মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক:
বৃহস্পতিবার থেকে ভারতের সব গণমাধ্যমের শিরোনামে রয়েছেন বলিউড ‘ভাইজান’ খ্যাত বলিউড সুপারস্টার সালমান খান। ১৯৯৮ সালে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শ্যুটিংয়ের ফাঁকে জোধাপুরে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের অপরাধে বৃহস্পতিবার তার ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। কিন্তু সালমান খানের এই কারাভোগের নেপথ্যে আসলে রয়েছে এক গুরুর আদেশ। বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের এক গুরুর রেখে যাওয়া আদেশের পালন করতে গিয়েই সালমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই সম্প্রদায়ের লোকজন। ১৯৯৮ সালে জোধাপুরের বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের লোকজন বাদী হয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের ৫১নং ধারায় মামলা করেন। রাজস্থানের ওই সম্প্রদায়ের কাছে কৃষ্ণসার হরিণের গুরুত্ব কেবল বন্যপ্রাণী হিসেবেই নয়। রয়েছে ধর্মীয় মাহাত্ম্যও।
কথিত আছে, রাজস্থানের পিপাসার গ্রামের এক রাজপুত পরিবারে ১৪৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাম্বেশ্বর নামে এক ব্যক্তি। তিনিই পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এই বিষ্ণোই সম্প্রদায়। বিষ্ণুর উপাসনা করতেন জাম্বেশ্বর। যে কারণে সম্প্রদায়ের নাম হয় ‘বিষ্ণোই’।
গুরু জাম্বেশ্বর তার ভক্তদের বলেছিলেন, প্রকৃতিকে বাঁচানোর কথা। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে যে পশুপাখি-গাছপালারও প্রয়োজন রয়েছে সেটাই ছিল তার মূল বক্তব্য। মোট ২৯টি নিয়মের (আদেশ) কথা বলে গিয়েছিলেন গুরু জাম্বেশ্বর। যার প্রথম ৮টিতে বলা হয়েছে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার কথা। পরের ৭টি বিধি হলো সামাজিক ব্যবহার-সংক্রান্ত। পরের ১০টি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে। শেষ ৪টিতে রয়েছে প্রতিদিনের পুজোর নিয়মাবলি। বলা হয়ে থাকে, যদুবংশেরর একটি গোষ্ঠী ছিল বৃষ্ণী। যার উত্তরপুরুষ ছিলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। মহাভারতের মুষলপর্বে যদুবংশ শেষ হয়ে যাওয়ার উল্লেখ থাকলেও তাদের বংশধররা রয়েছেন এখনো। বৃষ্ণী যে অপভ্রংশ হয়ে বিষ্ণোই হয়নি তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। প্রসঙ্গত, ১৭৩০ সালে জোধাপুরের মহারাজা অভয় সিংহের সেনাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের অমৃতা দেবী। ওই এলাকায় খেজুর গাছ কাটতে এসেছিল সেনারা। কিন্তু অমৃতা দেবীসহ গ্রামবাসীরা তার প্রতিরোধ করেন।
গুরু জাম্বেশ্বরের শেখানো বাণী অনুয়ায়ী প্রকৃতিকে বাঁচাতে গিয়ে সেই সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলন ৩৬২ জন বিষ্ণোই। পরবর্তীতে গাছ বাঁচাও আন্দোলন হয় ভারতের উত্তরাখণ্ডে যা ‘চিপকো আন্দোলন’ নামে পরিচিত। মূলত গুরু জাম্বেশ্বরের বাণী বা আদেশ পালন করতে গিয়ে সালমানের বিরুদ্ধে মামলা করে ওই সম্প্রদায়ের লোকজন। যার ফলে সুপারস্টার হয়েও সালমান খানকে কারাভোগ করতে হচ্ছে।
Leave a Reply