শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্বপ্রতিবেদক: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০২৪ ইং বছর জুড়ে বেশ কয়েকটি হত্যা
কান্ড ও রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ছিল আলোচিত। এর মধ্যে উপজেলার টংগর গ্রামের গৃহবধূ পিয়ারা বেগম (৫০) কে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার রহস্য আজও উম্মোচিত হয়নি। আজ ও এই লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ঘাতকদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গত বছরের শুরুতে ওই হতভাগ্য নারীকে নৃংশসভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, শেষ দিকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালককে গলা কেটে খুন ও আগষ্টে যুবকের পায়ের রগ কেটে হত্যাকাণ্ড খুবই চাঞ্চল্যকর ছিল। আলোচনায় ছিল দুটি রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা। এছাড়াও শিশুসহ ৭টি হত্যাকাণ্ড ও ৭টি আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক দেখা দেয়।
জানাযায়, গত ২৪ ইং সালের ১৭ জানুয়ারী ভোরের দিকে পৌরশহরের ইকড়ছই আলিয়া মাদরাসার পিছনের চারা ক্ষেত থেকে আগুনে পোড়া অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি কেরোসিনের বোতল উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। পরে পুলিশী তদন্তে ওই নারীর পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর নাম পিয়ারা বেগম (৫০)। তিনি উপজেলার টংগর গ্রামের চন্দন মিয়ার স্ত্রী। এব্যাপারে জগন্নাথপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ২৬ জানুয়ারী রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ওয়াজ মাহফিল কে কেন্দ্রে করে সংঘর্ষে আহত ছমির আলী (৬৫) ২৮ জানুয়ারী সিলেট ওসমানি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়॥ ১১ অক্টোবর ইনাতগঞ্জ আশ্রায়ন প্রকল্পের বাসিন্দা আল আমিনের শিশুপুত্র সানজিদ আলমের ( ৯) এর মরদেহ এক মাছের ফিসারি থেকে উদ্ধার করা হয়। ৭ অক্টোবর ওই শিশুকে অপহরণের পর খুন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ হত্যায় জড়িত তিন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে। ৫ আগষ্ট পৌরসভার ইনাতনগরের মল্লিক আকমল হোসেনের ছেলে মল্লিক আফজল হোসেন কে (২৯) পূর্ব বিরোধের জের ধর ধারালো অস্ত্র দিয়ে পায়ের রগ কেটে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এঘটনায় তার মা বাদি হয়ে ১৮জনের নামে মামলা করেন। ৭ নভেম্বর উপজেলা চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের বাউধরন গ্রামের মৃত শাফিকুর রহমানের ছেলে কিশোর রায়হান মিয়া (১৬) হামলার ঘটনায় আহতাবস্থায় মারা যায়। এঘটনায় নিহতের মা রুবি বেগম ৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার মূলহোতাসহ দুইজন কে গ্রেপ্তার করে। ১২ নভেম্বর পাইলগাঁও ইউনিয়নের বাগময়না গ্রামে মসজিদের ভবন নির্মাণ নিয়ে সুজাত মিয়া ও আবুল কয়েছের পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সুজাত মিয়া (৮০) নিহত হন। আহত হন আরো ৫০ জন। এঘটনায় ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। ১৭ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে সুজিত দাস (৩০) নামের এক অটোরিকশা চালককে ধারালো ছুরি দিয়ে গলাকেটে
নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ রানীগঞ্জ সেতুর ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে দিয়ে সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। এখবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মূর্হূতেই শত শত মানুষ ঘটনাস্থালে এসে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। নিহত ওই চালক উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের গোপরাপুর গ্রামের সোহাগ দাসের ছেলে। আলোচিত এ খুনের ঘটনায় পুলিশ র্যাবের সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূলহোতা উপজেলার সালদিকা গ্রামের আলী হায়দার (৩২)সহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় অটোরিকশা ও হত্যায় ব্যবহৃত একটি ছুরি। ১৯ ডিসেম্বর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে অনলাইনে জুয়া খেলায় বারণ করায় স্বামীর চেয়ারের আঘাতে স্ত্রী নাজিয়া বেগম (২৬ৃ) নিহত হন। ঘটনার পর স্বামী আমজাদ হোসেন পালিয়ে গেলেও পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে।
এদিকে ১১ আগষ্ট জগন্নাথপুরের পাইলগাঁও ইউনিয়নের হাড়গ্রামে ঘরের তীরের সঙ্গে দলীয় ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় রাজমিস্ত্রী আলামিন মিয়া (২৪) মরদেহ দেখতে পান স্বজনরা। এসময় তার কব্জিতে কাঁটা দাগ ও ঘরের বিভিন্নস্থানে রক্তের চিহৃ পাওয়া গেছে। এ মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য সৃষ্টি হয়। অপরদিকে ২২ জুন উপজেলার সমধল গ্রামে রিংকর বিশ্বাস (১৬) নামের এক কিশোর গাছ থেকে পড়ে মারা যায় বলে শুনা গেলেও এ মৃত্যু ঘিরে রহস্য দেখা দেয়। মৃত্যুর ৬ দিন পর আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এছাড়াও চলতি বছরে ৭টি আত্মহত্যা ঘটনায় ঘটে।
জগন্নাথপুর থানার ওসি রুহুল আমীন
যুগান্তর কে বলেন, আলোচিত হত্যাকান্ডে জড়িত ঘাতকদের আমরা গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরন করেছি। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।জগন্নাথপুরের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্হিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
Leave a Reply