শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: সিলেটের চৌহাট্টায় পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রতিবাদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একাধিক স্থানে অবরোধ করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে করে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট রুটের সিলেট অংশে যানজট দেখা দেয়। এর আগে দুপুরে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত ২০টি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়। এতে পুলিশ সহ ১০ জন আহত হন। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের সময় একটি শটগান সহ এক পরিবহন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সিলেট নগরীর চৌহাট্টা থেকে সিভিল সার্জনের অফিসের সামনে দিয়ে দরগাহর প্রধান ফটক পর্যন্ত সড়কের একাংশ দখল করে অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এই স্ট্যান্ডে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীতে উন্নয়ন কাজ চলছে। এই উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে রাস্তার দু’পাশে ড্রেন সহ ফুটপাথ, মধ্যখানে আইল্যান্ড তুলে চার লেনের করা হচ্ছে রাস্তা। একই সঙ্গে তারের জঞ্জাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভূগর্ভে। নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে এই কাজ শুরু করে চৌহাট্টা পয়েন্ট পর্যন্ত শেষ করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এরপর তিনি চৌহাট্টা থেকে আম্বরখানা এলাকা পর্যন্ত কাজ শুরু করেন। তিনদিন ধরে দু’পাশে রাস্তা বন্ধ রেখে এই কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি রেখে আগের মতো স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ কাউন্সিলররা এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবারের মধ্যে তাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা না সরে চৌহাট্টায় অবস্থান করতে থাকেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের অভিযানের খবরে গতকাল সকাল থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে চৌহাট্টায়। পরিবহন শ্রমিকরা এসে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিয়ে যায় সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ টিম। তার আগে সেখানে যান এসএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ। তিনি শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা মানেনি। দুপুর পৌনে ১টার দিকে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে চৌহাট্টা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা একজোট হয়ে ধাওয়া করলে পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি রেখে চলে যায়। সংঘর্ষকালে অন্তত ২০টি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে পরিবহন শ্রমিক, সিটি করপোরেশনের কর্মচারী ও পুলিশ সহ ১০ জন আহত হন। পরিবহন শ্রমিকদের সভাপতি অরুণ দেব নাথ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় নির্বিচারে তাদের যানবাহনে ভাঙচুর করা হয়। এতে তারা বাধা দিলে তাদের ওপরও হামলা হয়। এতে কয়েকজন শ্রমিক গুরুতর আহত হন। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করতে চাইছে। শ্রমিকরা এতে রাজি না হলে তাদের ওপর হামলা করা হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ করে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে শটগান সহ একজন শ্রমিককে আটক করা হয়। তার নাম ফয়সল আহমদ ফাহাদ। সে চৌহাট্টা স্ট্যান্ডের পরিবহন নেতা বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুলিশ ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
Leave a Reply