শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৪ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক ::
পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। সার্বিক বিবেচনায় সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেটের কাছে পরাজিত হয়েছে সব উদ্যোগ। পেঁয়াজের দামে কারসাজিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সরাসরি জড়িত। এ কারণে সারা দেশে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, পেঁয়াজের দাম কমাতে ব্যর্থ সরকার। নানা উদ্যোগের পরও সরবরাহ পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। ফলে দাম এখনও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তিনি বলেন, সরকার ব্যবসাবান্ধব। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সরকারকে সাহায্য করছে না। তারা দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এ অবস্থার উত্তরণে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, কমলাপুর এবং নয়াবাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২৩০-২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ৫ দিন আগেও একই দাম ছিল। এছাড়া মিয়ানমার ও মিসরের পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর পেঁয়াজ পাতা প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে দেশি পেঁয়াজ ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মিয়ানমার ও পাকিস্তানের পেঁয়াজ ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পেঁয়াজের ব্যাপারে সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে পলিসিতে ভুল ছিল।
তিনি বলেন, দেশের পলিসি হল প্রতিক্রিয়াশীল। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে উদ্যোগ নেয়া হয়। আগে থেকে পরিকল্পনা করলে এ সমস্যা হতো না। আর সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে সিন্ডিকেট। তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব সরকারের।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, পেঁয়াজের চাহিদা নতুন করে তৈরি হয়নি। চাহিদা আগেও যা ছিল, এখনও তা আছে। কিন্তু সরবরাহে সমস্যা ছিল। তিনি বলেন, পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দেশটিতে এবার উৎপাদন কম হয়েছে। এটা মোটামুটি সবার জানা ছিল। বিশেষ করে পণ্যটি নিয়ে যে মন্ত্রণালয় কাজ করে তাদের না জানার কথা নয়। প্রশ্ন হল, ওই সময় কেন ব্যবস্থা নেয়া হল না। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে যেভাবে আগ্রাসীভাবে আমদানি করা হচ্ছে, এটি আগে করা হলে সংকট তৈরি হতো না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজের দাম কমিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। সমুদ্রবন্দরসহ আকাশপথেও পণ্যটি আনা হচ্ছে। দেশে ৪-৫টি ফ্লাইট বুক করে পেঁয়াজ আনা হয়েছে। আর প্রতিদিনই এক থেকে দেড় হাজার টন পেঁয়াজ দেশে আসবে।
রাজশাহী : মহানগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে প্রতিদিন টিসিবির ডিলার ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করে। প্রতিদিন সকাল ১০টায় ট্রাক আসার আগেই পেঁয়াজ কিনতে আসা মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু শনিবার পেঁয়াজ ক্রেতারা নিজে লাইনে না দাঁড়িয়ে থেকে ইট, ব্যাগ, খবরের কাগজকে লাইনে রেখে দেন। এমন দীর্ঘ দুটি লাইন দেখে হাসাহাসি করেন অনেকে। রাজশাহীতে পেঁয়াজের বাজার এখনও অস্থিতিশীল। ২৪ নভেম্বর থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি চলছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সেদিন থেকে নগরীর পাঁচটি পয়েন্ট থেকে পেঁয়াজ কিনছেন ক্রেতারা। মানুষের এত ভিড় নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য থাকে পুলিশি পাহারাও।
মাদারীপুর : কৃষক ইসকান দড়ি (৭০) বাজারের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত থেকে ঘুরছেন একটু কমদামে পেঁয়াজ কেনার জন্য কিন্তু খেটে খাওয়া কৃষকের নির্বাক চাহনিতে মেলেনি কম দামে পেঁয়াজ। অথচ মৌসুমের শুরুতে ৮-১০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে তিনিই বাধ্য হয়েছেন। কিছুদিন রেখে সেই পেঁয়াজ ১৮-২০ টাকায় বেচলেও তার চালান উঠেনি। অথচ এখন তাকেই কিনতে হচ্ছে ১৩০ টাকার বেশি দরে। ৫-৬ মাস আগে যে পেঁয়াজ ৮-১০ টাকা কেজি দরে বিক্রিতে বাধ্য হয়েছিলেন কৃষক সেই পেঁয়াজের দামই এখন ১৩০ টাকারও বেশি।
Leave a Reply