শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:০৯ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছেই। নতুন আরো তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। তিনজনের মধ্যে দুজন শিশু, একজন নারী। শিশুদের বয়স ১০ বছরের নিচে। নতুন রোগীরা বিদেশ ফেরত আক্রান্তদের একজনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল করোনা ভাইরাস নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এই তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানান, এ নিয়ে দেশে মোট আটজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। প্রথম আক্রান্ত হওয়া তিনজন অবশ্য সেরে উঠেছেন।
তারা বাড়ি ফিরে গেছেন। করোনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় ১৮ই মার্চ থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৮ই মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া তিনজনের কথা জানায় আইইডিসিআর। আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী ছিলেন। তিনজনের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে সমপ্রতি দেশে ফিরেছেন। তাদের কাছে থেকে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রথম আক্রান্ত নারী। এরপর ১৪ই মার্চ রাতে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে আরো দুজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই দুজনের মধ্যে একজন ইতালি থেকে এবং অন্যজন জার্মানি থেকে সমপ্রতি দেশে এসেছেন। গতকাল আবার নতুন করে তিনজনের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানালো আইইডিসিআর। আর গতকালই প্রথম দেশে কোনো শিশুর এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিললো। শিশুসহ তিনজন মৃদু করোনা ভাইরাসের উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এছাড়া আগের আরো দুইজনসহ মোট ৫ জন হাসপাতালে শারীরিক মৃদু লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে আইইডিসিআর’র পরিচালক জানিয়েছেন। ব্রিফিংয়ে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, আক্রান্ত দুই শিশুর মধ্যে একটি ছেলে, একটি মেয়ে। দুজনের বয়স ১০ বছরের কম। এবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া তিনজন বিদেশ থেকে আসা নয়। তবে ইতালি ও জার্মানি থেকে আসা আক্রান্ত দুজনের একজনের পরিবারের সদস্য তারা। পরিচালক জানান, ২৪ ঘণ্টায় আরো ১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ২৪১টি নমুনা পরীক্ষা করেছে আইইডিসিআর। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১০জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪জন। তবে হোম কোয়ারেন্টিনের তথ্য দেননি ডা. সেব্রিনা।
করোনা ভাইরাস ঠেকাতে বিদেশ থেকে প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক। তিনি বলেন, এদের অনেকেই হোম কোয়ারেন্টিনের সরকারি নির্দেশনা মানছেন না। তারা হাট-বাজারসহ এদিক সেদিক ঘুরা ফেরা করছেন। চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াচ্ছেন। এমন খবর সরকারের কাছে আসছে প্রতিদিনই। এতে করে দেশে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বিদেশ ফেরতরা যদি ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন নিয়ম না মানেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আবারো হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। জরিমানারও সুযোগ থাকবে বলে উল্লেখ করেন। ডা. ফ্লোরা বলেন, আক্রান্ত দেশ থেকে যারা আসবেন, তাদের সবাইকে নজরদারিতে রাখা হবে। প্রশাসন, স্থানীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা তাদের ওপর নজর রাখবেন। তারা কোনো নিয়ম না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইইডিসিআর পরিচালক আবারো বলেন, সরাসরি আইইডিসিআর আর নমুনা গ্রহণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। আইইডিসিআর’র হোটলাইনে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবেন। আসার প্রয়োজন নেই। তিনি সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, আতংকিত হবেন না। সব ধরনের সমাবেশ বন্ধ রাখার কথা বলেন তিনি। ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআর’র-এ ৩ হাজার ৭৬৯টি ফোন কল এসেছে। এরমধ্যে ৩ হাজার ৭২২টি করোনা সম্পর্কিত কল।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনার প্রাদুর্ভাব হয়। পরে তা চীনসহ সারা বিশ্বের দেড়শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনা। দিন দিন নতুন আক্রান্তকারী দেশের সংখ্যা বাড়ছে। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দেড় লাখের উপরে।
৩১শে মার্চ পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে বন্ধ ঘোষণা করা হলো সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়ার পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছিলো অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে। পরে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সাময়িক বন্ধের এই সিদ্ধান্ত আসে।
বৈঠক শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, আগামীকাল (আজ) এমনিতেই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। আর ১৮ই মার্চ থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। তবে আমাদের দেশে তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের উদ্বেগ থেকে মন্ত্রী পরিষদের সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
ডা. দীপু মনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হবে। অন্যথায় বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে গ্রীষ্মের ছুটি ঘোষণা করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দিনগুলোতে সকল শিক্ষার্থীদের নিজ বাড়িতে থাকতে হবে। এ বিষয়টি অভিভাবকদের নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে আর শিক্ষার্থী বাইরে ঘোরাফেরা করবে, তা করা যাবে না। বন্ধের পুরো সময়টা নিজ বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করতে হবে। এ বিষয়ে অভিভাবকদের পরামর্শও দেন তিনি।
মুজিব শতবর্ষের (আজ) সকল কর্মসূচি আগেই বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে পালিত হবে।
আগামী ১লা এপ্রিল থেকে পূর্বনির্ধারিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা (এইচএসসি) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই পরীক্ষা পেছানোর বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই নিয়ে আপাতত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়াও মন্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টার বন্ধের কথা জোড় দিয়ে উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, কোচিং সেন্টার অবশ্যই বন্ধ থাকবে।
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ জাতীয় সংসদ ভবনে বৃক্ষ রোপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী। বিজ্ঞপ্তিতে বৃক্ষ রোপনের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ২৫ জনের বেশি জমায়েত হতে নিষেধ করা হয়েছে।
অপরদিকে, গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, আমরা সমন্বয় করে কাজ করছি। মঙ্গলবার মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা চিঠি সারাদেশে ৬৫ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর পাঠ কর্মসূচিতে থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর এ চিঠি ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে সকল প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে তা পাঠ করবে।
প্রতিমন্ত্রীও বন্ধের সময়টা শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ সময় বাইরে ঘোরাফেরা করা যাবে না। বাসায় বসে লেখাপড়া করতে হবে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তাহলে আবারও স্কুল খোলা হবে। এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
সকল পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও পরামর্শ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য সকল পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত: স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত পরীক্ষাসমূহের সংশোধিত তারিখ ও সময় পরবর্তীতে জানানো হবে।
এছাড়া ১৮ই মার্চ থেকে ২৮শে মার্চ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আবাসিক হল খোলা থাকবে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ডিনস কমিটির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
১৮ই মার্চ থেকে আগামী ৩১শে মার্চ পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)’র একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ সকল আবাসিক হল বন্ধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও (বেরোবি)। ১৮ই মার্চ থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের সহকারী প্রশাসক তাবিউর রহমান প্রধান।
বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও (চবি), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ১৭ই মার্চ থেকে ২রা এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ১৯শে মার্চ সকাল ১১টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আবু তাহের জানান, ১৮ই মার্চ থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। সেইসঙ্গে বন্ধ থাকবে আবাসিক হলগুলোও। বন্ধ ঘোষণা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। ১৮ই মার্চের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply