রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরশহরে পথে পথে গাড়ীষ্ট্যান্ড থাকায় জনসাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মারাত্মকভাবে। র্দীঘ কয়েক বছর ধরে এঅবস্থা বিরাজ করলেও সাম্প্রতিককালে এর তীব্রতা আরো বেড়েছে। পৌরশহরের স্বরূপচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে জগন্নাথপুর থেকে সিলেটে যাতায়াতকারী বাসস্ট্যান্ড। এ বাসস্ট্যান্ডের গাড়ীগুলো সড়কের বিভিন্ন স্থানে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে থাকে। বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে বাস থাকায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। একইভাবে পৌর এলাকার সি/এ মার্কেট এলাকায় রয়েছে জগন্নাথপুর থেকে সুনামগঞ্জগামী বাসের স্ট্যান্ড। ওই স্ট্যান্ডের গাড়ীগুলোও সব সময় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। ব্যস্ততম ওই এলাকা দিয়ে ছোটবড় অসংখ্য যানবাহন বাজার ও উপজেলা পরিষদে প্রবেশ করতে গিয়ে ভোগান্তি—তে পড়তে হয়। জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ গেট থেকে গুদামের নলজুর সেতুরমুখ পর্যন্ত কোন স্ট্যান্ড না থাকায় সড়কে রয়েছে অটোরিকশা ও সিএনজি স্ট্যান্ড। অনুরূপভাবে পৌরভবনের সামনের সড়কে অটোরিকশা সিএনজির স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। মাদ্রাসা পয়েন্টে রয়েছে জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের ওপর গড়ে উঠেছে চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে যাতায়াতকারী অটোরিকশার স্ট্যান্ড। আরও একটু সামনে গেলেই ইকড়ছই এলাকায় জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের ওপর অটোরিকশা-সিএনজি- লেগুনার স্ট্যান্ড। মাইক্রোবাসের নিজস্ব স্ট্যান্ড না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে হেলিপ্যাডের ওপর গড়ে উঠেছে তাদের স্ট্যান্ড। ওই এলাকায় সড়কের ওপর গড়ে উঠেছে রানীগঞ্জবাজার ও শিবগঞ্জ এলাকায় যাতায়াতকারী অটোরিকশা স্ট্যান্ড। ইদানিং শহরের প্রধান সড়কের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মোড়ে ব্যাটারী চালিত নিষিদ্ধ টমটম (ইজিবাইক) এর ষ্ট্যান্ড স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় পথচারিদের চলাফেরা করতে হচ্ছে ঝুকিঁ নিয়ে। এছাড়া উল্লেখিত স্থান হইতে স্থানীয় পৌর পয়েন্ট পর্যন্ত নিষিদ্ধ টমটম (ইজিবাইক), অটোরিকশা,সিএসজি, ব্যাটারি চালিত রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন সড়কজুড়ে এলোমেলোভাবে পড়ে থাকে। যে কারনে তীব্র যানজটের পাশাপাশি সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার হন জনসাধারণ।
সড়কে এমন নৈরাজ্য বিরাজ করলেও সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পৌর প্রশাসনের কোন কার্যক্রম নেই। প্রশাসন যেন নির্বিকার হয়ে আছে। দেশজুড়ে যখন নিরাপদ সড়কের দাবীতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। তখন সরকার সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশ সপ্তাহ কর্মসুচী পালন করলেও জগন্নাথপুরের চিত্র ছিল যেই সেই। ট্রাফিক আইন না মেলেই পূর্বের মতোই চলাফেরা করতে দেখা গেছে বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের। নিয়ম রক্ষায় মাঝে মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ কিছু যানবাহনে মামলা দায়ের করেছে। জগন্নাথপুরের ট্রাফিক বিভাগে দায়িত্বরত কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, অনেকদিন ধরেই সড়কের বিভিন্নস্থানে গাড়ীর ষ্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এ জন্য যানজট ও নাগরিক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমরা নাগরিক দূর্ভোগ লাঘবে সর্বাত্বক প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। জগন্নাথপুর পৌরশহরের বাসিন্দা শিক্ষক সাইফুল ইসলাম রিপন বলেন, র্দীঘদিন ধরেই সড়কে মারাত্মকভাবে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে আসছে। বিভিন্ন যানবাহনগুলো সড়কজুড়ে এলোমেলোভাবে পাকিং করা থাকে। এছাড়াও সড়কে গাড়ীর অবৈধ ষ্ট্যান্ডের কোন অভাব নেই। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার দাবী জানিয়ে আসছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব বলেন, সুষ্ঠ পরিকল্পনার অভাবে জগন্নাথপুরে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য চলছে। সড়কের ওপর গাড়ীর স্ট্যান্ড বাস,অটোরিকশা, ইজিবাইক এর যততত্র ব্যবহার নাগরিক হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে রয়েছি। তিনি বলেন,এসব বিষয়ে একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোন ফল মিলছেনা।
স্বরূপ চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছায়াদ আলী বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে বাসস্ট্যান্ড থাকায় সবসময় শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতঙ্কে থাকি। তিনি বলেন, বিদ্যালয় শুরুর সময় ও শেষের সময়টুকু ছাড়া বিদ্যালয়ের গেট সার্বক্ষনিক বন্ধ রাখি। দুটি প্রবেশপথেই বাস দাঁড়ানো থাকে।
জগন্নাথপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালিক জানান, আমার স্কুলের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র সেলিম আহমদ’কে বিগত দিনে গাড়ী চাপা দিয়ে চালকরা হত্যা করে। এর পর স্কুলের আশে পাশে গাড়ী রাখতে নিষেধ দিলেও নিষেধ অমান্য করে ড্রাইভার’রা প্রবেশ মুখে অধিকাংশ সময় গাড়ী দাড় করিয়ে রাখে। আমরা যেন অসহায় হয়ে পড়েছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক বলেন, জগন্নাথপুর পৌর শহরে প্রধান সমস্যা হয়ে পড়েছে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য। সড়কের ওপর গাড়ী প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি করেছে। পথচারীদের চলাচল পর্যন্ত দুবির্ষহ হয়ে উঠেছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দ্রুত এসব বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে নাগরিকরা আন্দোলনে নামবেন বলে তিনি জানান। জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুল মনাফ বলেন, এসব বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেব।
জগন্নাথপুরের নবাগত ইউএনও মাহফুজুল আলম মাসুম জগন্নাথপুর নিউজ ডটকমকে বলেন, এ উপজেলায় আমি নতুন এসেছি। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব।
Leave a Reply