানে সরকারি অতিরিক্ত মূল্য ধার্য্য করা হয়েছে প্রায় ৯ গুন।
এদিকে পৌর এলাকার হবিবপুর মৌজায় বর্তমানে আমন জমি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেদার ১ লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকায়। কিন্তু সরকারি মূল্য ধার্য্য করা হয়েছে ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৫শত ৮০ টাকা। এখানে প্রায় ১৮ গুন অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে। পৌর এলকার শাহপুর মৌজার আমন জমি প্রতি কেদার বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে ২ লাখের মধ্যে অথচ সরকারি মূল্য ধার্য্য আছে ২১ লাখ ১২ হাজার ৪০ টাকা। এদিকে ইকড়ছই মৌজার আউশ জমি বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা কেদার হিসাবে। এখানে সরকারি মূল্য ধার্য্য আছে ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৫শ ৮০ টাকা। জগন্নাথপুর মৌজার উত্তর দিকে প্রতি শতক ভূমি বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এ মৌজার সরকারি মূল্য ধার্য্য করা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। এখানে এ হিসাবে প্রতি কেদায় জায়গার মূল্য হচ্ছে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। উপজেলার শ্রীধরপাশা মৌজার প্রতি কেদার আমন জমি বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা করে। এখানে প্রতি কেদার জমির সরকারি মূল্য ধার্য্য করা হয়েছে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
মীরপুর ইউনিয়নের শ্রীকরপুর বাদে মৌজায় প্রতি কেদার জমি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মধ্যে অথচ সরকারি মূল্য রয়েছে ৩০ লাখ টাকা। আটঘর মৌজায় বাড়ী ও বরন্ডী রকম ভূমি প্রতি শতক বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে অথচ সরকারি মূল্য নির্ধারিত আছে ১ লাখ টাকা। এখানে ১ কেদার জমির মূল্য হচ্ছে ৩০ লাখ টাকা, এখানে প্রায় ২৪ গুন অতিরিক্ত মূল্য ধার্য্য আছে। উপজেলার ২৪০টি মৌজার মধ্যে কম পক্ষে অর্ধশতাধিক মৌজায় অতিরিক্ত মূল্য ধার্য্যরে ফলে অত্র এলাকার মানুষ অতিরিক্ত ফি’র কারণে ভূমি রেজিষ্ট্রেশন না করে ১৫০ ও ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে লিপিবদ্ধ করে রাখেন বলে জানা গেছে।
অত্যাধিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে ক্রেতা-বিক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। এই বাস্তবতা বর্জিত দায়িত্ব জ্ঞানহীন মূল্য বৃদ্ধির কারনে ঐ মৌজা গুলোর ভূমি রেজিষ্ট্রেশন না হওয়ায় সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ দিকে জগন্নাথপুর গ্রামের খুরশেদ মিয়া জানান, তিনি এক বছর পূর্বে বাড়ী জগন্নাথপুর মৌজায় ১ শতক জায়গা ৩০ হাজার টাকায় খরিদ করেছেন। তিনি অতিরিক্ত সরকারি মূল্যের কারণে ও অতিরিক্ত ফি’র কারণে এখনও রেজিষ্ট্রারী করেন নি। তিনি ৩শ টাকা স্ট্যাম্পে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এ ধরনের অনেক ঘটনাই রয়েছে। সরকারি অত্যাধিক মূল্য ও অতিরিক্ত ফি’র কারনে অর্ধশতাধিক মৌজার মানুষ ভূমি রেজিষ্ট্রেশন করতে পারছেন না। অন্য দিকে সরকারও মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। জানা গেছে, বর্তমানে জগন্নাথপুর সাব-রেজিষ্ট্রারী অফিসে প্রতি মাসে গড়ে ২ থেকে আড়াইশ দলিল রেজিষ্ট্রি সম্পাদন হচ্ছে এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয় এবং ২০১৮ সনের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। অত্যাধিক সরকারি মূল্যের মৌজাগুলো যদি বাস্তবের সাথে মিল রেখে গ্রহনযোগ্য পর্যায়ে সরকারি মূল্য নির্ধারন করা হয়, তবে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫শ দলিল রেজিষ্ট্রেশন হবে। অন্য দিকে বৎসরে বিপুল অংকের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। এদিকে পূর্বে যেখানে সপ্তাহ ১০ দিনের মধ্যে দলিলের নকল ক্রেতারা পেতেন এখন ৬ মাসেও দলিলের নকল পাচ্ছেন না দলিল গ্রহিতারা। এ নিয়ে ক্রেতাদের ভোগান্তি বাড়ছে বলে অনেক ভোক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার শওকত হোসেন মোঃ আফির সাথে আলাপ হলে তিনি জগন্নাথপুর নিউজ ডটকমকে বলেন, উপজেলার অনেক মৌজায় বর্তমানে যে দরে বেচাকেনা হচ্ছে তার চেয়ে অতিরিক্ত সরকারি মূল্য থাকায় মানুষজন ভূমি রেজিষ্ট্রেশনে উৎসাহ হারাচ্ছেন। তাই নীতি নির্ধারনী মহল বর্তমান দর ও বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে যে মৌজাগুলোতে অতিরিক্ত মূল্য ধার্য্য আছে, সেটা কমিয়ে বাস্তবের সাথে মিল রেখে পুর্ননির্ধারন জরুরী ভিত্তিতে করা উচিত বলে আমি মনে করি। এটা করলে ভূমি রেজিষ্ট্রেশন ফি কমবে এবং স্থবিরতা দূর হবে। শুধুমাত্র স্ট্যাম্পে না লিখে লোকজন তার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে ভূমি রেজিষ্ট্রেশনে এগিয়ে আসবেন। তিনি জানান, ৭জন নকল নবীশের মধ্যে বর্তমানে ২ জন আছেন। তাই দলিলের নকল দিতে বিলম্ব হচ্ছে। দ্রুত নকল পাওয়া ক্রেতাদের অধিকার। দলিলের নকল দ্রুত সরবরাহ করতে কমপক্ষে ১০ জন নকলনবীশ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
Leave a Reply