শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক::
তিন দিন ধরে পোশাক শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে দেড় মাস আগে ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এক মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন।
ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে মঙ্গলবারও রাজধানীর মিরপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, আজমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। শ্রমিক অবরোধের কারণে এসব এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিকালে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে সমস্যা সমাধানে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে শ্রমভবনে বৈঠকে বসেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি ও শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান।
বৈঠকে এক মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি।
তিনি বলেন, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ৫ জন করে সদস্য নিয়ে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হবে।
শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন গ্যাজেটে কেউ যদি বেতন কম পেয়ে থাকে তা চলতি মাসের বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ চলতি মাসের বেতনের সঙ্গে সেই টাকা পরিশোধ করা হবে। সমস্যা সমাধানে কাজ করবে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি। তবে সন্ত্রাসী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে গত রোববার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও তারা বিক্ষোভ করেন। সকাল ৯টায় মিরপুরের কালশীর এলাকায় ২২তলা গার্মেন্টসের সামনে শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে শ্রমিকদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পরবর্তীতে তাদের সড়কের এক পাশে অবস্থান করতে দেয় পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৯টা থেকে ২২ তলা গার্মেন্টস এলাকায় পোশাকশ্রমিকরা রাস্তায় অবস্থান নিলে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে বেশ কয়েকবার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একবার সরে গেলেও শ্রমিকরা আবার অবস্থান নেন।
খাদিজা আক্তার নামে একজন নারী শ্রমিক বলেন, আমাদের ন্যূনতম বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন গত ডিসেম্বরে জারি হয়েছে। কিন্তু সেখানে আমাদের সব দাবি-দাওয়া উত্থাপন হয়নি। অপারেটর ও হেলপারের বেতনের মধ্যে অনেক বৈষম্য ও ব্যবধান রয়েছে। আমরা এগুলো দূর করার কথা বলছি।
তিনি অভিযোগ করেন, তাদের জন্য সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করলেও মালিকপক্ষ তা দিচ্ছে না।
পোশাকশ্রমিক পারুল ও মেশিন অপারেটর শিমুল যুগান্তরকে বলেন, মালিকপক্ষ সরকারি নিয়ম না মেনে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়মে বেতন দিচ্ছেন। আর যারা আন্দোলন করছে তাদের ছাঁটাই করতে তালিকা তৈরি করছেন।
পল্লবী জোনের এসি এ বি এম জাকির হোসেন বলেন, আমাদের মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি যুক্তিসংগত। মালিকপক্ষ তাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। আশা করি আর সমস্যা হবে না।
এদিকে উত্তরার আজমপুর ও উত্তরখান, দক্ষিণখান এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কারখানা ভাঙচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
বিমানবন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর থেকে উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টের শ্রমিকরা জড়ো হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আসার চেষ্টা করে। তারা বিভিন্ন গার্মেন্টে গিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করে। না আসলে কারখানায় ভাঙচুর করে। দক্ষিণখান এলাকার নিপা এবং এপিএস গার্মেন্টসে হামলা ভাঙচুর করে।
এদিকে বেলা পৌনে ১২টার দিকে উত্তরার আবদুল্লাহপুর এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়।
জানা গেছে, দক্ষিণখানে নিপা গার্মেন্টসের সামনে পোশাকশ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুই পুলিশসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে পোশাকশ্রমিকরা নিপা গার্মেন্টের সামনে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল ছুড়ে।
দক্ষিণখান থানার এসআই সুজন যুগান্তরকে জানান, শ্রমিকদের হামলায় পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। এদিকে সকাল ৯টায় উত্তরার আজমপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন পোশাকশ্রমিকরা। এ সময় পুলিশ তাদের টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকরা রেললাইনের ওপর অবস্থান নেন। পোশাকশ্রমিকরা ওই এলাকায় দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।
আজমপুরে শাহজালাল অ্যাভিনিউয়ে পুলিশ পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। পুলিশও দফায় দফায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।
Leave a Reply