মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জগন্নাথপুরে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার জগন্নাথপুরে কিশোরকন্ঠ মেধাবৃত্তি -২৪ সম্পন্ন জগন্নাথপুরে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জনশক্তি সমাবেশ জগন্নাথপুর প্রেসক্লাবের সদস্য সংগ্রহ শুরু জগন্নাথপুরে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা জগন্নাথপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত জগন্নাথপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা বার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প সুনামগঞ্জে পিপি, অ্যাডিশনাল ও এপিপি নিযুক্ত হলেন জগন্নাথপুরের তিন প্রথিতযশা আইনজীবী জগন্নাথপুরে আজ থেকে এক মাসব্যাপী এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু জগন্নাথপুর ও শান্তিগন্জ্ঞ বাসীর সেবা করতে চাই; বিশাল সম্বর্ধনায় বিএনপি নেতা কয়ছর আহমদ

জগন্নাথপুরে বাধঁ নিয়ে বাণিজ্য ও লুটপাট, একই পরিবারে ৫টি পিআইসি

জগন্নাথপুরে বাধঁ নিয়ে বাণিজ্য ও লুটপাট, একই পরিবারে ৫টি পিআইসি

স্টাফ রিপোর্টার: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে হাওর রক্ষা বেরীবাঁধ নিয়ে চলছে তুঘলকি কারবার। সরকার নির্ধারিত কাজের সময় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও অনেক বেরীবাধেঁর স্থানে মাটিই পড়েনি। অথচ এরই মধ্যে পিআইসিদের ২০% টাকা প্রায় ১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কাজ না করেই সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাট চলছে। হাওরের বেরীবাধঁ কে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট এরা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে আতাত করে মোটা অংকের টাকা ভাগিয়ে নিয়ে নাম মাত্র কাজ করে মোটা অংকের টাকা লুটপাট করছে। অভিযোগ রয়েছে, অবিশ^াস্য হলেও সত্য এক পরিবারকেই এবার ৫টি পিআইসির মাধ্যমে ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিচার হীনতার কারণে প্রতি বছরেই সরকারি টাকা লুটপাট করে দুর্নীতিবাজরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ঘুরে ফিরে প্রতি বছর একই লুটেরাদের বেরীবাধেঁর কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানা যায় এবার উপজেলার হাওর রক্ষায় ৩১কি.মি. বাধঁ নির্মাণে ৫ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা বরা দ্দ দেওয়া হয়। গঠন করা হয়েছে ৫০ টি পিআইসি (প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটি)। পিআইসি গঠনে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজীর বিরুদ্ধে মোটা অংকের বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে উপজেলার নলূয়া হাওরের পশ্চিম প্রান্তের একই পরিবারের ৫ভাইকে ৫টি পিআইসির মাধ্যমে ১কোটি ৪লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজটি ভাগিয়ে নেন হলদিপুর চিলাউড়া ইউনিয়নের বেতাউকা গ্রামের সিদ্দেক আলীর পুত্র ইউ.পি মেম্বার জুয়েল মিয়া। তার নামে ১টি তার ছোট ভাই কাশেম মিয়ার নামে ১টি ও তার আপন চাচাতো ৩ ভাইকে সভাপতি দেখিয়ে মোট ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ নিয়েছে। তাদের পিআইসি নম্বর গুলো হচ্ছে ১৩,১৪,১৫,১৬ ও ১৭। এই জুয়েল মেম্বার গত বছর ও স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রায় ১ কোটি টাকার পিআইসি ভাগিয়ে নিয়ে নাম মাত্র কাজ করে বিপুল অংকের টাকা লুটপাট করে। এবারও মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের পায়তারা চলছে।
শনিবার নলুয়া হাওর সরেজমিন পরিদর্শন কালে স্থানীয় অনেক কৃষকদের সাথে আলাপ হয়। এ সময় হাওরপাড়ের ভুরাখালী গ্রামের কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান জানান, নলূয়া হাওরের পশ্চিম প্রান্তের বেরীবাধের অনেক স্থানে এখনও মাটি পড়েনি। বেরীবাধঁ নিয়ে পাউবোর উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী গত বছরের মতো এবারও মোটা অংকের বাণিজ্যের মাধ্যমে একই ব্যক্তিকে একাধিক পিআইসি দিয়েছেন। হলদিপুর ইউপির জুয়েল মেম্বার কে এ বছর ও ৫টি পিআইসির মাধ্যমে ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সে ২০ লক্ষ টাকা নিয়েছে কিন্ত বেরীবাধেঁর অনেক স্থানে এখনও মাটি পড়েনি। বিগত বছরের মত এবারও সে বিপুল অংকের টাকা লুটপাটের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে নিচ্ছে । গত ২০১৭ ও ২০১৮ ইং বছরেও সে বাঁধের কাজ না করে মোঠা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে। ২০১৭ ইং সনে বাঁধ না করায় অকাল বন্যায় হাওরের পাকা বোরো ফসল তলিয়ে যায়। ঐ সমস্ত দূর্নীতিবাজদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবীতে আমরা কৃষক সমাজ আন্দোলন করি। পরে সে সরকারি দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে উর্দ্ধতন নেতা ও কর্তাদের ম্যানেজ করে পার পেয়ে যায়। এবারও লুটপাটের মহোৎসব চলছে।
হাওরপাড়ের চিলাউড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার ভয়াবহ দূর্নীতি চলছে। বহুবাঁধ রয়েছে যেখানে এখনও মাটি ফেলা হয় নি। আবার অনেক বাঁধে নামমাত্র মাটি ফেলে ভাগাভাগির মাধ্যমে টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। সরকার হাওর রক্ষায় বেরীবাধঁ নির্মাণে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তা কৃষকের উপকারে আসছে না। দুর্নীতিবাজরা লুটপাট করে খাচ্ছে।
নলুয়ারহাওর পাড়ের বেরী গ্রামের কৃষক ফখরুল ইসলাম বলেন, বাঁধের নামে শুরু হয়েছে মৌসুমী বাণিজ্য। প্রতি বছর চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরাই বাধেঁর টাকা ভাগিয়ে নিয়ে লুটপাট করে। অনেক জায়গায় এখনও বেরীবাঁধ না হওয়ায় আমরা কৃষকরা খুবই চিন্তার মধ্যে আছি।
জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের হরিনাকান্দি ও দাস নোয়াগাঁও গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে নলুয়ার হাওর পোল্ডার-১ এলাকায় ৮ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ১১৩৯ মিটার বেড়িবাধে নতুন মাটি না ফেলে পুরাতন বাধঁ কেটে হাওরকে ঝুকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। সরজমিনে কাজে ব্যাপক অনিয়ম দেখা যায়। এ সময় স্থানীয় কৃষক সুজন মিয়া, বারুত মিয়া, ধলু মিয়া, এবারত মিয়া, সজল দাস, আকল মিয়া, নিশিকান্ত দাস, প্রেমানন্দ দাস, মোকাব্বির মিয়া, রাজন মিয়া, মেঘাই দাস সহ স্থানীয় প্রতিবাদী কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, আগের স্থায়ী পুরনো বাধ কেটে মাটি তুলে হাওরকে ঝুকিঁর মধ্যে ফেলা হচ্ছে এবং মোঠা অংকের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম এর সাথে আলাপ হলে তিনি দৈনিক যুগান্তরকে বলেন, অনিয়মের ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা কাজে গাফলাতি করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবার অনিয়ম দুর্নীতি করলে ছাড় দেওয়া হবে না।
উপজেলার পশ্চিম প্রান্তে ফোল্ডার-১ ভুরাখালী গ্রাম সংলগ্ন ১৫শ মিটার বেরীবাধঁ সংস্কারে বর্তমান ইউপি মেম্বার হীরা মিয়াকে বাদ দিয়ে সাবেক মেম্বার আহমদ আলীকে সভাপতি করে ২৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে হীরা মিয়া যুগান্তরের কাছে অভিযোগ করেন, স্থানীয় পাউবো কর্তাদের দাবি মেঠাতে না পারায় আমাকে বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আহমদ আলীকে বাধেঁর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ ভুরাখালী গ্রাম সংলগ্ন বেরীবাধেঁর অনেক স্থানে এখনও মাটির কাজ হয়নি। ফলে হাওর গুলো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এদিকে পৌর কাউন্সিলর আবাব মিয়া অভিযোগ করেন, অনেক পিআইসিতে রহস্য জনক কারণে এবার স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের রাখা হয়নি। জগন্নাথপুর উপজেলার পাউবোর দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ সহকারি প্রকৌশলী হাসান গাজী এবার পিআইসি নিয়ে বাণিজ্য করেছেন। তিনি বলেন ফোল্ডার-১ নলূয়া হওরের পশ্চিম প্রান্তে অনেক বাধেঁ এখনও মাটি পড়েনি।
এব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলার পাউবোর দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ সহকারি প্রকৌশলী হাসান গাজীর সাথে আলাপ হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে যুগান্তরকে বলেন, আমি কোন পিআইসির কাছ থেকে টাকা নেইনি। সঠিক নিয়মেই পিআইসি গঠন করা হয়েছে। কোনো কোনো পিআইসি স্থানীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হয়েছে বলে তিনি জানান এবং বর্তমানে হাওরের বাধেঁর কাজ চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য উপজেলার নলুয়া ও মই হাওরসহ ছোট বড় ১৫ টি হাওরে এবার ৩১ কিলোমিটার হাওর রক্ষা বেরীবাঁধ নির্মানে ৫ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাধেঁর কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও এখনও বাধেঁর অনেক স্থানে মাটি ফেলা হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com