শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যা

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যা

প্রাকৃতিক দুর্যোগ হল এক বিপদ, যে বিপদের কারণে মানুষের অনেক ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। যেমন ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও সুনামি ইত্যাদি। এসব দুর্যোগের কারণে হাজার হাজার মানুষকে গৃহহীন হতে হয় এবং কোটি কোটি টাকার আবাসস্থল ও সম্পত্তির ধ্বংস করে। যদিও তা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে ধরে নেওয়া হয় তবে ইদানিংকালে মানুষের কাজকর্মের প্রভাবে বেশিরভাগ দুর্যোগ হয়ে থাকে এবং এর মূল কারণ হলো প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ধরে নেয়া হয় ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত এবং বর্তমান কালের শিলা বৃষ্টি এবং সিলেট বিভাগের সবচেয়ে আতঙ্কিত বিষয় বন্যা ও ভূমিকম্প।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মোতাবেক ১৯৭০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানির কারণে এশিয়ায় ৩,৬১২টি দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছে ৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ২৬৩ মানুষ এবং এসব দুর্যোগে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এই মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি হয়েছে বাংলাদেশে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে ১৯৭০ থেকে ২০২১ এই ৫০ বছরে এশিয়ায় সর্বাধিক ২৮১টি দুর্যোগে ৫ লাখ ২০ হাজার ৭৫৮ জন মানুষ মারা গেছে বাংলাদেশে।[১]।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অন্যতম প্রদান দুর্যোগ হচ্ছে বন্যা। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক ও বৃষ্টিবহুল দেশ যদিও সময়ের পরিবর্তনে অনেক নদী বিলীন হয়ে গেছে যেমন জগন্নাথপুরের নলজূর নদী এখন লোকে মুখে খাল হিসাবে পরিচিত। এছাড়াও বন্যা হল পানির অধিক আগমন যা শুষ্ক জমিতে প্রবাহিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বন্যা হলো ১৯৮৮ সালের, ১৯৯৮ সালের, ২০০৪ এর বন্যা এবং ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা যাহা পরবর্তীতে দেশের অনেক জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। ২০২৪ সালের সিলেটের বন্যা চলমান আছে।
সিলেটের বন্যার মূল কারণ হলো পানি বহনের দারন ক্ষমতা অতীতের তুলনায় লোপ পাওয়া। এছাড়াও আসাম ও মেঘালয়ের থেকে বেয়ে আসা বৃষ্টির পানি নদী হয়ে হাওরে ও পরবর্তীতে সাগরে পতিত না হওয়া, যদিও বর্তমান সময়ের অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত হওয়ার ব্যবস্থা, বাদ নির্মাণ এবং অপরিকল্পিত বাড়ি তৈরি করা। এগুলোর বাহিরে নগর পরিকল্পনায় রয়েছে বিশেষ গাফিলতি।  বিশেষ করে অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অনেক জায়গা আছে এখনো ড্রেনেজ আওতা আসেনি। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের আগে যেখানে অনেক জলাভূমি ছিল এবং প্রত্যেক বাড়িতে একটি পুকুর থাকত কিন্তু বর্তমান সময়ে পুকুর বেশিরভাগ বাড়িতে বিলীন হয়ে গেছে, যেখানে রাস্তা ছিল না সেখানে দুই থেকে তিনটি রাস্তা তৈরি হয়েছে। যাহার ফলে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই পানি বন্যা রূপ ধারণ করতেছে।
বন্যা থেকে রেহাই পেতে প্রথমেই আমাদের সামাজিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার অবশ্যই পরিকল্পনা করে রাস্তাঘাট নির্মাণ করতে হবে। প্রত্যেক পৌরসভার ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে । বিশেষ করে বিল্ডিং এর অবকাঠামো অনুমোদনের পূর্বে ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে এবং স্থানীয় প্রকৌশলী দ্বারা এই ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। নদী খনন যথাযথভাবে করতে হবে, হাওরের রাস্তায় ঘন ঘন কালভার্ট বা পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করতে হবে, নদী দখল মুক্ত করতে হবে, হাওরের রাস্তাগুলো নতুন করে পরিকল্পনা করে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গৃহ-হীনদের ঘর দেওয়া, তবে খেয়াল রাখতে হবে ঘরগুলো যেন উঁচু জায়গা নির্মাণ করা হয়। নিঃসন্দেহে এই আবাসন ব্যবস্থা অনেক গৃহহীনকে উপকৃত করবে। এই আবাসন ব্যবস্থা দুর্যোগ মোকাবেলায় অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হবে। দেশের সব জায়গায় দুর্যোগ মোকাবেলা কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। গ্রীষ্ম কালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন করে রাখতে হবে, যদিও নৌকা কালের পরিক্রমায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে তবে সরকারের উদ্যোগে কিছু ইঞ্জিল চালিত নৌকা রিজার্ভ রাখা যেতে পারে, যাতে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। কমপক্ষে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৫০০ পরিবারের জন্য বন্যা কালীন আশ্রয়স্থল তৈরি করে রাখতে হবে এবং গবাদি পশুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। যদিও বেশিরভাগ স্কুল ও কলেজে স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিচ তলায় থাকায় এই সব জায়গায় আশ্রিত মানুষের কষ্টের লাগব নেই।
আসুন পরিকল্পিত কর্ম পদ্ধতির মাধ্যমে দেশ গঠন করে এবং দুর্গতদের জন্য প্রত্যেক বছর অর্থ ব্যয় না করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করি। মানব সৃষ্ট দুর্যোগের পরিমাণ কমিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সচল রাখি এবং বহিবিশ্বে বাংলাদেশকে রোলমডেল হিসেবে গড়ে তুলি।
লেখক
মোঃ শিহাব উদ্দিন চৌধুরী (রেহান)
বিবিএ, এমবিএ
 এম ইউ
স্বত্বাধিকারী
এ আলী ট্রেডার্স ও
এ আলী পেইন্ট এন্ড হার্ডওয়্যার
সূত্র ১: দুর্যোগে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু কেন বাংলাদেশে?, ডয়চে ভেলে, ২৫ এপ্রিল ২০২৪।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com