মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক ::
এক মাসের বেশি সময় পর হাজারের নিচে নেমেছে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৬০ জন।
গত ২৫ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩৭ দিনের মধ্যে ভর্তি রোগীর সংখ্যায় এটিই সবচেয়ে কম। আক্রান্তের এই নিুমুখী ধারা অব্যাহত থাকলে অল্প সময়েই ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। এদিকে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৩৪৯ জন ঢাকায় এবং ৪১১ জন ঢাকার বাইরে। গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ২৫ জন। যার মধ্যে ঢাকায় ৪৬৫ জন, ঢাকার বাইরে ৫৬০ জন। অর্থাৎ শুক্রবারের তুলনায় শনিবার ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমেছে ২৬ শতাংশ।
অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট শনিবার পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭০ হাজার ১৯৫ জন। এর মধ্যে শুধু আগস্টেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫১ হাজার ৭৩৪ জন। তবে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন ৬৫ হাজার ১৫০ জন। যা মোট আক্রান্ত রোগীর ৯৩ শতাংশ। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪,৮৬০ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২,৬৯৬ জন এবং অন্যান্য বিভাগে ২১৬৪ জন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৮৫ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। এর মধ্যে ৯৬ মৃত ব্যক্তির তথ্য পর্যালোচনা করে ৫৭ জনের ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা গত ৩৭ দিনের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নামা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি অবশ্যই একটি ভালো সূচক। এর আগে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও হাজারের নিচে নামেনি। শুক্রবার রোগীর সংখ্যা ৭৬০ জনে নেমেছে। আমি মনে করছি এই সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার সম্ভাবনা আর নেই। ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকবে।
কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৪০ হাজার ৬৯৩ জন ঢাকা শহরের। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৩ হাজার ৪০৬ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১৭ হাজার ২৮৭ জন। এছাড়া ঢাকা শহর ছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৭,৬১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫,৩২৮ জন, খুলনা বিভাগে ৫,০১৫ জন, রংপুর বিভাগে ১,৬৭৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩,২৫২ জন, বরিশাল বিভাগে ৪,০৪৯ জন, সিলট বিভাগে ৭৬১ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮১১ জন।
তিন মৃত্যু : শনিবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এদের একজন খুলনায়, একজন চট্টগ্রামে এবং একজন বরগুনায়। এ নিয়ে যুগান্তরের পাঠানো প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী আগস্ট মাসের ৩১ দিনে ১১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শিল্পী (৪৫) নামের ওই রোগী শনিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলার আঠালিয়া গ্রামে। রোগীর এক আত্মীয় জানান, কয়েকদিন ধরেই শিল্পী জ্বরে ভুগছিলেন। প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। পরে জ্বর না কমলে শুক্রবার বিকালে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। খুমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, রোগীর মৃত্যু হয়েছে ‘হেমোরাজিক ফেবার ইউথ শকের’ কারণে। রোগীকে আইসিইউতে রাখা হয়। তবে হাসপাতালে আনতে দেরি হওয়ায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, সেখানে বাদশা মোল্লা (৫৫) নামে এক ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। শনিবার ভোর ৫টার দিকে নগরীর কাতালগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত পার্কভিউ হাসপাতালে তিনি মারা যান। জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাদশা মোল্লা নগরীর আগ্রাবাদের একটি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার চতুল গ্রামের আবদুল ওহাব মোল্লার ছেলে। সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, চট্টগ্রামে এই প্রথম কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হল। তবে বাদশা মোল্লা ডেঙ্গু রোগ ছাড়াও হৃদরোগ এবং লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন।
তিনি ২০ আগস্ট অসুস্থতা নিয়ে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে ২২ আগস্ট তাকে পাঁচলাইশের পার্কভিউ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বরগুনার বামনায় ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। শনিবার সকাল নয়টার দিকে বামনা হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। নিহত স্কুলছাত্রীর নাম নিপু রায় (১০)। নিপু রায়ের বাবা লিটন চন্দ্র রায় জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর নিপু রায়কে বামনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কোনো প্রকার পরীক্ষা ছাড়াই নিপুকে হাসপাতালে ভর্তি করালেও চিকিৎসায় অবহেলা করেন। এ বিষয়ে বামনা হাসপাতালের টিএইচএ ডা. বশির আহম্মেদ বলেন, চিকিৎসকের অবহেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ জানা ছিল না। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply