বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে নলজুর নদীর উপর আর্চ সেতু নির্মাণ নিয়ে চলছে তুঘলকি কারবার। কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। কিছুদিন চলে আবার কিছুদিন বন্ধ থাকে। কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের খামখেয়ালিপনা ও উদাসীনতার ফলে এই জনগুরত্বপূর্ন সেতুটির কাজ যথাসময়ে সমাপ্ত না হওয়ায় উপজেলাবাসী চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। তাদের ফ্রি ষ্টাইল অনিয়মের কাছে উপজেলাবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছেন। কে শুনে কার কথা এই হচ্ছে জগন্নাথপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থার করুন দশা।হাতিরঝিল আদলের দৃষ্টিনন্দন বহুল প্রত্যাশিত এ সেতুটির কাজ নির্ধারীত সময়ে নির্মিত না হওয়ায় খুবই দুর্ভোগে আছেন লক্ষাধিক জনসাধারণ । ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১.২৫ মিটার প্রস্থের এই আর্চ সেতুর কাজ গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা।ছিল। কিন্তুু স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ আড়াই বছরে ও সেতুটির কাজ সম্পন্ন হয়নি।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেতুটির নলজুর নদীর দুই তীরে দুইটি অ্যাবাটমেন্টের কাজ শেষ করে ভীম ও ছাদের রড বাঁধা ও ৬ মাস পূর্বে শেষ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে সেতুর ঢালাই কাজ সম্পন্ন করে নভেম্বরে সেতুটি চালু করার কথা থাকলেও এখনও সেতুর ভীম ও ছাদ ঢালাই কাজ হয়নি। ফলে নিয়মত যথা সময়ে ঢালাইকাজ না হওয়ায় ছাদ ও ভীমের রড গুলে ঝং (মরিছা) ধরে যাচ্ছে। মরিছা ধরে যাওয়ায় সেতুটির কাজ দূর্বল হবে বলে অভিজ্ঞ জনরা মনে করছেন।জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের এ যাবৎ সবচেয়ে বড় স্থাপনা জগন্নাথপুরে নির্মাণাধীন আর্চ সেতু। সেতুটি বৃহত্তর সিলেট বিভাগের একমাত্র আর্চ সেতু।সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ মান্নান জগন্নাথপুর পৌরশহরে নলজুর নদীর উপর রাজধানীর হাতির ঝিলের আদলে এই দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে অনুমোদন পায়। ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি ১৩ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে নলজুর নদীর উপর মধ্যভাগে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১.২৫ মিটার প্রস্থ এই আর্চ সেতুর অনুমোদন হয়। সেতুতে দুপাশে থাকবে ফুটপাত ও লাইটিং। মধ্যস্থানে কোন পিলার থাকবেনা। নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ফাঁক রেখে দু’পাশের দুটি অ্যাবাটমেন্টের মাধ্যমে ইস্পাত দিয়ে সেতুটি দৃশ্যমান হবে। ২০২২ইং সনের ২২ আগস্ট আর্চ সেতুটির কার্যাদেশ হলেও ৮ মাস পরে ২০২৩ ইং সালের মার্চ মাসে কিশোরগঞ্জের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ‘ভাটি বাংলা এন্টারপ্রাইজ’ এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। তৎকালীন স্হানীয় এমপি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান ২৬ শে মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে সেতুটির নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন। শুরু থেকেই ঢিলে ঢালাভাবে সেতুটির কাজ চলছে।সেতুটি তে নিম্ন মানের পাথর ও রড ব্যবহার হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনার ফলে সেতুটির কাজ খুবই ধীরগতি তে চলছে। ফলে নদীর দুপারের মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সবধরনের যানবাহন পারাপার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মালবাহী ভারি ট্রাক না আসায় নিত্যপন্যের মূল্য ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির ভারী যানবাহন ও এদিকে চলাচল করতে পারছেনা। ফলে ৫ মিনিটর নদী পারাপার ২৫/ ৩০ মাইল পথ ঘুরে জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে আসতে হচ্ছে।জানা গেছে, জগন্নাথপুর পৌরশহরে প্রবেশের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম ছিল খাদ্যগুদামের সেতু। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ সরকারের আমলে সুনামগঞ্জের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার মোশাহিদ আহমদ চৌধুরীর প্রচেষ্টায় খাদ্যগুদাম সংলগ্ন নলজুর নদীর উপর খুবই মজবুত টেকসই সেতু নির্মান করা হয়। কিন্তু সেতুটি সরু থাকায় একেবারে ঝকঝকে ওই সেতুটি অপসারণ করে এখানে নির্মিত হচ্ছে আর্চ সেতু। জনসাধারণের সাময়িক সমস্যা নিরসনে নির্মাণাধীন সেতুর পাশ্ববর্তী স্থানে ডাইভারশন সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ওই সেতু ও ডাইভারশন সড়ক সরু থাকার কারণে ইতোপূর্বে দেবে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ডাকবাংলো সেতু দিয়ে মালবাহী ভারী যানবাহন ঝুকিঁ নিয়ে চলাচল করছে।যে কোন সময় ডাকবাংলা সেতু ও ধ্বসে যাওয়ার আশংকা করছেন অনেকেই।জগন্নাথপুর পৌরশহরে প্রতিদিন লেগে আছে তীব্র যানজট। বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এলাকাবাসী ও পথচারীরা। তাই দ্রুত আর্চ সেতুটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেতুটি বাস্তবায়নের দ্বায়িত্বে থাকা এলজিইডির কঠোর মনিটরিং ও তদারকির অভাব এবং জবাবদিহি না থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে খুবই মন্থরগতিতে সেতু নির্মাণের কাজ চলছে।জগন্নাথপুর পৌরশহরের নির্মান সামগ্রী ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন বলেন, সেতুটি নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা খুবই ভোগান্তির মধ্যে আছি। মালামাল আনতে পারছি না। সেতুটি অনেক আগে হওয়ার কথা ছিল। তা ছাড়া ডাকবাংলা সেতুটি ও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আগে ডাকবাংলা সেতু নির্মান করে পরে খাদ্যগুদামের সেতু নির্মান করলে মানুষের এতো ভোগান্তি হতো না।তিনি বলেন, গত ১৬ বছর অনেক লম্বা সময় ছিল এই সময়ে জগন্নাথপুরের সবকটি সেতু ও রাস্তাঘাট সম্পন্ন করা যেতো। সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নান কে দিয়ে স্হানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা অনেক বড় বড় উন্নয়ন মূলক কাজ আদায় করতে পারতেন কিন্তু সেটা না করে তাদের অনেকেই পকেট ভরার কাজে ব্যস্ত ছিল। ফলে জগন্নাথপুরে কাংখিত উন্নয়ন হয়নি। কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতা লুটপাট করলেও তৎকালীন মন্ত্রী এম এ মান্নান এদের ব্যাপারে ছিলেন নিরব।জগন্নাথপুরের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বেলাল বলেন, এই সেতুটি নির্মান কাজে কর্তৃপক্ষ দ্বায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। ঠিকাদার ও খামখেয়ালি শুরু করেছে। যেখানে এক বছরে সেতুটির কাজ শেষ করার কথা ছিল সেখানে আড়াই বছরে ও শেষ হচ্ছে না।সেতুটির ঠিকাদার শাহিন আহমদের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, লেবার ও প্রয়োজনীয় ইন্সট্রোমেন্ট সংকটের কারনে কাজ বন্ধ ছিল সোমবার থেকে সেতুর ভীমের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি জানান, ইনশাআল্লাহ আগামী ৩ মাসের মধ্য সেতুটির কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন, অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২২ সনের মার্চ মাসে আর্চ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কাজ সমাপ্তির সময়সীমা ছিল গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। কিন্তু মাটির কন্ডিশন, বর্ষাকালে নদীতে পানি আসা ও বিদ্যুৎ বিভাগের খুঁটি অপসারণ করতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। ব্রীজের গার্ডার, আর্চ গার্ডার, লং গার্ডার সম্পন্ন করতে আরো দু’মাস সময় লাগে।তিনি জানান,ইতি মধ্যে সেতুটির প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতু নির্মান কাজের ইন্সট্রোমেন্ট সংকট থাকায় সেতুটির কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল।চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে সেতুটির কাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা বর্ধিত ছিল।রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে কাজ কিছুটা হোচট খেয়েছে তবে আশা করা যাচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সেতুটি দৃশ্যমান হবে।তিনি বলেন, আমরা কঠোর ভাবে মনিটরিং ও তদারকি করে যাচ্ছি। এখানে নিস্ন মানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি সঠিক নয়। প্রতিটা সামগ্রী মানসম্মত কিনা পরিক্ষা করে দেখি। মানসম্মত পাথর ও বি এস আই রড এ সেতুতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ল্যাব এ পরিক্ষা করে এ রড লাগানো হচ্ছে।
Leave a Reply