মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ  ১৭ বছর ভোট দিতে পারেনি, প্রবাসীরা দেশে এসে ভোট দিতে চায়: জগন্নাথপুরে কয়ছর এম আহমদ শান্তিগঞ্জে এম এ সাত্তারের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল “মাফিয়া হাসিনা মুক্ত বাংলদেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রান খুলে ইফতার করতে পারছেন” _ কয়ছর আহমদ শান্তিগঞ্জে দুঃস্থদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণ আপনাদের কর্মী হিসেবে কাজ করতে চাই : কয়ছর এম আহমদ শান্তিগঞ্জে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ ১৫ই মার্চ বাংলাদেশে আসছেন সুসাস গণপাঠাগার নিয়ে মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সভাপতি শেখ একেএম জাকারিয়া শান্তিগঞ্জে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে সভা

ফিরে দেখা নুসরাত হত্যাকাণ্ড : যেভাবে পরিকল্পনা হয়

ফিরে দেখা নুসরাত হত্যাকাণ্ড : যেভাবে পরিকল্পনা হয়

জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: ফেনীর সোনাগাজি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলার সূত্র ধরে ৬ই এপ্রিল মাদ্রাসার ছাদে নুসরাত জাহান রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ১০ই এপ্রিল সে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যায়।

মামলাটি নিয়ে স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ ওঠার পর ৯ই এপ্রিল মামলাটি তদন্তের ভার দেয়া পিবিআইকে। গত ১৩ই এপ্রিল পিবিআই প্রধান বনজ কান্তি মজুমদার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে আসামিদের মধ্যে যে পরিকল্পনা হয়েছিলো তা তুলে ধরেন।

গ্রেপ্তারের পর গত ৪ঠা এপ্রিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার সঙ্গে কারাগারে দেখা করে আসামি নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীমসহ তাদের অন্য সহযোগীরা। তখন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা তার অনুগত শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিলেন, তোমরা কিছু একটা করো।
এরপর অধ্যক্ষের কাছ থেকে সম্মতি পাওয়ায় খুশি হয় শামীম। রাফিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় প্রতিশোধের স্পৃহা জাগে শামীমের মধ্যে। ওস্তাদের নির্দেশনা পাওয়ার পর নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন ও হাফেজ আবদুল কাদের পরদিন মাদ্রাসার পাশের পশ্চিম হোস্টেলে বসে নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করে।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাফিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল শাহাদাত হোসেন শামীম।
কিন্তু রাফি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এজন্য এর আগে একবার শামীম ও তার সহযোগিরা রাফিকে চুনকালি মেরেছিল। যে কারণে রাফিকে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছিল পাহাড়তলী হাসপাতালে। তবে সে ঘটনা গণমাধ্যমে আসেনি। সে ঘটনা তারা সামাল দিয়ে ফেলেছিল। এরপর ২৭শে মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার দ্বারা শ্লীলতাহানির ঘটনাও তারা সামলে ফেলেছিল। এটাই রহস্য। এতসব ঘটনা ঘটিয়েও তারা পার পেয়ে গিয়েছিল। সে কারণে তারা মনে করেছিল, এগুলো ঘটানো কোনও বিষয় নয়। আগুনে পুড়িয়েও তারা পার পেয়ে যাবে।

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, কারাগারে সিরাজ উদ্দৌলার সঙ্গে দেখা করে ৫ই এপ্রিল পরিকল্পনায় বসে নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন ও হাফেজ আবদুল কাদেরসহ পাঁচজন। পরিকল্পনার শুরুতেই রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার প্রস্তাব দেয় শামীম। নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার জন্য দু’টি কারণ তারা সামনে নিয়ে আসে। একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করে আলেম সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করা। অন্যটি হচ্ছে শাহাদাত হোসেন শামীমের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা। কীভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে সেটাও বলে সে। এরপর তারা রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। সেটা বাস্তবায়নের জন্য দুই মেয়েসহ আরও পাঁচজনকে বিষয়টি অবহিত করে তারা। তারা প্রত্যেকেই ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। ওই পাঁচজনের মধ্যে ছিল দু’জন মেয়ে।

ওই দুই মেয়ের মধ্যে একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয় তিনটি বোরকা ও কেরোসিন জোগাড় করে নিয়ে আসার জন্য। ওই মেয়েটি তিনটি বোরকা ও পলিথিনে করে কেরোসিন নিয়ে এসে শামীমের কাছে হস্তান্তর করে। মাদ্রাসাটি একটি সাইক্লোন সেন্টারে। সেখানে সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত ক্লাস হয়। ক্লাস শেষে কেরোসিন ও বোরকা নিয়ে তারা ছাদে চলে যায়। ছাদে দু’টি টয়লেটও ছিল। আলিম পরীক্ষা থাকায় সেই টয়লেটে তারা লুকিয়ে থাকে। পরে পাবলিক পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চম্পা কিংবা শম্পা নামের একটি মেয়ে রাফিকে বলে, ছাদে কারা যেন তার বান্ধবী নিশাতকে মারধর করছে। তখন রাফি দৌড়ে ছাদে যায়। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা শামীমসহ বোরকা পরা চারজন রাফিকে ঘিরে ফেলে এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেবে কিনা জানতে চায়। রাফি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তারই ওড়না দিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলে। এ সময় বোরকা ও কেরোসিন সরবরাহ করা মেয়েটিও সেখানে ছিল। হাত বেঁধে রাফির শরীরে আগুন লাগিয়ে তারা দ্রুত নিচে নেমে অন্যদের সঙ্গে মিশে যায়।

ছাদ থেকে চিৎকার করলেও বাইরে থেকে সে আওয়াজ শোনা যায়নি। কারণ, অনেকটা ফাঁকা জায়গায় সাইক্লোন সেন্টারটি।

ঘটনার সময় মাদ্রাসার বাইরের গেটে নুর উদ্দিন ও হাফেজ আবদুল কাদেরসহ ৫ জন বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার দায়িত্ব ছিল তাদের। আরও একজনের নাম পাওয়া যায়, যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যায়। ঘটনা ঘটিয়ে শামীমরা বাইরের লোকদের মধ্যে মিশে যায়। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষে সবাই গাঢাকা দেয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com