বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ জাতীয় নেতা সাবেক পররাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যু বার্ষিকী আজ। এউপলক্ষে রাজধানীতে কলাবাগানের বাসাসহ জগন্নাথপুর সিলেট,সুনামগঞ্জে দিবসটি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ দলীয় অফিসে বিকেলে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। সামাদ আজাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগেও পৃথক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। আব্দুস সামাদ আজাদ ছিলেন একজন বিচক্ষন রাজনীতিবীদ ও ক্ষনজন্মা পুরুষ।
১৯২৬ সালের ১৫ জানুয়ারী সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার হাওর বেষ্টিত ভুরাখালী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন প্রয়াত এ জাতীয় নেতা । তার পিতা মরহুম মোহাম্মদ শরিয়ত উল্লাহ।
আব্দুস সামাদ আজাদ ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও ইতিহাস বিষয়ে তিনি এম এ পাশ করেন। তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে সরকার তার এম এ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং আসাম অঞ্চলের বিভিন্ন আঞ্চলিক বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগ্রামের সাথে সামাদ আজাদ সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এ কারণে ইংরেজ শাসক কর্তৃক গ্রেফতার ও নির্যাতনের স্বীকার হন এবং তার প্রথম কারা জীবন শুরু হয়। ১৯৪৪-৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি সিলেট জেলা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনেও রয়েছে এ রাজনীতিবিদের সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করতে গিয়ে কারা বরণ করেন। ১৯৫৩ সালে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে রাজনীতির লাইম লাইটে আসেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) আওয়ামীলীগের শ্রম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ সালে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেয়ায় পাক সামরিক সরকার পুনরায় তাকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারীর পর তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং ৪ বছর কারাভোগ করে ১৯৬২ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সৃষ্ট ষড়যন্ত্র মূলক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করতে গিয়ে কারারূদ্ধ হন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তুানের গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়নে তিনি সুনামগঞ্জ জেলার ২ ও ৩নং আসন জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-৩ আসন এবং দিরাই-শাল্লা-ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ-২,দু’টি আসনে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার (স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার) প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। বাঙালী জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব আব্দুস সামাদ আজাদ ছিলেন মুজিবনগর সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা (পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা) পরে তিনি কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে তিনি আবারো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হন। সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে তিনি টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে তিনি বিরোধীদলীয় উপনেতা নিযুক্ত হন। মৃত্যুর আগ পযন্ত তিনি আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যর পাশাপাশি সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্যর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল বাধ্যকজনিত কারণে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। প্রয়াত জাতীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদের ১৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালন উপলক্ষে আজ ২৭ এপ্রিল শুক্রবার জাতীয়ভাবে কর্মসূচীর পাশাপাশি সামাদ আজাদের নিজ উপজেলা জগন্নাথপুর উপজেলা আ.লীগের উদ্যোগে সামাদ আজাদের রূহের মাগফেরাত কামনায় বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও দলীয় কার্যালয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। জগন্নাথপুর পৌরসভার ও আব্দুস সামাদ আজাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল,বিশেষ প্রার্থনা ,আলোচনাসভা ও সামাদ আজাদের গ্রামের বাড়ি ভূরাখালিতে সামাদ পরিবারের উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল, ও শিরণি বিতরণ করার কর্মসূচী পালন করা হবে।
Leave a Reply