বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক::
এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রধান জনপ্রতিনিধি স্বপদে থেকে প্রার্থী হতে পারবেন না। এ জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এ তালিকায় রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কাউন্সিলর বা সদস্য (মেম্বার) স্বপদে থেকে প্রার্থী হতে পারবেন।
শনিবার নির্বাচন কমিশন সভায় এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ রোববার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শিগগির এ বিষয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে জানিয়ে দেবে ইসি।
একই তথ্য সব রিটার্নিং অফিসারকেও জানিয়ে দেয়া হবে। যদিও ইসির কর্মকর্তারা জানান, বিগত নির্বাচনগুলোতে কোথাও কোথাও ভিন্ন চিত্র ছিল। তবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করার জন্য বিএনপিসহ কয়েকটি দল ইসিকে চিঠি দিয়েছিল। বৈঠকে অংশ নেয়া ইসির কয়েকজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিরা কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন তার ব্যাখ্যা আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে জানিয়ে দেব।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, স্বপদে থেকে তারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ আদালতের কোনো নির্দেশনা আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখার পর রোববার সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যুগ্ম সচিব বলেন, শনিবার কমিশন সভায় স্থানীয় স্তরের প্রধান পদধারী জনপ্রতিনিধিরা স্বপদে থেকে এমপি পদে প্রার্থী হতে পারবেন না- এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ অফিস প্রফিট হিসেবে এসব জনপ্রতিনিধিরা লাভজনক পদেও অধিকারী।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। এ স্তরের মেয়ররা স্বপদে থেকে প্রার্থী হতে পারেন না। অর্থাৎ এ পদধারীকে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে হয়।
তবে উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রদের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি চিঠি কমিশনকে দিয়ে এ বিষয়ে স্পষ্টকরণের দাবি জানানো হয়।
পরে ইসির সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে সভায় তারাও এ বিষয়ে কমিশনের কাছ থেকে নির্দেশনা চান। কিন্তু এর আগে বিএনপির চিঠির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ায় ততটা তোড়জোড় ছিল না। পরে রিটার্নিং অফিসারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাতারাতি বিষয়টি নিয়ে বসে ফয়সালা করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার কমিশনের ৪০তম সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের বিষয়ে কমিশন প্রাথমিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় এ পদটি লাভজনক। সিটি মেয়রের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপদে থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না এ ধরনের সিদ্ধান্ত দিতে যাচ্ছে ইসি।
তবে, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রিটার্নিং অফিসারদের মৌখিক নির্দেশনা দেয়ার বিষয়ে কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। কারণ লিখিত কোনো নির্দেশনা দিয়ে নতুন করে বিতর্কে জড়াতে চাইছে না নির্বাচন কমিশন।
এদিকে কমিশন সভার কার্যপত্রে বলা হয়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ সংশোধনীর মাধ্যমে ধারা ১২(১)(সি) আরপিওতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।
ওই নির্বাচনে বাছাইয়ে ও আপিলে সিটি মেয়র, পৌর মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে থেকে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের অযোগ্য করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক রিট মামলা হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন আদেশ হয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কয়েকজন প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যান পদে থেকে সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিল। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আগের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিল।
কার্যপত্রে, উপজেলা, জেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌর মেয়রের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি, স্বায়িত্তশাসিত, আধা স্বায়িত্তশাসিত ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অফিস-প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেশন অথবা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা-কর্তৃপক্ষ এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনসমূহে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ জাতীয় সংসদের প্রার্থী হওয়ার কতদিন আগে পদত্যাগ করতে হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করার প্রস্তাব করা হয়।
এ পরিস্থিতিতে জটিলতা এড়াতে কমিশন বিষয়টি খোলাসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে স্বপদে থেকে স্থনীয় স্তরের সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা এমপি পদে যোগ্য হবেন না, তা নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে কমিশন।
Leave a Reply