বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন
বিনোদন ডেস্ক ::
করোনা মহামারির কারণে গত বছরের দুই ঈদের মতো এই রোজার ঈদেও বন্ধ থাকছে সারাদেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এতে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে দেশের পর্যটন খাত। ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের কারণে দেশের পর্যটনশিল্পে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাকরিচ্যুত হয়েছেন বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এরপরও পর্যটনশিল্প ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের প্রণোদনা ও ঋণ পাননি। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমন পরিস্থিতিতে এ খাতের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেননি।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) প্রেসিডেন্ট মো. রাফেউজ্জামান বলেন, দুই ঈদই তাদের আয়ের মূল সময়। গত বছর তা হয়নি। দুই বছর বৈশাখেও ছিল বন্ধ। ফলে তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান, মার্কেট, গণপরিবহন সরকারি সিদ্ধান্তে খোলা থাকলেও এই খাতটির সব ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। ঈদে বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া না হলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সরকারের কাছে আবেদন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদে যেন বিনোদন কেন্দ্রগুলো খোলার ব্যবস্থা করে।
পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঈদে খুলে দেওয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনের কাছে সম্প্রতি লিখিত আবেদনও করেছে টোয়াব। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। টোয়াবের আবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর থেকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প। এ কারণে শুধু ট্যুর অপারেটররা নয় বরং এ শিল্প-সংশ্নিষ্ট সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০২০ সালে দেশের পর্যটনশিল্পে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সরকার আবার পর্যটনকেন্দ্র ও স্পট বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। এই কঠিন সময়ে পর্যটন খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে ডমেস্টিক ট্যুরিজমের কোনো বিকল্প নেই। এখন যেহেতু স্বাস্থ্যববিধি মেনে সব কিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে, পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঈদে খুলে দেওয়ার দাবি করেছেন তারা। এতে অপার সম্ভাবনাময় এই শিল্প প্রায় ধ্বংসের পথ থেকে রক্ষা পাবে।
জার্নিপ্লাসের প্রধান নির্বাহী ও প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান বলেন, দেশের পর্যটন খাতের কোনো অভিভাবক নেই। এ খাত নিয়ে ট্যুরিজম বোর্ড, মন্ত্রণালয়সহ সংশ্নিষ্ট কেউ চিন্তা করে না। পর্যটন ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ পাচ্ছেন না। ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পর্যটন খাতকে এখনও শিল্প ঘোষণা করা হয়নি। এসএমইর সঙ্গেও যুক্ত করা হয়নি। তাই এ খাতে ঋণ দেওয়া যাবে না।
চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক এমিউজমেন্ট পার্কের ডেপুটি ম্যানেজার (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ মাসে ব্যয় ৪৫ লাখ টাকা। ঈদে বোনাসসহ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ লাখ টাকার কাছাকাছি। এখন পার্ক বন্ধ থাকায় কোনো আয় নেই। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৬ মে চলমান বিধিনিষেধের পর পর্যটন কেন্দ্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে খোলার কোনো সুযোগ নেই। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, ঈদের আগে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা পাইনি। তাই ঈদের আগে খোলার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র ঈদের পরে বিশেষ অফারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। এমন ঘোষণা না দেওয়ার জন্য তাদের নিষেধ করা হয়েছে। এখানে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি অগ্রাধিকার বিবেচনা। আমরা কাউকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।
Leave a Reply