শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জগন্নাথপুরে স্কুল শিক্ষার্থীর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা নতুন ইসি শপথ নেবেন রোববার দীর্ঘ ১৩ বছর পরে বিশিষ্ট কলামিস্ট, লেখক ও সাংবাদিক সায়েক এম রহমান এর বাংলাদেশে আগমন সুনামগঞ্জ-৩ আসনে সৈয়দ তালহা আলমকে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা  জগন্নাথপুরে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর; সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা জগন্নাথপুরে যুক্তরাজ্যের এএন টিভি’র পরিচালকের সঙ্গে মতবিনিময় সভা একযুগ পর সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও মজলিশে শূরা গঠন সুনামগঞ্জ- ৩ আসন; মনোনয়নের ব্যাপারে দৃড়ভাবে আশাবাদী: একান্ত সাক্ষাত কারে বিএনপি নেতা কয়ছর এম আহমদ জগন্নাথপুরে অটোরিক্সা চালক সুজিত হত্যাকাণ্ডঃ অটোরিকশা ও চাকুসহ গ্রেফতার- ৩

শতবর্ষ পরেও বঙ্গবন্ধুর খুনিরা মানুষের কাছে ঘৃণিত হবে

শতবর্ষ পরেও বঙ্গবন্ধুর খুনিরা মানুষের কাছে ঘৃণিত হবে

জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্কঃ   আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক এবং সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, মীরজাফরদের মানুষ যেভাবে দেখে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদেরও এ দেশের মানুষ সেভাবেই দেখে এবং দেখবে।

শুধু যুগের পর যুগ নয়, শতবর্ষ পরেও এ দেশের মানুষের কাছে তারা ঘৃণিত হবে। ইতিহাস কাউকে কোনোদিন ক্ষমা করে না, ক্ষমা করতে পারে না, ক্ষমা করবেও না। এরা দেশের চিহ্নিত শত্রু।

এরা ব্যক্তি মুজিবের শত্রু ছিল না। এরা ব্যক্তি মুজিবের জন্য হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে নাই। ব্যক্তি মুজিব ছিল বাংলার মানুষের প্রতিরূপ। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতিরূপ। বঙ্গবন্ধু না হলে এ দেশ স্বাধীন হতো না।

সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তরকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

আমির হোসেন আমু বলেন, ১৫ আগস্ট একদিকে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা; অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্যদের দিয়ে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন এবং সামরিক, নৌ, বিমান ও রক্ষীবাহিনীর যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের নিয়ে ওই সরকারের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন-এর মধ্যদিয়ে হত্যাকারীরা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, এটি শুধু একটি পরিবারকে হত্যা।

কিন্তু বাস্তবে এই হত্যাকাণ্ড পরিবারকেন্দ্রিক ছিল না, এটা ছিল বাংলার মানুষের আশা-আকাক্সক্ষাকে হত্যার ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হত্যার ষড়যন্ত্র। বাংলার স্বাধিকারকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র। ৩ নভেম্বর রাতের অন্ধকারে যখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হল তখন এগুলো স্পষ্ট হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জিঘাংসা ও প্রতিহিংসামূলকভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এই হত্যার মধ্যদিয়ে তারা কী চেয়েছিল, তার প্রমাণ পরে দেখেছি। ৩০ লাখ মানুষের রক্তের অক্ষরে লেখা সংবিধান থেকে জাতীয় চার নীতি ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়।

এই দেশের সংবিধানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান ছিল না, সেটা তুলে দিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে রেডিও বাংলাদেশ করা হয়। এভাবে যত পরিবর্তন, তার ধারাবাহিকতা ছিল এই দেশকে নব্য পাকিস্তানে পরিণত করা।

আমির হোসেন আমু বলেন, হত্যাকারীরা জানতে পেরেছিল, বঙ্গবন্ধুর রক্ত যদি বেঁচে থাকে তাহলে একদিন কথা বলবেই। তাই সেদিন তারা শিশু রাসেলকেও রেহাই দেয়নি। তাদের ধারণা যে অমূলক ছিল না, তা বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে আসার মধ্যদিয়ে প্রমাণ হয়েছে।

সেদিন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। রক্ষা পেয়েছিল বলেই আমরা সুযোগ পেয়েছিলাম শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করার। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার প্রতি এ দেশের মানুষের আস্থা ছিল।

তার নেতৃত্বে সংগ্রামে সফল হয়েই আমরা তাকে ক্ষমতায় আনতে পেরেছিলাম। এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার করতে সক্ষম হয়েছিলাম। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বিচারের রায় কার্যকর করতে পেরেছি।

বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন এই দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে, আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাঙালি জাতি পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করুক। তার সেই অসমাপ্ত কাজ তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছে।

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই হত্যাকারীরা ক্ষান্ত হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ যেন না হয়, তার জন্য ইনডেমনিটি অ্যাক্ট বিল পাস করেছিল।

শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা তো দূরের কথা, জিয়াউর রহমান তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। তাদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল।

জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে শুধু রাজনীতি করার অধিকারই দেয়নি, তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিল।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময় সাড়ে ১১ হাজার যুদ্ধবন্দি যুদ্ধাপরাধীর বিচারকাজ চলছিল, যাদের মধ্যে ৫২ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। প্রায় সাড়ে চারশ’ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগের রায় হয়েছিল। জিয়া ক্ষমতায় এসে একটি কলমের খোঁচায় সব যুদ্ধাপরাধী বন্দিকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয়।

এমনিভাবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করার মধ্যদিয়ে দেশটাকে আবার সাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত করে অনাচার-অবিচার শুরু করেছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংগ্রাম করে আমরা সেখান থেকে দেশকে একটা জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ২৩টি বছর সংগ্রাম হয়েছে। তিনি প্রায় সাড়ে ১৩ বছর জেলে থেকেছেন। দু’বার ফাঁসির আসামি হয়েও বাংলার মানুষের জয়গান গেয়ে বেড়িয়েছেন। তার ওপর এই দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ আস্থা রেখেছিল।

তারা বুঝতে পেরেছিল, বাঙালি জাতির মুক্তি যদি কেউ দিতে পারে-সেটা শেখ মুজিব। তাই তারা সেদিন মুজিবের পক্ষে দাঁড়িয়ে অকাতরে জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, কিছু দেশের অভ্যন্তরীণ আইনের কারণে ফাঁসির আমাসিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমি বিশ্বাস করি, তারা একটা সময় বুঝবে যে, এটা তাদের দেশের নয়, আমাদের দেশের আইনে কার্যকর করা হচ্ছে।

সুতরাং প্রতি দেশেই অন্য দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। আমরা আশা করি, আগামীতে তাদেরও দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যাচেষ্টা প্রসঙ্গে আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর যারা হত্যাকারী, যারা সেদিন পৃষ্ঠপোষকতা করেছে-সেই ঘাতকরাই বারবার চেষ্টা করেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে। তারা ১৯ বার চেষ্টা করেছে।

মহান রাব্বুল আলামিনের দোয়ায় ১৯ বারই তারা বিফল হয়েছে। তিনি বারবার শেখ হাসিনাকে নিজ হাতে তুলে বাঁচিয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রত্যক্ষদর্শী এই দেশের মানুষ। ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সেই গুলি, সেটাও এই দেশের মানুষ সাক্ষী।

কীভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র তারা করেছিল। বারবার শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, আল্লাহ শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বলেই দেশে খাদ্য খাটতি নেই। এই দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। বাংলাদেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল আজ বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করেছি। দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সেই গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে।

তারপরও আমরা সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বারবার ধৈর্য ও সাহস নিয়ে সবকিছু মোকাবেলা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো মৃত্যুকে সঙ্গী করেই তিনি জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা সেই পথ অনুসরণ করে পিতার অসমাপ্ত কাজ করে যাচ্ছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ২০২০ সাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এই বছরটি পালন করার পরিকল্পনা আমাদের ছিল।

এর মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে জাতির সামনে উদ্ভাসিত করা সম্ভব হতো। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দিন থেকেই করোনা মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মানুষকে বাঁচানোর জন্য জনসমাগম এড়াতে একদিকে যেমন অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন, অন্যদিকে জাতিকে কতগুলোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমার মনে হয় সেগুলো যদি পুরোপুরি মেনে চলা হতো, তাহলে এত মানুষ আক্রান্ত হতো না।

এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না। চলমান বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ বন্যাকে বারবার মোকাবেলা করেছে। ’৯৮ সালের বন্যার পানি তিন মাস স্থায়ী ছিল। তখন অনেকে বলেছিল, দুই কোটি মানুষ মারা যাবে। কিন্তু তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন বলেই সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছিল। তিনি মানুষকে বাঁচিয়েছিলেন।

দেশে দুর্ভিক্ষ হয়নি; বরং ২০০০ সালে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করেছিলাম। যার জন্য তিনি বিশ্ব খাদ্য সংস্থা থেকে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। আমির হোসেন আমু বলেন, আমরা মনে করি, তার (শেখ হাসিনার) নেতৃত্বে সবকিছু মোকাবেলা করেই সফলকাম হতে পারব।

প্রধানমন্ত্রী আজ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করছেন। যার জন্য শুধু বিশ্বদরবারে সমাদৃতই নন, নিজেকে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পরিগণিত করতে সফল হয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com