শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:২১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের যুব বিভাগের কমিটি গঠন জগন্নাথপুরের সাংবাদিকদের সাথে এমপি প্রার্থী এডভোকেট ইয়াসিন খানের মতবিনিময় ডুংরিয়া ঘরুয়া ইয়াংস্টার ৩য় ফুটবল টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন  জগন্নাথপুরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্হ দের মধ্যে আর্থিক অনুদান বিতরন জগন্নাথপুরে ইউএনও এর সাথে কমিউনিটি নেতা মুজাক্কির আলীর বৈটক সুনামগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থীতা ঘোষণা করলেন মুফতি আজির উদ্দিন  শান্তিগঞ্জের শত্রুমর্দনে বিএনপির কর্মীসভা আব্দুর রশিদ উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত  জগন্নাথপুরে সাংবাদিক আব্দুল করিম গণিকে সংবর্ধনা জগন্নাথপুরে চার শতাধিক হতদরিদ্র মানুষ পেল চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ

পতনের মুখে যুবলীগের ক্যাসিনো সাম্রাজ্য : জুয়ার আসরের শত শত কোটি টাকা গেল কই, গডফাদাররা ধরা পড়বে তো -প্রশ্ন অনেকের

পতনের মুখে যুবলীগের ক্যাসিনো সাম্রাজ্য : জুয়ার আসরের শত শত কোটি টাকা গেল কই, গডফাদাররা ধরা পড়বে তো -প্রশ্ন অনেকের

জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: বিলম্বে হলেও অনেকটা ধূমকেতুর মতো রাজধানীর ক্যাসিনো সাম্রাজ্যে আঘাত হেনেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ‘ক্যাসিনো সম্রাট’খ্যাত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা এখন খাদের কিনারে। কেউ ধরা পড়েছে, কেউ আটকের অপেক্ষায়।

বুধবার রাজধানীতে পরিচালিত র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান এমন বার্তাই দিচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, এতদিন এসব ওপেন সিক্রেট জুয়ার আসরে যে বিপুল পরিমাণ টাকা উড়েছে, সেসব টাকার জোগানদাতা কারা, এসব টাকার অবস্থান এখন কোথায়, কাদের পকেটে গেছে?

পর্দার আড়ালে থাকা যেসব গডফাদার কোটি কোটি টাকার ভাগ নিয়েছেন, তাদের কী হবে, তারাও ধরা পড়বে তো? এরকম নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র।

প্রসঙ্গত, প্রায় দু’বছর আগে প্রভাবশালী মহলের এই জুয়ার আসর নিয়ে দৈনিক যুগান্তরে তথ্যভিত্তিক বিশদ রিপোর্ট প্রকাশিত হলে প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসে। কিন্তু সপ্তাহখানেক না যেতেই অজ্ঞাত সুতার টানে প্রশাসন হাল ছেড়ে দেয়। অগত্যা দিনরাতের জমজমাট ক্যাসিনো ফের জমকালো আসরের মতো স্বমূর্তিতে ফিরে আসে।

সূত্র জানায়, ক্যাসিনো নামে রাজধানীতে জমজমাট ১২টি ক্লাব। এসব জুয়ার আসর থেকে যুবলীগের নামে দৈনিক ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ চাঁদা তোলা হয়। প্রতিটি ক্লাব থেকে দৈনিক চাঁদা নির্ধারণ করা আছে ১০ লাখ টাকা। সে হিসাবে দৈনিক চাঁদার পরিমাণ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। মাসে চাঁদা ওঠে ৩৬ কোটি টাকা।

বছরে এই টাকার পরিমাণ ৪৩২ কোটি, যা অবিশ্বাস্য বটে। তবে বিশাল অঙ্কের এই টাকার ভাগ যায় সরকারি দলের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের পকেটে। প্রতি মাসে চাঁদা হিসেবে আদায় করা এই টাকাকে বলা হয় ‘প্রক্রিয়ার টাকা’।

বুধবার অভিযান শুরু হয়েছে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত যুবলীগের প্রথমসারির কিছু নেতার বিরুদ্ধে। তবে সংশ্লিষ্টদের কয়েকজন বুধবার যুগান্তরের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পর্দার আড়ালে থাকা যেসব প্রভাবশালী সবচেয়ে বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, তাদের নাম তো সামনে আসছে না। তারাও চান দেশ ও সমাজের স্বার্থে এই বেআইনি ব্যবসা বন্ধ হোক। কিন্তু জড়িত সবাইকেই ধরতে হবে।

সূত্র বলছে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যে জুয়ার আস্তানাগুলোয় সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকার জুয়াজগতের অঘোষিত সম্রাট হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট পলাতক। তার অন্যতম প্রধান সহযোগী আরেক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন।

ক্যাসিনো ব্যবসার প্রধান ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ক্ষমতাধর যুবলীগ নেতা খোরশেদ আলম ও আরমানও গা ঢাকা দিয়েছেন। ১৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাত থেকে ক্যাসিনোগুলোয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপরতা শুরু করে। সম্রাটের কাকরাইলের আস্তানায় ডিবি ও র‌্যাব সদস্যরা তল্লাশি শুরু করলে ক্যাসিনো জগতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একে একে জুয়ার আস্তানাগুলো বন্ধ হতে শুরু করে।

যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও আরমান
যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও আরমান

টাকার বস্তা নিয়ে সিঙ্গাপুরে : যুবলীগ দক্ষিণের নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট টাকার বস্তা নিয়ে জুয়া খেলতে যান সিঙ্গাপুরে। প্রতি মাসে অন্তত ১০ দিন তিনি সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলেন। এটি তার নেশা। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় জুয়ার আস্তানা মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনোতে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকেও আসেন জুয়াড়িরা।

কিন্তু সেখানেও সম্রাট ভিআইপি জুয়াড়ি হিসেবে পরিচিত। প্রথমসারির জুয়াড়ি হওয়ায় সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করার বিশেষ ব্যবস্থাও আছে। এয়ারপোর্ট থেকে মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনো পর্যন্ত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিলাসবহুল গাড়ি ‘লিমুজিন’যোগে।

সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতে গেলে সম্রাটের নিয়মিত সঙ্গী হন যুবলীগ দক্ষিণের নেতা আরমানুল হক আরমান, মোমিনুল হক সাঈদ ওরফে সাঈদ কমিশনার, সম্রাটের ভাই বাদল ও জুয়াড়ি খোরশেদ আলম।

এদের মধ্যে সাঈদ কমিশনারের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি ১০ বছর আগে ঢাকায় গাড়ির তেল চুরির ব্যবসা করতেন। এখন তিনি এলাকায় যান হেলিকপ্টারে চড়ে। এমপি হতে চান আগামী দিনে। যার তোড়জোড় শুরু হয়েছে এখন থেকে। দোয়া চেয়ে এলাকায় লাগানো হচ্ছে পোস্টার।

চুঙ্গি ফিট : যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের অফিস রাজধানীর কাকরাইলে রাজমণি সিনেমা হলের উল্টোপাশে। সেখানেও গভীর রাত পর্যন্ত ভিআইপি জুয়া খেলা চলে। প্রতিদিনই ঢাকার একাধিক বড় জুয়াড়িকে সেখানে জুয়া খেলার আমন্ত্রণ জানানো হয়।

কিন্তু সম্রাটের অফিসে খেলার নিয়ম ভিন্ন। সেখান থেকে জিতে আসা যাবে না। কোনো জুয়াড়ি জিতলেও তার টাকা জোরপূর্বক রেখে দেয়া হয়। নিপীড়নমূলক এই জুয়া খেলার পদ্ধতিকে জুয়াড়িরা বলেন ‘চুঙ্গি ফিট’।

অনেকে এটাকে ‘অল ইন’ও বলেন। জুয়াজগতে ‘অল ইন’ শব্দটি খুবই পরিচিত। অল ইন মানে একেবারেই সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া। সংসারের ঘটিবাটি বিক্রি করে একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার মতোই জুয়াড়িদের অল ইন হওয়া।

বন্ধ হয় না ক্লাব : রমরমা ক্যাসিনো ব্যবসার জন্য ঢাকার বেশ কয়েকটি ক্লাব ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। ক্লাবের হলরুম ভর্তি জুয়াড়িরা থাকেন জুয়ায় মত্ত। ক্যাসিনোর নিয়ম অনুযায়ী জুয়া খেলতে গেলে খাবার ফ্রি। প্রায় প্রতিটি ক্লাবে উন্নতমানের খাবার ও মদ-বিয়ার পরিবেশন করা হয়।

রাত গভীর হলে ক্যাসিনোতে উঠতি মডেল ও শোবিজ জগতের গ্লামার গার্লরা আসতে শুরু করেন। আকর্ষণীয় মেকআপ আর পাশ্চাত্য পোশাকে হলরুমে এসে আড্ডায় মেতে ওঠেন তারা। গ্লামার গার্লদের উপস্থিতি জুয়াড়িদের মাথা ঘুরিয়ে দেয়। এ সময় তারা মদের নেশায় মাতাল হয়ে আরও বড় বড় টাকার বাজি ধরেন।

একপর্যায়ে একরাতেই নিঃস্ব হয়ে যান অনেকে। কোটি টাকা হেরে শেষ রাতে বাড়ি ফেরার টাকাও থাকে না অনেকের। তখন ক্যাসিনো থেকে বাড়ি ফেরার খরচ হিসেবে জুয়াড়ির হাতে মাত্র দেড় হাজার টাকা ধরিয়ে দেয়া হয়। ক্যাসিনোর ভাষায় এটাকে ‘লুজিং মানি’ বলা হয়।

তবে জুয়ার নেশায় মত্ত জুয়াড়িরা শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফেরার দেড় হাজার টাকাও নিয়ে যেতে পারেন না। বেশির ভাগ জুয়াড়ি যাতায়াত খরচ হিসেবে পাওয়া এই টাকাও জুয়ার বোর্ডে হেরে খালি হাতে বাড়ি ফেরেন।

ঢাকার ক্যাসিনোতে প্রায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া একজন জুয়াড়ি জানান, তিনি তৈরি পোশাকের ব্যবসা করতেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তার দুটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন ছিল। আফতাবনগর ও পান্থপথে ৩টি ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন তিনি। নিজের বাড়ি ছিল মালিবাগে। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে গিয়ে তিনি সর্বস্বান্ত হন।

ঢাকার ১২টি ক্লাবে জুয়া চললেও মূলত রমরমা অবস্থায় ফকিরাপুল ইয়াংম্যানস ক্লাব, আরামবাগ ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, অ্যাজাক্স ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, সৈনিক ক্লাব ও কলাবাগান ক্লাব। এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, পল্টনের জামাল টাওয়ার, যুবলীগ নেতা সম্রাটের কাকরাইলের অফিসসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় গভীর রাত পর্যন্ত ক্যাসিনো চলে।

জুয়া খেলার মেশিন আমদানি : রাজধানীর ক্যাসিনোগুলোয় এতদিন ঘুঁটি ও তাসের মাধ্যমে জুয়া খেলা চললেও দিন দিন পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। সরকারদলীয় নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জুয়া অনেকটাই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এমনকি বেশ কয়েকটি ক্যাসিনোর মালিক জুয়ার বৈধতা চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ খাতে বৈধ ট্রেড লাইসেন্স দেয়ারও দাবি করেন কেউ কেউ। এমন প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থার কারণে এখন প্রায় প্রতিটি ক্লাবে জুয়া খেলা চলে মেশিনে। দুই ধরনের মেশিন রয়েছে। একটি হচ্ছে রোলেট, আরেকটির নাম স্লট।

জুয়া খেলার জন্য সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে এসব মেশিন ব্যবহৃত হয়। চীন থেকে জুয়া খেলার এসব মেশিন আমদানি করা হচ্ছে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে। একেকটি মেশিনের দাম ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা। মেশিনে প্লাস্টিকের চিপস ব্যবহার করে জুয়া খেলতে হয়। মূলত দ্রুত সময়ে ‘বড় ডিল’ খেলার জন্য ব্যবহৃত হয় এসব মেশিন। প্রতিটি ডিলে বেটিং ধরা হয় ২০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com