বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভার বিভিন্ন সড়কের দুই শতাধিক সড়কবাতি বিকল হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখভালের অভাবে রাতের পথচারীরা অনেকটা অন্ধকারের মধ্যে চলাচল করছেন। এই নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবগত করলে ও কার্যত কোনো সুফল পাচ্ছেন না। ।
জানা যায়, জগন্নাথপুর পৌরসভার অর্থায়নে গত বছরের নভেম্বর মাসে পৌরশহরে প্রায় তিনশতাধিক সড়কবাতি স্থাপন করা হয়। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৯ বছর পর সড়কবাতি চালু হওয়ায় আলোকিত হয়ে উঠে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলি। এতে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ও আনন্দের সঞ্চার ঘটে। কিন্তু সড়কবাতি স্থাপনের অল্প দিনেই মধ্যেই দেড় শতাধিক বাতি বিকল হয়ে পড়ে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবগত করলেও সড়কবাতি গুলো পুনরায় সচল করার কোন উদ্যোগ নেননি। এমতাবস্থায় রাতের আধারে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদকাসক্তদের উৎপাত সহ নানাবিধ অসামাজিক কর্মকান্ডের আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়ক,জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক ও জগন্নাথপুর-চিলাউড়া সড়কের লাইটপোষ্টে বাতি আছে; কিন্তু অধিকাংশ বাতিতে আলো নেই। ওই গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলির দেড় শতাধিক লাইটপোষ্টের বৈদ্যুতিক সড়কবাতি নষ্ট হয়ে পড়েছে । জগন্নাথপুর পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ন স্থান টিএন্ডটি রোডে কোনো বাতিতে আলো দেখা যাচ্ছেনা। তবে জগন্নাথপুর বাজারে কয়েকটি বাতি জ¦লতে দেখা যায়। এদিকে, জগন্নাথপুর-বিশ^নাথ সড়কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান জগন্নাথপুর-সিলেট বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫ নং ওয়ার্ডের বটেরতল এলাকা পর্যন্ত কোনো বাতিতে আলো নেই। তবে ওই ওয়ার্ডের নয়ামসজিদের মূল সড়ক থেকে জগন্নাথপুর হাসপাতাল পর্যন্ত কয়েকটি বাতি জ¦লতে দেখা গেছে।
এদিকে, জগন্নাথপুর ৬ নং ওয়ার্ডে গুরুত্বপূর্ণ কুমারখালী সড়ক, ও জগন্নাথপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বণিকপাঁড়া পর্যন্ত সড়কে এবং ৫ নং ওয়ার্ডের মেস্তুরি বাড়ি সড়ক, গোসাই বাড়ি সড়ক থেকে বাড়ী জগন্নাথপুরের উত্তরপাঁড়া পর্যন্ত কোনো বাতি নেই। দীর্ঘদিন ধরে সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর ভুতড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। এসব সড়কে সন্ধ্যার পর অনেক মহিলাই ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। এমনকি অনেক রিক্সা চালকের কাছ থেকে পেশাদার ছিনতাইকারী ও হেরোইন সেবনকারীদের কবলে পড়ে অনেক গরীব রিক্সাওয়ালাদের হাহাকার করতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে অনেকে মেয়রকে একাধিকবার অবহিত করলে ও কোনো সমাধান পাননি- কেউ কেউ এমন ও অভিযোগ করেছেন ।
এছাড়া ও জগন্নাথপুর ৬ নং ওয়ার্ডের ডাকবাংলো রোডস্থ জগন্নাথপুর আবাসিক এলাকায় কোনো বাতি লাগানো হয়নি। ওই স্থানে স্থানীয় তহশিল অফিস, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় এবং ভেটেরিনারী চিকিৎসালয় রয়েছে। ওই এলাকায় সড়ক বাতি না থাকার কারণে শহীদ মিনারে সামনে মূল সড়কের ও প্রাণীসম্পদ কার্যালয়ের ভেতরে থাকা দুটি সোলার স্ট্রিট লাইটের আলোতে নির্ভর করে রাতের আধাঁরে চলাচল করছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড ও হবিবপুর (শাহপুর) এলাকার বাসিন্দা তারেক মিয়া বলেন, আমাদের ওয়ার্ডের মূল সড়কে সড়কবাতি স্থাপন করা হলেও অল্প দিনের মাথায় অধিকাংশ সড়কবাতি বিকল হয়ে পড়ে। তিনি এ সমস্যার সমাধান সহ প্রবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামের পাঁড়ায় পাঁড়ায় সড়কবাতি স্থাপনের জন্য তিনি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।
পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাবিল মিয়া বলেন, জগন্নাথপুর পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি সড়কবাতি। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ হাতেগোনা মূল কয়েকটি সড়কে সড়কবাতি স্থাপনের উদ্যোগ নিলে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটে। কিন্তু এসব সড়কে কম ওয়াটের ও নি¤œমানের বাতি লাগানো হলে অল্পদিনের মাথায় আবার ও বিকল হয়ে পড়ে। তিনি শ্রীঘ্রই এর সমাধানের দাবি জানান।
পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কুমারখালী রোড এলাকার বাসিন্দা আলী আহমদ বলেন, মোঃ আক্তার হোসেন মেয়র থাকাকালীন আমাদের রোডে সড়কবাতি সবসময় জ¦লতো। পরে বাতিগুলো বিকল হয়ে গেলে বর্তমান মেয়র আব্দুল মনাফকে আমরা একাধিকবার জানাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের সড়কে সড়কবাতি লাগানো হয়নি। কিন্তু আমাদের উপর ২/৩গুণ টেক্স বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড ও ইকড়ছই গ্রামের বাসিন্দা সায়েক আহমেদ বলেন, পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের প্রায় সবকগুলি বাতি বিকল। এ ব্যাপারে আমরা দায়িত্বশীলদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদেরকে বারবার আশা দিলে ও কোনো ফল হচ্ছেনা। তিনি দ্রুত মেরামতের দাবি জানান।
জগন্নাথপুর পৌর কার্যালয় ও স্থানীয় নাগরিকদের সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের প্রচেষ্ঠায় জগন্নাথপুর সদর ইউনিয়নকে পৌরসভায় রুপান্তর করা হয়। ২০০২ সালের তৎকালীন জগন্নাথপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান মিজানুর রশীদের প্রচেষ্ঠায় শহরের উপজেলা পরিষদ সড়কে আংশিক সড়কবাতি লাগানো হলেও এর কয়েকমাস অব্যবস্থাপনার কারণে নষ্ট হয়ে পড়ে। এরমধ্যে অনেকগুলো বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। পরে আর সেগুলো সচল করা হয়নি।
স্থানীয় জনসাধারণের বহুল প্রত্যাশিত এই স্বপ্ন দীর্ঘ ১৯ বছর পর পৌরশহরে আবারও কার্যকর হলে আলোকিত হয়ে উঠে জগন্নাথপুর পৌরসভার কয়েকটি সড়ক। কিন্তু বৃষ্টি সহ নানাবিধ কারণে অসংখ্যা সড়কবাতি অল্পদিনেই বিকল হয়ে পড়লে আবার রাতে অন্ধকারে পথ চলাচল করছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল মনাফ এর সাথে আলাপ হলে তিনি যুগান্তরকে জানান, নষ্ট লাইটগুলো সচল করা হবে। এবং পর্যায়ক্রমে পৌরসভার সকল রোডে ষ্ট্রীট লাইট বসানো হবে।
Leave a Reply