শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্কঃ চালকের অসতর্কতায় বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চ ডুবে প্রাণ হারালেন ৩২ জন নিরীহ যাত্রী। ঢাকা নদীবন্দরের (সদরঘাট) খুব কাছাকাছি সোমবার সকালে এক মর্মান্তিক নৌ-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ‘এমএল মর্নিং বার্ড’ লঞ্চের ৩২ যাত্রী।
এদিন ৯টা ১২ মিনিটে ‘এমভি ময়ূর-২’ লঞ্চের ধাক্কায় মুহূর্তে ডুবে যায় যাত্রীবাহী ছোট লঞ্চ ‘মর্নিং বার্ড’। নিহতদের মধ্যে ৯ জন নারী ও ৩টি শিশু। নিহতদের বেশিরভাগই মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা। সন্ধ্যার মধ্যে সব কটি লাশ শনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই নদীর মধ্যে ট্রলারে এবং দুই পাড়ে ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ। স্বজন হারানোর আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে সদরঘাট ও আশপাশের এলাকা। রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (এসএসএমসি) হাসপাতাল থেকে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সেখানেও চলে শোকের মাতম। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখ বেয়ে পানি পড়তে দেখা যায়। স্বজন হারিয়ে অনেককেই বলতে দেখা গেছে, ‘আজকের মতো আর কোনো সকাল যেন কারও জীবনে না আসে।’
এ দুর্ঘটনায় দুটি লঞ্চের সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন সনদ স্থগিত করেছে নৌপরিবহন অধিদফতর। ময়ূর-২ লঞ্চটিকে আটক করা হয়েছে। লঞ্চের চালক পালিয়ে গেছে।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার নৌ-আদালতে মামলা দায়েরের কথা রয়েছে। এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মন্তব্য করেছেন নৌপ্রতিমন্ত্রী। দুর্ঘটনার পর লঞ্চটির অবস্থান চিহ্নিত করা হলেও উদ্ধার করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলছিল।
দিনভর নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও রেড ক্রিসেন্ট সদস্যদের যৌথ অভিযানে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। অনেক যাত্রী সাঁতরে জীবন বাঁচান। তাদের মধ্যে একজন সাইফুল (২৪)। তিনি মর্নিং বার্ড লঞ্চে তার ছোট ভাই সায়েমকে (১৮) নিয়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসছিলেন। লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণ কেড়ে নিয়েছে সায়েমের।
ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন সাইফুল। তারা দুই ভাই ঢাকায় পিভিসি পাইপ কাটিংয়ের কাজ করেন। ভাইয়ের লাশ দেখে সাইফুলের আর্তচিৎকারে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি আপশাশের মানুষ। ঘটনার বিবরণ দিয়ে সাইফুল যুগান্তরকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের শুরুতে বাড়ি চলে যাই। অভাবের পরিবারকে খাবার তুলে দিতে দুই ভাই ঢাকায় আসছিলাম।
আমরা দু’জনেই লঞ্চের দোতলায় সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ বড় লঞ্চের ধাক্কায় আমাদেরটা ডুবে যাচ্ছিল। আমি নদীতে লাফ দিই। আমার ভাইকেও লাফ দিতে বলি।’ পরে আর ভাইকে পাইনি বলে চিৎকার শুরু করেন সাইফুল। এ সময় বুক চাপড়ে সাইফুল বলতে থাকেন, ‘ভাইরে তুই মারা গেলি, আমি কী নিয়ে বাড়ি ফিরব।’
নিজের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসছিলেন অসুস্থ লিটন খান। দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী বিউটি বেগম মারা গেলেও বেঁচে গেছেন তিনি। মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীর লাশ দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন লিটন খান। দুর্ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মর্নিং বার্ডের দোতলায় স্ত্রী বিউটি বেগমের সঙ্গে বসেছিলাম। হঠাৎ লঞ্চে ধাক্কার শব্দ পেয়েছি। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দেখি পানিতে ডুবে যাচ্ছি। আর কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। কীভাবে উদ্ধার হয়েছি ও হাসপাতালে এসেছি জানি না। পরে স্ত্রীর লাশ পেয়েছি’-বলেই কাঁদতে থাকেন তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ, নৌপরিবহন অধিদফতর ও নৌ-পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক আবহাওয়ায় শান্ত নদীতে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের বড় লঞ্চ এমভি ময়ূর-২ ধাক্কা দিলে মুহূর্তেই ডুবে যায় মর্নিং বার্ড লঞ্চটি।
মর্নিং বার্ড লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম (কাঠপট্টি) থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। অপরদিকে ময়ূর-২ লঞ্চটি কেরানীগঞ্জে অলস বসে থাকাবস্থায় পেছনে চালিয়ে এসে লালকুঠি ঘাটের দিকে আসার সময় মর্নিং বার্ডকে ধাক্কা দেয়। তবে একটি ডকইয়ার্ডের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মর্নিং বার্ড লঞ্চটির বাম পাশ দিয়ে ময়ূর-২ লঞ্চটি যাওয়ার সময় আঘাত হানে। এক পর্যায়ে ময়ূর-২ লঞ্চের সামনে চলে এলে ধাক্কায় ডুবে যায় মর্নিং বার্ড। সব মিলিয়ে ৩০ সেকেন্ডে ঘটে এ দুর্ঘটনা।
বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের কারও মতে, লঞ্চটির যাত্রীসংখ্যা ৭০-৮০ জন। আবার কারও মতে, একশ’র বেশি ছিল। হঠাৎ ধাক্কার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা বুঝে ওঠার আগেই লঞ্চ ডুবে যাওয়ায় প্রাণহানি বেশি হয়েছে। বেশকিছু যাত্রী সাঁতরে কিনারে আসতে পেরেছেন। এ লঞ্চটিতে
মুন্সীগঞ্জের চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা বেশি যাতায়াত করতেন। ময়ূর-২ লঞ্চে কোনো যাত্রী ছিল না। জানা গেছে, লঞ্চডুবির পরপরই আশপাশে থাকা নৌকা ও ট্রলারের মাঝি ও যাত্রীরা উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে বিভিন্ন সংস্থার ডুবুরিরা এতে অংশ নেন। যে স্থানে লঞ্চটি ডুবেছে সেখানে ৪০-৪৫ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে।
লঞ্চটি উদ্ধারে নারায়ণগঞ্জে থাকা বিআইডব্লিউটিএ-র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় রওনা হয়ে দুপুরে শ্যামপুর পর্যন্ত এলেও পোস্তগোলা ব্রিজের কারণে সেখানে আটকে যায়। পরে স্থানীয় এয়ার লেপ্টিং পদ্ধতিতে লঞ্চটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। এ পদ্ধতিতে ডুবন্ত জাহাজের শরীরে ৬টি বিশেষ প্লাস্টিক-জাতীয় বেলুন বেঁধে দেয়া হবে। ওই বেলুনে হাওয়া ফুলিয়ে লঞ্চটি ভাসিয়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। রাত ১০টা পর্যন্ত এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছিল।
বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এছাড়া দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান বিআইডব্লিউটিএসহ বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। দুপুরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও নৌসচিব সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে মনে হয়েছে এটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এক্ষেত্রে লঞ্চ মালিকদের গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রতিমন্ত্রী বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ দুর্যোগ তহবিল থেকে লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা করে দেয়ার কথা জানান। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে দাফনের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে ১০ হাজার করে টাকা এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে।
ঘটনস্থল সরেজমিন দেখা গেছে, উদ্ধারস্থলে উৎসুক মানুষের ভিড়। কিছু সময় পর পর নৌপুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা মাইকিং করে উৎসুক মানুষকে সরে যেতে মাইকিং করেন। এর মধ্যেই নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএ’র ডবুরিরা অভিযান চালান। প্রথম পর্যায়ে দীর্ঘ সময় অভিযান চালানোর পর তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এরপরই অল্প সময়ের ব্যবধানে একের পর এক লাশ উঠতে থাকে। বিকাল পর্যন্ত ৩০টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এসব লাশ সারিবদ্ধ অবস্থায় দুটি ট্রলারে রাখা হয়। এছাড়া মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা দু’জনকে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে সবগুলো লাশ মিডফোর্ট হাসপাতালে নেয়া হয়।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, মিজানুর রহমান (৩২), সত্যরঞ্জন বনিক (৬১), শহিদুল আলম (৬২), সুফিয়া বেগম (৫০), মনিরুজ্জামান (৪২), সুবর্না আক্তার (২৮), মুক্তা (১২), সেলিম হোসেন ভূঁইয়া (৫০), আফজাল শেখ (৪৮), বিউটি (৩৮), ময়না (৩৫), আমির হোসেন (৫৫), মহিম (১৭), শাহাদাৎ (৪৪), শামীম বেপারি (৪৭), মিল্লাত (৩৫), আবু তাহের বেপারি (৫৮), দিদার হোসেন (৪৫), হাফেজা খাতুন (৩৮), সুমন তালুকদার (৩৫), আয়েশা বেগম (৩৫), হাসিনা (২ মাস), আলম বেপারি (৩৮), মোসাম্মৎ মারুফা (২৮), শাহিনুর হোসেন (৪০), তালহা (০২), ইসমাঈল শেখ (৩৫), তামিম (০৭), সুমনা আক্তার (২৫), সাইদুল ইসলাম (৪২), পাপ্পু (৩০) ও বাসুদেব নাথ (৪৫)।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মর্নিং বার্ড লঞ্চটি প্রতিদিন সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে মীরকাদিম লঞ্চঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে সদরঘাট আসে। এ লঞ্চটিতে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন পেশার মানুষ যাতায়াত করেন। সার্ভে সনদ অনুযায়ী, এ লঞ্চটির দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ৩৫ মিটার, প্রস্থ ৪ দশমিক ৯৩ মিটার ও গভীরতা ১ দশমিক ৪৯ মিটার। এ লঞ্চটির দু’জন মালিক জয়নাল আবেদিন ও এমএ গফুর মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা।
লঞ্চটিতে দিনে ধারণ ক্ষমতা ৯০ জন। লঞ্চটি একজন তৃতীয় শ্রেণির মাস্টার দিয়ে পরিচালনার কথা থাকলেও এটি রুস্তুম আলী নামের একজন সুকানি চালাচ্ছিলেন। লঞ্চটির সার্ভে সনদের মেয়াদ আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। অপরদিকে ময়ূর-২ লঞ্চটির দৈর্ঘ্য ৫১ দশমিক ৮১ মিটার, প্রস্থ ৮.৩৬ মিটার ও গভীরতা ২ দশমিক ১৩ মিটার।
লঞ্চটির দিনে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৬৭৯ জন। এটির মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদ। দুর্ঘটনার সময়ে লঞ্চটি কে চালাচ্ছিলেন তা জানা যায়নি। দুর্ঘটনার পরই চালকরা পালিয়ে যান। লঞ্চটি লালকুটির এর পাশেই আটক করা হয়।
চালকের অসতর্কতায় দুর্ঘটনা : ঘটনাস্থলে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, তদন্তের আগে প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে না। তবে ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, দুই লঞ্চের চালকের অসতর্কতার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জে থাকা ময়ূরী-২ লঞ্চ পেছন দিকে আসার সময়ে মর্নিং বার্ডকে ধাক্কা দেয়।
তিনি বলেন, দুটি লঞ্চের চালক সচেতন হলে হয়তো এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। লঞ্চ মালিকদের কমিটি ঢাকা নদী বন্দর স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক মো. মামুন অর রশীদ বলেন, একটি লঞ্চ পেছনে চলার সময়ে আলাদা হর্ন দেয়ার নিয়ম রয়েছে। একজন মাস্টার পেছনে দাঁড়িয়ে কোনো নৌযান আছে কী না তা দেখবেন। এরপরই পেছনে আসার কথা। ময়ূর-২ লঞ্চের চালক তা করেননি। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর দায় তাকেই নিতে হবে, মালিকের নয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সদরঘাটের কুলি নয়ন বলেন, আমি সদরঘাটে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কেরানীগঞ্জ থেকে ময়ূর-২ লঞ্চটি পেছনে চলে আসলে মর্নিং বার্ডকে ধাক্কা দিলে সেটি ডুবে যায়। পরে আমরা কয়েকজন ট্রলার নিয়ে গিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নেই। তিনি বলেন, ময়ূর-২ লঞ্চটি দেখেশুনে আসলে এই দুর্ঘটনা হতো না। একই ধরনের কথা বলেন উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া স্থানীয় আরও কয়েকজন মাঝি ও কুলি।
লঞ্চ দুর্ঘটনায় পৃথক তিন কমিটি গঠন : লঞ্চ দুর্ঘটনায় পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন অধিদফতর ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সোমবার এসব কমিটি গঠন সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) মো. রফিকুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক এবং বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা) মো. রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিকে এ দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তি বা সংস্থাকে শনাক্তকরণ এবং দুর্ঘটনারোধে করণীয় উল্লেখ করে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- নৌ-পরিবহন অধিদফতরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিমউদ্দিন সরকার, বিআইডব্লিউটিসি’র প্রধান প্রকৌশলী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস অধিদফতরের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি ও নৌ পুলিশের একজন প্রতিনিধি।
অপরদিকে ঢাকার শিপ সার্ভেয়ার ওবায়দুল্লাহ ইবনে বশিরকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে নৌ-পরিবহন অধিদফতর। তিন সদস্যের এ কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া যুগ্ম-পরিচালক মো. জয়নুল আবেদিনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এ কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সোমবার ঘটনার পরপরই তিনটি কমিটির কয়েকজন সদস্যকে ঘটনার অনুসন্ধান চালাতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের শোক : লঞ্চডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির পক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বিবৃতিতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তারা নিহত সবার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনসহ শোকসন্তপ্ত সবার প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এছাড়া নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও নৌ-সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী শোক প্রকাশ করেন। প্রতিমন্ত্রী এক শোকবার্তায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এদিকে পৃথক বিবৃতিতে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যা-প) সংস্থা, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ব্রিটিশ হাইকমিশনারও পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেন।
Leave a Reply