শনিবার, ১৪ Jun ২০২৫, ১১:১৪ অপরাহ্ন

ভারতে বিমান দুর্ঘটনায় ২৯৪ জন নিহত

ভারতে বিমান দুর্ঘটনায় ২৯৪ জন নিহত

জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক::

ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ২৪১ জন আরোহীসহ ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। বিমানটি ২৪২ জন আরোহী নিয়ে গুজরাটের আহমেদাবাদে বিজে মেডিকেল কলেজের একটি ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ে। এতে ওই মেডিকেল কলেজের অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থীও প্রাণ হারান। তবে সৌভাগ্যক্রমে একজন আরোহী প্রাণে বেঁচে যান। তিনি বিমানের জরুরি বহির্গমন দরজার পাশের ১১ নম্বর আসনে বসা ছিলেন। এ কারণেই হয়তো তিনি বেঁচে গেছেন। এয়ার ইনডিয়ার এআই ১৭১ নম্বরের বিমানটি বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। এটি ব্রিটেনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল। উড্ডয়নের পরপরই গুজরাটের মেঘানিনগরে লোকালয়ে বিমানটি আছড়ে পড়ে। এরপরই তাতে আগুন ধরে যায়। এ দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। এদিকে মৃতদের পরিবারের জন্য ১ কোটি টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে টাটা গ্রুপ। খবর এনএনআই, বিবিসি, স্কাই নিউজ, রয়টার্স, এএফপি, পিটিআই, আনন্দবাজার পত্রিকার।

গুজরাটের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বিধি চৌধুরী রয়টার্সকে বলেছেন, দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে থাকা কিছু শিক্ষার্থীও রয়েছেন। আহমেদাবাদ পুলিশের প্রধান জি এস মালিক জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে ২০০’রও বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে বিমানের যাত্রী ছাড়াও ওই মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের লাশ রয়েছে। এছাড়া নিহতদের মধ্যে গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও রয়েছেন। দুর্ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিমানের লেজের অংশটি নিচের দিকে নামতে নামতে হঠাৎ মাটিতে ভেঙে পড়ে। এছাড়া স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়, বিমানটি ট্যাক্সিওয়ে থেকে রানওয়েতে আসে। উড়তে শুরু করার পর হঠাৎই বিমানটি বাঁদিকে বাঁকতে শুরু করে। এরপরই সেটির পেছনের দিকটি নিচের দিকে নেমে গিয়ে বিমানবন্দর চত্বরের ভেতরে ‘জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার’ নামের বহুতলের কাছে একটি হোস্টেলের ওপর ভেঙে পড়ে।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এআই ১৭১ ফ্লাইটের আরোহী ২৪২ জনের মধ্যে ২৩০ জন যাত্রী ছিলেন। বাকি ১২ জন কর্মী। যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়। তাছাড়া ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডার নাগরিক এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ছিলেন।

এদিকে বিমানের পাইলটদের তথ্য প্রকাশ করেছে ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন বা ডিজিসিএ। ডিজিসিএকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল একজন এলটিসি ছিলেন। তার ৮২০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। কো-পাইলটের ১১০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। এলটিসির অর্থ হলো লাইন ট্রেনিং ক্যাপ্টেন অর্থাৎ তিনি অন্য পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিতেন।

এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, আহমেদাবাদের এ দুর্ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করে দিয়েছে, দুঃখিত করেছে। এটা কতটা হৃদয়বিদারক, তা কথায় বোঝানো যাবে না। যতজন মানুষ এ ঘটনায় প্রভাবিত, তাদের প্রত্যেকের কথাই আমার ভাবনাজুড়ে আছে এ দুঃসময়ে। যেসব মন্ত্রী ও কর্মকর্তা বিপদে পড়া মানুষদের সহায়তা করছেন, তাদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখছি।

অন্যদিকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দ্র প্যাটেল শোক প্রকাশ করে এক্সে লিখেছেন, আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আমি মর্মাহত। দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আহত যাত্রীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনাকে ‘অত্যন্ত মর্মান্তিক’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তিনি সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বৃহস্পতিবার বলেন, উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য আমাদের আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি। যারা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

এ বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাঠানো এক শোকবার্তায় লিখেছেন, আহমেদাবাদে যাত্রীবাহী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান দুর্ঘটনার মর্মান্তিক সংবাদে আমি গভীরভাবে শোকাহত। এই মর্মান্তিক ঘটনায় যেসব পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। তিনি বলেন, এ দুঃসময়ে আমাদের চিন্তা ও প্রার্থনায় দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও তাদের প্রিয়জনরা রয়েছেন। আমরা ভারতের জনগণ এবং সরকারের পাশে আছি। প্রয়োজনে সব ধরনের সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছি। এছাড়া আরও শোক জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লস, প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ অন্য বিশ্বনেতারা।

বিমানটি বিজে মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক-ইন্টার্নদের হোস্টেলে ভেঙে পড়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিমান ভেঙে পড়ায় ওই হোস্টেলের পাঁচ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ভারতের চিকিৎসকদের সংগঠন ফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (ফাইমা) জানিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি যে মেডিকেল ছাত্রাবাসের ওপর বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখানকার ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংগঠনটি জানায়, পাঁচজন শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া, অন্তত দুজনকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা আইসিইউতে রাখা হয়েছে। কয়েকজনের চিকিৎসকের স্বজনও নিখোঁজ বলে জানা গেছে।

দ্রুত লাশ শনাক্তে ডিএনএ নমুনা চেয়েছে প্রশাসন : দুর্ঘটনার পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিল শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স। রয়টার্স জানিয়েছে, আহমেদাবাদের হাসপাতালে অন্তত ২০৪টি লাশ উদ্ধার করে পৌঁছানো হয়েছে। অনেক দেহই ঝলসে গিয়েছে। ফলে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দ্রুত লাশ শনাক্ত করার জন্য যাত্রীদের পরিবারের কাছে ডিএনএ নমুনা চেয়েছে গুজরাট প্রশাসন। আহমেদাবাদের বিজে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই নমুনা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গুজরাটের স্বাস্থ্য দপ্তরের সহকারী মুখ্যসচিব ধনঞ্জয় দ্বিবেদী এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। ধনঞ্জয় বলেন, এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ বিমানে ২৩০ যাত্রী ছিলেন। বিমানকর্মী ছিলেন আরও ১২ জন। দুপুর ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ওই বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। যেখানে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, সেখানে আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালের শিক্ষার্থী এবং কর্মীরা থাকতেন। সেখানেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ৫০ জনের বেশি আহতকে সিভিল হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। ডিএনএ নমুনার কথা জানিয়ে এর পরেই ধনঞ্জয় বলেন, যাদের আত্মীয়, নিকটজনরা দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানে ছিলেন, তাদের অনুরোধ করা হচ্ছে, বিজে মেডিকেল কলেজে এসে ডিএনএ নমুনা দিয়ে যান। যাতে লাশগুলো দ্রুত শনাক্ত করা যায়। এছাড়া, বিমানে যারা ছিলেন, তাদের সম্বন্ধে কারও কিছু জানা থাকলে দুটি হেল্পলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। সেখানে যোগাযোগ করা যাবে। যাত্রীদের আত্মীয়দের অপেক্ষা করার জন্য মেডিকেল কলেজের একটি ভবন খুলে দেওয়া হয়েছে।

সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী নিহত : আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনায় গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। রূপাণীর এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে আমেরিকায় থাকেন। আর মেয়ে লন্ডনে। কয়েক দিন আগেই সেখানে গিয়েছিলেন রূপাণীর স্ত্রী। বৃহস্পতিবার রূপাণীর যাওয়ার কথা ছিল। স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে লন্ডন থেকে ফেরার কথা ছিল ১ জুলাইয়ে। আহমেদাবাদের বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরুর পরেই ভেঙে পড়ে লন্ডনগামী বিমানটি। ওই বিমানেই ছিলেন রূপাণী। বিমান দুর্ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে রূপাণীর ঘনিষ্ঠ প্রশান্ত বালা জানিয়েছিলেন, তিনি রূপাণীকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন। তার পর কী হয়েছে, তার জানা নেই। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে রূপাণীর মৃত্যুর খবর ঘনিষ্ঠদের জানানো হয়।

আমরা ১ কোটি করে দেবে টাটা গ্রুপ : এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে এক কোটি টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এর স্বত্বাধিকারী টাটা প্রুপ। বিশেষ বার্তায় টাটা গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১-এ দুর্ঘটনার জেরে আমরা শোকাহত। এই সময় কোনো শব্দই যথেষ্ট নয় এই দুঃখকে প্রকাশ করার জন্য। যারা মারা গিয়েছেন তাদের পরিবারের পাশে রয়েছি। আহতদের জন্য প্রার্থনা করছি। টাটা গ্রুপ মৃতদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে দেবে। যারা আহত হয়েছেন তাদের সব চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করব। সেই সঙ্গেই বিজে মেডিকেলের হোস্টেল তৈরিতে আমরা সহায়তা করব।

১৯৩২ সালে জেআরডি টাটার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ভারতের প্রথম বেসরকারি বিমান সংস্থা ‘টাটা এয়ার সার্ভিসেস’, যা পরে হয়ে ওঠে এয়ার ইন্ডিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫৩ সালে ভারত সরকার এয়ারলাইনসটি জাতীয়করণ করে এবং এটি হয়ে ওঠে দেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা। দীর্ঘ সাত দশক সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকার পর এয়ার ইন্ডিয়াকে আবারও টাটা গ্রুপের হাতেই তুলে দেওয়া হয়। ২০২২ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রায় ১৮ হাজার কোটি রুপিতে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা আবার টাটা গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করে।

তদন্তে আসছে ব্রিটিশ ও মার্কিন দল : বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে সহায়তা করতে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি তদন্ত দল। ভারতের জাতীয় পরিবহণ নিরাপত্তা বোর্ড এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া, একটি ব্রিটিশ দলকেও তদন্তে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত সংস্থা।

ফের খুলেছে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর : আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে রওয়ানা করা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আবার চালু করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৫ মিনিট থেকে এর কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এক্সের এক পোস্টে তারা জানায়, আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে সব অপারেশন পুনরায় চালু হয়েছে। সঙ্গে যাত্রীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, সবাই যেন নিজ নিজ এয়ারলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং বিমানবন্দরের অফিশিয়াল আপডেটের দিকে নজর রাখেন।

এভাবে বোয়িং ৭৮৭ ভেঙে পড়ার ঘটনা প্রথম : আহমেদাবাদের দুর্ঘটনার আগে কখনো বোয়িং ৭৮৭ বিমান এভাবে ভেঙে পড়েনি। প্রায় ১৪ বছর আগে এই মডেলটি বাজারে এনেছিল বোয়িং সংস্থা এবং ৬ সপ্তাহ আগে ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানে ১০০ কোটি যাত্রী বহন করার মাইলফলক অর্জন করে বোয়িং কোম্পানি। সেই উপলক্ষ্যে বোয়িং জানিয়েছিল যে, তাদের তৈরি ১১৭৫টি বোয়িং ৭৮৭ বিমান ৫০ লাখ উড়ান অপারেট করেছে, বিমানগুলো আকাশে উড়েছে তিন কোটি ঘণ্টা।

এই দুর্ঘটনা বোয়িং সংস্থাকে এতবড় ধাক্কা দিয়েছে এমন একটা সময়ে, যখন সংস্থাটি ৭৩৭ বিমান একের পর এক ভেঙে পড়াসহ নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আহমেদাবাদের ঘটনার পরে বোয়িং এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ঘটনার ব্যাপারে প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছে এবং এ বিষয়ে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে।

‘মে ডে কল’ দিয়ে নীরব হয়ে যান পাইলট : ভারতের আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে বিমানটি রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপরই সেটি বিধ্বস্ত হয়।

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিজিসিএ) জানিয়েছে, দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে বিমানটি রানওয়ে ছাড়ার পরপরই এটিসিকে ‘মে ডে কল’ করেন পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল। কিন্তু পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও আর জবাব পাওয়া যায়নি। ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্যে জানা যায়, যে বিমানটি ভেঙে পড়ছে, সেটি ভিটি-এএনবি। বিমানটি এ দিনই দিল্লি থেকে আহমেদাবাদে আসে। এরপর সেটি লন্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল। কিন্তু এর আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

Mayday Call হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিপদের সিগন্যাল। মূলত প্রাথমিকভাবে এটা বিমানের ক্ষেত্রে এবং নৌপথে ব্যবহার করা হয়। বড় কোনো বিপদে পড়লে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এই মে ডে কল করা হয়। এটা আসলে একটি ফরাসি শব্দবন্ধ। maider-এর মানে হলো, আমাকে সাহায্য করো।

এটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ১৯২০ সালে। এটি বর্তমানে একে স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল বলে ধরা হয়। সাধারণত তিনবার এ কল করা হয়। মে ডে, মে ডে, মে ডে। মূলত যাতে ভালোভাবে এটিসি বুঝতে পারে সেকারণেই এই মে ডে কল করা হয়।

বিমানের ক্ষেত্রে পাইলট ও জাহাজের ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন এই মে ডে কল ইস্যু করেন। মূলত তার হাতেই এই বিমানের পরিচালনার ভার থাকে। তিনি যদি বুঝতে পারেন যে বড় কোনো দুর্ঘটনার মুখে পড়তে চলেছে বিমান, তখন এ ধরনের কল করা হয়। সাধারণত নানা ধরনের বিপদের মুখে পড়ে এই ধরনের কল করা হয়ে থাকে। ইঞ্জিনের যদি কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে, যদি বিমানে আকাশে থাকার সময় আগুন ধরে যায়, যদি বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বা বিমানের মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ায় মেডিকেল ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি তৈরি হলে এ ধরনের কল করা হয়। মূলত সাহায্য চেয়ে এ ধরনের কল করা হয়ে থাকে। রেডিওর মারফত এ কল করা হয় বিমান থেকে এটিসির কাছে। কিছু ক্ষেত্রে কাছাকাছি যে বিমানটি রয়েছে, সেই বিমানও প্রয়োজনে এটিসির কাছে এ ধরনের কল করে।

এই মে ডে কল পাওয়ার পরই সতর্ক হয়ে যায় এটিসি। বিমান তার লোকেশন জানিয়ে দেয়। আপৎকালীন সব ব্যবস্থা শুরু করে দেয় এটিসি।

সুত্র;: যুগান্তর

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com