শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের একমাত্র সরকারি গালর্স হাই স্কুলে শিক্ষক সল্পতার কারণে ছাত্রীদের লেখাপড়া মারাত্মক বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। প্রায় ৪শত ছাত্রীর ভবিষ্যত নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্ধেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এই স্কুলে বর্তমানে প্রায় ৪শত ছাত্রী লেখাপড়া করছে। অন্য দিকে সরকারি শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩ জন। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার সিংহ অফিসের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। অন্য দু’জন সহকারি শিক্ষকের পক্ষে ৬ষ্ট শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত এ ৫টি ক্লাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আজ দীর্ঘদিন যাবত স্কুলটিতে শিক্ষক শূন্যতা বিরাজ করলেও কর্তৃপক্ষ যেন এ ব্যাপারে নির্বিকার হয়ে আছেন। এলাকার অভিভাবক মহল দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষকসহ নূন্যতম ৫জন সহকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য দাবী জানিয়ে আসলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক শিক্ষা সিলেটের উপ-পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর কবিরকে একাধিকবার জানালেও তিনি ২ জন শিক্ষক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু ১ বছর অতিক্রান্ত হলেও তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন নি। উল্লেখ্য স্কুলটিতে অনেক মেধাবী ছাত্রী রয়েছে। যারা স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যতে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশের সেবা করবে। কিন্তু অবিশ্বাস্যু হলেও এই সরকারি স্কুলটিতে বিজ্ঞানের কোন শিক্ষক না থাকায় উপযুক্ত লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি ছাত্রীরা। প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে ছাত্রীদের লেখাপড়া মারাত্মক বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
অন্য দিকে জগন্নাথপুর সরকারি স্কুলটি দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত। স্কুলের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অভাব রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত স্কুল ভবনে রং এর কাজ না করায় ভবনগুলো বেহাল অবস্থায় বিরাজ করছে। স্কুলের পশ্চিম দিকের নিরাপত্তা দেওয়াল ভেঙ্গে যাওয়ায় গরু ছাগলের সাথে মানুষরুপি বখাটে ছেলেদেরও উপদ্রব্য রয়েছে। স্কুল ছুটির পর মেয়েদের বখাটে ছেলেরা বিভিন্নভাবে উত্যাক্ত করে বলে অনেক অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সামাজিক মান সম্মানের কারণে অনেকেই এগুলো প্রকাশ করতে নারাজ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি উতাক্তের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর দৃষ্টি প্রয়োজন বলে অভিভাবক মহল মনে করছেন।
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার সিংহের সাথে আলাপ হলে জগন্নাথপুর নিউজ ডটকমকে তিনি জানান, শিক্ষক সংকটের কারণে খুবই সমস্যার মধ্যে আছি। সম্প্রতি সহকারি শিক্ষক হিল্লুল হোসেন স্কুলে যোগ দেওয়ার তিন মাসের মাথায় বদলী হয়ে মন্ত্রনালয়ে চলে যান। অন্য দিকে সহকারী প্রধান শিক্ষক মাঈন উদ্দিনকে ডেপোটেশনে ঢাকার ওয়ারী শেখ কামাল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়। অথচ তিনি প্রতি মাসে জগন্নাথপুরে বেতন উত্তোলন করতে আসেন। এই পদ শূন্য না থাকায় নতুন কোন সহকারি প্রধান শিক্ষক আসতে পারছেন না। এ নিয়ে জটিলতা তৈরী হয়েছে। তিনি জানান, দীর্ঘ প্রায় ৫ বৎসর যাবত স্কুলগুলোতে সরকারি শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় শিক্ষক সংকট তৈরী হয়েছে এ সমস্যা সমাধানে সরকারের উর্ধ্বতন নীতি নির্ধারনী মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর সরকারি গালর্স হাই স্কুল অভিভাবক কমিটির সভাপতি সাংবাদিক মোঃ সানোয়ার হাসান সুনু বলেন, দীর্ঘদিন যাবত স্কুলের শিক্ষক স্বল্পতার কারণে ছাত্রীদের লেখাপড়া মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোন ফল পাচ্ছিনা। আমি আমাদের এলাকার এম.পি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান এর সাথে এ সমস্যা সমাধানে একাধিকবার আলাপ করে বলেছি, উনি যেন শিক্ষা মন্ত্রীর সাথে আলাপ করে যে ভাবেই হোক ৫ জন শিক্ষক বিশেষ করে বিজ্ঞান ও অংকের ২ জন শিক্ষক জরুরী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন শিক্ষক আসেননি। সিলেট বিভাগের মাধ্যমিক শিক্ষা উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর কবিরের সাথে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আমরা একাধিকবার আলাপ করেছি গত বছর স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে আসলে আমরা স্কুলের দূর অবস্থার কথা তুলে ধরি এবং ৫ জন শিক্ষক নিয়োগের দাবী জানালে তিনি ২ মাসের মধ্যে যে করে হউক ২ জন শিক্ষক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এক বছর পার হলেও তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি।
এ ব্যাপারে আমি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ উপ-পরিচালকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন ফল পাইনি। আমরা কোমলমতি ছাত্রীদের সুষ্টুভাবে লেখাপড়ার স্বার্থে শূন্য পদে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মেধাবী ও দায়িত্বশীল শিক্ষক নিয়োগের জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এম.এ মান্নান সহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
উল্লেখ্য শিক্ষক শূন্যতায় স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে আমরা অভিভাবকরা ৪ জন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করি এবং এদের বেতন আমরা অভিভাবকরা দিচ্ছি। তবে ছাত্রীদের সুষ্ট লেখাপড়ার স্বার্থে বিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার, ইংরেজীসহ প্রয়োজনীয় বিষয়ের মেধাবী সরকারি শিক্ষক খুবই প্রয়োজন।
Leave a Reply