সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক::
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আগামীকাল সন্ধ্যায় সংলাপে বসছেন।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেন।
সংবিধানসম্মত সব বিষয়ে আলোচনার জন্য তার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত উল্লেখ করে ১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় গণভবনে সংলাপের আমন্ত্রণ জানান তিনি। চিঠিটি পৌঁছে দেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ড. আবদুল সোবহান গোলাপ।
এতে সরকারি দলের নেতৃত্ব দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন ড. কামাল হোসেন। এ আলোচনায় যে কোনোভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা চাইবে ঐক্যফ্রন্ট।
সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সাত দফা ও ১১ লক্ষ্যের ভিত্তিতেই সংলাপ শুরু হবে। তবে সাত দফার বাইরে গিয়ে সরকার যদি কোনো প্রস্তাব দেয় সেটাও বিবেচনা করবেন তারা।
প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের আমন্ত্রণ পাওয়ার পর দফায় দফায় বৈঠক করে ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নেবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রাতেই ধানমণ্ডির প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে নামের তালিকা পৌঁছে দেয়া হয়। গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক এ তালিকা পৌঁছে দেন। সাত দফা ও ১১ লক্ষ্যের ভিত্তিতেই সংলাপ শুরু হবে। তবে এর বাইরে অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা হবে। সংবিধানের ভেতরে থেকেই কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সে বিষয়ে জোর দেয়া হবে।
কোনো দাবিতে অনড় না থেকে খোলা মনে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। সংলাপের টেবিলে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য ৭ দফা বা অন্য কোনো বিকল্প ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে বলেও মনে করছেন ফ্রন্টের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আলোচনা হবে খোলা মন নিয়ে। সংলাপের উত্তাপে সংকটের বরফ গলবেই। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে অনেক সংকটই সমাধান হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তালিকা অনুযায়ী সংলাপে প্রধান শরিক দল বিএনপির পক্ষে পাঁচজন অংশ নেবেন। তারা হলেন- দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার এবং মির্জা আব্বাস, জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির পক্ষে সংলাপে প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনজন।
তারা হলেন- দলটির সভাপতি আসম আবদুর রব, সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। গণফোরামের নেতাদের মধ্যে থাকবেন দলটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু।
নাগরিক ঐক্যের পক্ষে থাকবেন দলটির উপদেষ্টা এসএম আকরাম ও আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও আ ব ম মোস্তফা আমিন। এছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও অংশ নেবেন সংলাপে।
এদিকে দুই পক্ষ আনুষ্ঠানিক সংলাপে বসায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে বলে মনে করছেন সবাই। দীর্ঘদিনের বৈরিতা ভুলে দুই পক্ষ এক টেবিলে বসার মধ্য দিয়ে সবকিছু সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
সবার প্রত্যাশা এর মধ্য দিয়ে ইতিবাচক রাজনীতি শুরু হবে। তবে দুই পক্ষ কতটা ছাড় দেয় সেদিকেই দৃষ্টি সবার। অনড় অবস্থানে থেকে দুই পক্ষ কোনো ছাড় না দিলে সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না কলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই দুই পক্ষকে ছাড়ের মানসিকতা নিয়ে সংলাপে বসতে হবে।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে গণস্বান্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা মনে করি সংবিধানের ভেতরে থেকেই সমাধান সম্ভব।’ তিনি বলেন, আমরা সাত দফা দাবি জানিয়েছি।
এর মধ্যে প্রথম দফা মেনে নিলেই অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। বাকি সমস্যা সমাধান আরও সহজ। ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি মনে করি সব দলের অংশগ্রহণে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী উদারতার পরিচয় দিয়ে খালেদা জিয়ারও মুক্তি দিতে পারেন।
সংসদও ভেঙে দিতে পারেন। সবাইকে তার সরকারেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসলে, সামনাসামনি কথা হলে বরফ গলবে। তফসিল ঘোষণার আগেই সমস্যার অনেকাংশেই সমাধান হয়ে যাবে।’
সূত্র জানায়, সংলাপের টকিং পয়েন্টও চূড়ান্ত করছে ঐক্যফ্রন্ট। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মূলত সাত দফার ভিত্তিতেই আলোচনার সূত্রপাত করবে। ড. কামাল হোসেন দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য দেবেন।
সাত দফার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব কী তা জানার পর ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নেতারা একে একে বক্তব্য রাখবেন। সংবিধানের ভেতর বা বাইরে কী আছে সেদিকে আলোচনায় না গিয়ে কীভাবে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় সেদিকেই গুরুত্ব দেয়া হবে।
কারণ সরকার, বিরোধী দলসহ দেশের সবাই চায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের উপায় বের করা কেন সম্ভব হবে না। সরকার সংবিধানের দোহাই দিলে পাল্টা যুক্তিও তুলে ধরবে ঐক্যফ্রন্ট।
সংবিধান মানুষের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য। তাহলে দেশ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন কেন করা যাবে না। সংসদ অধিবেশন না থাকায় সংবিধান সংশোধনের সুযোগ নেই সরকারের পক্ষ থেকে এমন কথা বললে সেক্ষেত্রে পাল্টা যুক্তি দেবেন তারা।
এক্ষেত্রে ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের সরকারের বিষয়টিও তুলে ধরা হতে পারে। দেশের প্রয়োজনে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন না করেই তখন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে দিয়ে অস্থায়ী সরকারের গঠন করে নির্বাচন পরিচালনা করা হয়, যা পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তা রেটিফাই করা হয়।
সূত্র জানায়, সরকার শেষ পর্যন্ত সংবিধানের দোহাই দিয়ে অনড় থাকলে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের নতুন ফর্মুলাও দেয়া হতে পারে। সেই বিষয়টি নিয়ে তারা ইতিমধ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন।
সংবিধানের ভেতর থেকে সবাইকে নিয়ে কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব সেই ব্যাপারে একটি রূপরেখাও চূড়ান্ত করেছে ঐক্যফ্রন্ট। সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই রূপরেখা তুলে দেয়া হতে পারে।
সূত্র জানায়, সরকারের এমন মনোভাব বুঝতে পেরে ঐক্যফ্রন্টও পাল্টা কৌশল নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার শেষ পর্যন্ত সাতদফা মেনে না নিলে সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারের কোনো ফর্মুলা আছে কিনা তা জানতে চাইতে পারেন।
সেক্ষেত্রে সংবিধানের ভেতর থেকেও সংকট নিরসন সম্ভব বলে মনে করেন তারা। সংসদ না ভেঙে সব দলের সমন্বয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা সম্ভব। টেকনোক্র্যাট কোটায় তাদের নিয়োগ দেয়া হবে।
গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বিরোধী দলকে দেয়ার প্রস্তাবও দেয়া হতে পারে। সূত্র জানায়, বিএনপি ও ফ্রন্টের নেতারা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি-সাত দফার এ দুই দফায় সরকার নমনীয় হবে না।
যার ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রী তার চিঠিতেই দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, সংবিধান সম্মত সব বিষয়ে তিনি আলোচনা করতে চান। কিন্তু বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেয়া বা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কোনো বিধান নেই।
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়েও ক্ষমতাসীনরা ততোটা আন্তরিকতা দেখাবে বলে মনে করেন না দলটির নেতারা। বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার বলে এড়িয়ে যেতে চাইবে।
সূত্র জানায়, বাকি দফাগুলো পুরোপুরি না মানলেও আংশিকভাবে মেনে নিতে পারে সরকার। নেতাকর্মীদের নামে মামলা না দেয়া, নতুন করে কাউকে গ্রেফতার নয়, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার মতো দাবি সরকার মেনে নিতে পারে।
কিন্তু তাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে না। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেতে চায় যুক্তফ্রন্ট। সেক্ষেত্রে সাত দফার বাইরে গিয়ে সরকার যদি কোনো প্রস্তাব দেয় সেটাও বিবেচনা করবেন তারা।
এদিকে দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের আমন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে রোববার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন। পরের দিন মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় বিষয়টি উঠলে প্রধানমন্ত্রী এতে ইতিবাচক মনোভাব দেখান।
বিকালে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসার ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাওয়ার পর সংলাপের এজেন্ডাসহ সার্বিক বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বিকালে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা করণীয় চূড়ান্তে বৈঠকে বসেন।
এ সময় আগামী ৬ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় এবং ৯ নভেম্বর রাজশাহীতে দুটি সমাবেশন করারও সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বৈঠকে মূলত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণ এবং এর প্রস্তুতি নিয়েই বেশি আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সংলাপে বসার সম্মতিকে স্বাগত জানিয়ে সিদ্ধান্ত হয় ড. কামাল হোসেন সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন। এ সময় ১৫ সদস্যের নাম ঠিক করা হয়। সংলাপের পাশাপাশি দাবি আদায়ের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
চিঠি পাওয়ার পর বাসা থেকে বের হয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় মতিঝিলের নিজের চেম্বারে প্রথমে দলের (গণফোরাম) সিনিয়র নেতাদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন ড. কামাল হোসেন। এরপর বেলা ৩টায় একই জায়গায় তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব বলেন, ‘কোনো সংলাপ ব্যর্থ হয় না। একটি সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের সব দলের প্রতিনিধি থাকবেন।
আজ প্রধানমন্ত্রী সংলাপের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে, হবে এবং চলবে।
আসম রব বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে, সব দল যেন অংশগ্রহণ করতে পারে, ভোটাররা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে এসব বিষয়ে নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করব। একই সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি নিয়েও আলোচনা করব’।
প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের চিঠিতে বলা আছে সংবিধান সম্মত যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রব বলেন, ‘সংবিধান জনগণের জন্য নাকি জনগণের জন্য সংবিধান?
দেশটা জনগণের জন্য নাকি জনগণের জন্য দেশ? সুতরাং জনগণ, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সব বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কথা বলতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর বিষয়ে জেএসডি সভাপতি বলেন, ‘আমরা মনে করি তার (খালেদা জিয়া) এ মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দুই-তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে পারেন এটা মানুষ বিশ্বাস করে না। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানান।’
প্রসঙ্গত, রোববার সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে লেখা ড. কামাল হোসেনের চিঠি পৌঁছে দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
ড. কামাল হোসেনের চিঠি পাওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় প্রধানমন্ত্রী চিঠি পৌঁছে দেন তার ব্যক্তিগত সহকারী, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
চিঠি হস্তান্তরের পর গোলাপ সাংবাদিকদের বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্র ড. কামাল হোসেনের কাছে দিয়েছি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উনাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্যাডে তার স্বাক্ষরিত ড. কামাল হোসেন বরাবর পাঠানো সংলাপ চিঠির শুরুতে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনার ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের পত্রের জন্য ধন্যবাদ।
অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত। তাই আলোচনার জন্য আপনি যে সময় চেয়েছেন, সে পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ০১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ সন্ধ্যা ০৭.০০টায়, আপনাদের আমি গণভবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
চিঠি পাওয়ার পর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা শুধু ৭ দফা নয়, অন্যান্য বিষয় ও বর্তমান যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো নিয়ে দেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব।
এজন্য উনি (প্রধানমন্ত্রী) যদি আমাদের কোনো সহযোগিতা চান, অবশ্যই ড. কামাল হোসেন তা করবেন।
সংবিধানের মধ্যেই দেখিয়ে দেব, কিভাবে দাবি মানা সম্ভব : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘আমরা সংবিধানের মধ্যেই দেখিয়ে দেব, কিভাবে আমাদের দাবি মেনে নেয়া সম্ভব। আমাদের সুস্পষ্ট কথা হচ্ছে, সাত দফাই আমাদের দাবি।’ মঙ্গলবার সকালে তোপখানায় বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যে যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচন ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের আহ্বানে সাড়া দেয়াকে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে বলে দাবি করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকারের আমন্ত্রণে সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যাবে। এ সময় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের এজেন্ডা নিয়ে সংলাপে আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেরিতে হলেও উনার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, উনি ডাকছেন, কথা বলতে চান, আমরা গিয়ে কথা বলব। উনারা বলেছেন, সংবিধানের বাইরে আমরা কোনো কথা বলতে চাই না। আমরা সংবিধানের মধ্যেই দেখিয়ে দেব কিভাবে আমাদের দাবি মেনে নেয়া সম্ভব। আমাদের সুস্পষ্ট কথা হচ্ছে, সাত দফাই আমাদের দাবি।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার- অভিযোগ করে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।
মান্না বলেন, ‘কোনো রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকবার দরকার নেই, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি আমাদের দাবি, ঐক্যফ্রন্টের দাবি, এটা সবার দাবি। কারণ, আমরা মনে করি, খালেদা জিয়ার ওপর যেটা করা হচ্ছে, সেটা নেহাতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এ দাবি থেকে সরে যাওয়ার কোনো প্রশ্ন আসে না।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা : ১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৩. বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িংফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন, সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারদের মুক্তি দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তাসহ সব কালো আইন বাতিল করতে হবে।
৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচনপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পুলিং বুথ ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনকালীন গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
Leave a Reply