বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শুণ্য পদে শুধু মাত্র জগন্নাথপুর উপজেলার অধিবাসী হওয়ার শর্তে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক আবেদন পত্র গ্রহণ করা হলেও অধিকাংশ প্রার্থী বহিরাগত বলে জানা গেছে। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বিগত বছরের মতো এবারও বহিরাগতদের দৌরাত্ব্য বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় উপজেলার চাকুরী প্রার্থীরা উৎকন্ঠায় রয়েছেন। ভুয়া নাগরিক সার্টিফিকেট সংগ্রহের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দা সেজে সহকারি শিক্ষক পদে চাকুরি লাভের জন্য এবারও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে তাদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে আবারও সংশয় দেখা দিয়েছে। গত বছরও এই উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা সেজে ভুয়া নাগরিক সনদপত্র নিয়ে কয়েকজন প্রার্থী চাকুরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জ জেলায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে ১৮৮৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলায় রয়েছেন ৫০১ জন। তারমধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থীই উপজেলার বাইরের প্রার্থী। যা সরকারি নীতিমালা পরিপন্তী।
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা চলতি মাসে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরীক্ষা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। সে লক্ষ্যে প্রার্থীদের নাগরিক সার্টিফিকেটসহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে মৌখিক পরীক্ষার আগে। এজন্য গত কয়েকদিন ধরে জগন্নাথপুর পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া নাগরিক সনদপত্র সংগ্রহের চেষ্ঠা চলছে।
জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়াা হলদিপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হিরা মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন ধরে কয়েকজন বহিরাগত লোক নাগরিক সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন । কিন্তুু আমরা স্থানীয় অধিবাসী ছাড়া কোন বহিরাগত ব্যক্তিকে ভুয়া নাগরিক সনদ দেব না।
জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ¦ আব্দুল মনাফ জানান, বহিরাগতদের বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। ভুয়া কাউকে নাগরিক সনদপত্র আমরা দেবনা।
উল্লেখ্য প্রবাসি অধ্যুষিত এ উপজেলার অধিকাংশ মানুষই প্রবাস নির্ভরশীল। এক সময় এই উপজেলায় স্থানীয়দের লেখাপড়ার প্রতি অমনযোগীতা ও সরকারী চাকুরীতে আগ্রহ কম ছিল। বিদেশ মুখী প্রবনতা ছিল বেশি। কিন্তু বর্তমানে বিদেশে যাওযার সুযোগ কঠিন ও সংকুচিত হওয়ায় বিদেশ মুখী প্রবণতা কমতে শুরু হওয়ায় এখন স্থানীয় অধিবাসীরা লেখা পড়ার প্রতি মনযোগী ও সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরী করতে প্রচন্ড আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কিন্তুু বহিরাগতদের দাপটে স্থানীয়রা অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। জগন্নাথপুর উপজেলার এক শ্রেনীর অসাধু জনপ্রতিনিধিদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে বহিরাগত লোকজন ভুয়া নাগরিক সনদপত্রের মাধ্যমে চাকুরীতে প্রবেশ করে কর্মস্থলে যোগদান করেই কিছুদিন পর নিজ এলাকায় চলে যান। ফলে এ উপজেলায় দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে শিক্ষক সংকট লেগেই আছে।
জগন্নাথপুর নাগরিক অধিকার ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ নুরুল হক জানান, সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ প্রাপ্তকে স্ব স্ব এলাকায় যোগদান করার কথা। কিন্তুু আমাদের এলাকায় নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। গত বছরও কয়েকজন ভুয়া নাগরিক সনদের মাধ্যমে চাকুরি পেয়েছেন বলে আমরা খবর পেয়েছি। তাদের প্রতারণার কারণে আমাদের স্থানীয় চাকরী প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
সহকারী শিক্ষক পদে পরীক্ষার্থী খালেদ আহমদ বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও অন্য এলাকার লোকজনের দাপটে আমরা স্থানীয় অধিবাসীরা নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এবার ভুয়া নাগরিক সনদপত্র রোধে আমরা আন্দোলনে নামব।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, সহকারি শিক্ষক পদে এবার জগন্নাথপুরে ৫০১ জন উর্ত্তীণ হয়েছেন। মৌখিক পরীক্ষার তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে চলতি মাসের শেষ দিকে মৌখিক পরীক্ষা হবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, ভুয়া সনদপত্র নিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলার নাগরিক সেজে যারা ভুয়া পরিচয় দিয়ে চাকুরী নেওয়ার চেষ্ঠা করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Leave a Reply