বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-সিলেট সড়ক এখন মরনফাদ: প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা,জন দূর্ভোগ চরমে!

জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-সিলেট সড়ক এখন মরনফাদ: প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা,জন দূর্ভোগ চরমে!

সানোয়ার হাসান সুনু :  কর্তৃপক্ষের  উদাসীনতা ও খামখেয়ালীপনার কারণে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।  যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম জগন্নাথপুর- বিশ্বনাথ সিলেট  সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ না করায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। বারবার সড়ক সংস্কারের  দাবীতে এলাকাবাসী ও পরিবহন মালিক শ্রমিকরা ধর্মঘট করলেও কাজ হয়নি।  এ এপর্যন্ত  ৮ম বারের মতো এই সড়ক সংস্কারের দাবীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডাকলেও কোন কাজ না হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।বেহাল এই সড়কটিতে দির্ঘ দিন ধরে কাজ না হওয়ায় বড় বড় গর্ত হয়ে সড়কটি বর্তমানে মরনফাদেঁ পরিনত হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা।বড় বড় গর্তে গাড়ী উল্টে খাদে পড়ে একাধিক দূর্ঘটনায় শত শত লোক আহত হয়েছেন।  ইতিমধ্যে সড়কের গর্তে পড়ে ৩টি ডেলিভারীর ঘটনা ঘটেছে। দির্ঘ দিন ধরে অত্র এলাকার মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কর্তপক্ষের নির্লিপ্ত ভূমিকা ও উদাসীনতায় এলাকাবাসীকে বিক্ষুব্দ করে তুলছে।

সিলেট বিভাগীয় শহরসহ রাজধানী ঢাকার  সঙ্গে জগন্নাথপুর ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কয়েকলাখ মানুষ জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-রশিদপুর- সিলেট সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে এই সড়কে বেহালদশা বিরাজ করছে।

২০১৭ সালে জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়কের জগন্নাথপুরের ১৩ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য প্রায়  তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ কাজটি বাগিয়ে নেন সুনামগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজের মালিক আওয়ামীলিগ নেতা নাদের আহমদ। ওই সময় সড়কে  কিছু দায়সারাভাবে  কাজ করে মোটা অংকের বিল উত্তোলন করে রহস্যজনক ভাবে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর স্থানীয় এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নামমাত্র কাজ করে বিপুল অংকের টাকা লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কাজের ৪ মাসের মাথায় সড়কের পিচঢালাই ওঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। দীর্ঘকাল থেকে এ সড়কে কাজের নামে মোটা অংকের সরকারি অর্থ বরা্দ্ধ করলেও  টেকসই কাজ না করে দায়সারাভাবে কাজ করে বিপুল অংকের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।  ২০১৮ সালে ১০ লাখ টাকার জরুরী সংস্কার করা হয়। এর কিছুদিন পর ২০১৯ সালে সড়কের বেহাল দশা দেখা দিলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সড়কে অস্থায়ী মেরামতের জন্য ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। কাজ পায় সুনামগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রেনু এন্টারপ্রাইজ। এ সময় সড়কের মেঘাখালী ব্রিজের নীচে ইট সলিং ও সড়কের কয়েকটি গর্তে ইটের সুড়কি ফেলেই  অধিকাংশ টাকাই আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ ইং সনের শেষের দিকে ওই সড়কের জগন্নাথপুর উপজেলা  অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ২৫ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করা হলে কাজটি পায় মাদারীপুরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হামীম সালেহ (জেভি)। চুক্তি অনুয়ায়ী গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখ থেকে সড়কে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মার্চের প্রথম দিকে সড়কে কিছু মাটি খুড়তে দেখা যায়।  চুক্তি মোতাবেক আগামী বছরের ৩১ মার্চ কাজ শেষ করার কথা। এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভার দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। সম্প্রতিকালে ঝড়-বৃষ্টির সময় সামান্য মাটি খুড়াখুড়ির   করে ফের বন্ধ করে দেওয়া হয় সড়কের কাজ । অব্যাহত বৃষ্টি আর বন্যায় বিপদজনক বিশাল বিশাল  বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে অচল হয়ে পড়ে সড়কটি। সম্প্রতি এ সড়কের জগন্নাথপুর পৌরএলাকার বটেরতল নামক স্থানে একটি গর্তে পড়ে অটোরিকশায় থাকা সন্তানসম্ভাবনা এক নারী সড়কেই সন্তান প্রসব করেছেন।এর আগে সড়কের ছিক্কা এলাকায় গর্তে পড়ে উপজেলার ছিলাউড়া গ্রামের এক নারীর সন্তান ভূমিষ্ট হয় এবং হাসপাতালের সামনের সড়কে আরেক নারীর সন্তান ভূমিষ্ট হয়।  এ সব ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।  দীর্ঘ দিন ধরে টেকসই কাজের অভাবে সড়কটি বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে।   এমতাবস্থায় লুটপাট বন্ধ ও টেকসই সড়ক নির্মানের দাবীতে  জগন্নাথপুর উপজেলাবাসী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিজামুল করিম জানান, জনগুরুত্বপূর্ন এই সড়কটি  সংস্কারের অভাবে যানচলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। সংস্কারের দাবীতে আমরা একাধিকবার পরিবহন ধর্মঘট করলেও আমাদের কথা কেউ শুনছে না।  সংস্কারের আশ্বাসে কর্মসুচী বাববার প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানে সড়কে বেহাল দশা বিরাজ করছে। বড় বড় গর্তের ফলে যানবাহন চালানো জীবনের জন্য ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার সাকলাইন হোসেন জানান, করোনা ও বৃষ্টির   কারণে সংস্কার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার  যুগান্তর কে বলেন, এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক আইডিএ এর অর্থায়নে জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ -সিলেট সড়কের জগন্নাথপুর থেকে কেউনবাড়ী পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ২৫ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। করোনা মহামারী,বন্যা,ভারতের এলসি বন্ধ থাকায় ভালো মানের পাথর পাওয়া যাচ্ছে না। এ সমস্ত কারনে কাজে বিঘ্ন ঘটছে। এবার যাতে সড়কের কাজ মান সম্মত ও টেকসই হয় এ ব্যাপারে সচেতনভাবে আমরা কাজ করছি।
এ দিকে বিশ্বনাথ উপজেলা প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ জানান,ওই সড়কের কেউনবাড়ী থেকে বিশ্বনাথ পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। দির্ঘ দিন ধরে বেহাল এই সড়কটিতে এবার যাতে লুটপাট না করে টেকসই ও মানসম্মত কাজ হয় এ ব্যাপারে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com